মহাবিশ্বের রহস্যের সমাধান যার সমীকরণে (দশ)– আলবার্ট আইনস্টাইন (Albert Einstein)

Abakprithibi photo (3)

গত তিন বছর ধরে আইনস্টাইন জ্যোতির্বিদদেরকে যে ইকুয়েশনের প্রমানের জন্যে, পূর্ণ সূর্যগ্রহনের ফোটো তোলার কথা বলে চলেছেন কিন্তু, এখন তিনি ভাবছেন আগের গননাই ভুল ছিল! আইনস্টাইন এতো দিন ধরে সেই বিফল সূর্য গ্রহণ পর্যবেক্ষণকেই দায়ী করে চলেছিলেন! – আইনস্টাইন আবার ফিরে গেলেন তাঁর সেই থট এক্সপেরিমেন্টের জগতে।

তাঁর ছোট্ট এপার্টমেন্টের এক ছোট্ট স্টাডি রুম ছিল। তাঁর সমস্ত চিন্তা, কল্পনা ও থট এক্সপেরিমেন্টের ল্যাবরেটরি ছিল সেই ছোট্ট রুম। আর সেই গভীর ও অত্যন্ত জটিল গাণিতিক গণনায়, কখনো কখনো হয়তো, সত্যিই তিনি ভাবতে পারতেন না – যে, সূর্যের কাছাকাছি স্পেস একটু মুচড়ে গেছে, বেঁকে গেছে – এতোই জটিল ছিল সেই জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটির সত্য।

আর তাঁর সেই কঠিন ভাবনা, ইকুয়েশন, ক্যালকুলেশনের জগতের পাশাপাশি আরেক জগত ছিল – সুরের জগত। তাঁর বহু কঠিন চিন্তার জগতের আরেক গভীর আশ্রয় ছিল সুর – মোজার্টের সুর। ভায়োলিনে সুর তুলতে তিনি খুব ভালোবাসতেন।

যতই কঠিন ছিল তাঁর বিজ্ঞানের জগত, অংকের সূত্র – ততোই তিনি মোজার্টের সুরে আশ্রয় নিতেন। তাঁর বিজ্ঞান চিন্তার প্রেরণা ছিল মোজার্টের সুরের ছন্দময় সৌন্দর্য, বিন্যাস।

এক জিনিয়াস আরেক জিনিয়াসের সৃষ্টিতে আশ্রয় পায়, প্রেরণা পায় – সম্পূর্ণ দুই শতাব্দীর দুই জিনিয়াসের মধ্যে এক অদ্ভুত রহস্যময় সংযোগ স্থাপন হয়।

আইনস্টাইন মোজার্টের খুবই ভক্ত ছিলেন, সেই কোন ছেলেবেলা থেকেই হাতে তুলে নিয়েছিলেন ভায়োলিন, মোজার্টের সুর তুলেছিলেন। তাঁর সৃষ্টিশীল জীবনের একদম কেন্দ্রে শুধু বিজ্ঞান নয়, মোজার্টের সুরও ছিল। তিনি বলতেন – মোজার্টের সুরের সরল বিন্যাস ও মহাবিশ্বের সমস্ত শক্তির বিন্যাসে এক অদ্ভুত সাদৃশ্য আছে, মিল আছে।

তাই, যখনই তিনি ফিজিক্সের জটিল তত্ত্ব নিয়ে ভাবতে ভাবতে কোথাও থমকে যেতেন, আটকে যেতেন, মোজার্টের আশ্রয় নিতেন, ভায়োলিন বাজাতেন – মোজার্টের সুর যেন তাঁর ফিজিক্সের সমস্ত সমস্যা সমাধানে সাহায্য করতো। আর জেনারেল থিয়োরি ওফ রিলেটিভিটি নিয়ে যখন তিনি কাজ করছিলেন, মোজার্টের সুর তাঁকে প্রেরণা দিয়েছিল।

সুরের প্রতি গভীর ভালোবাসা, মহাবিশ্ব নিয়ে ভাবনা, মহাবিশ্বের শক্তির উৎসের খোঁজ করা, তাঁর বিশ্ব প্রেমের জীবন দর্শন, জীবন ধারণ – এই সব নিয়ে তিনি যেন বিজ্ঞানীর চেয়েও বেশী কবি ছিলেন।

তাই বোধহয়, ১৯৩০ এ রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে আইনস্টাইন মুখোমুখি হয়েছিলেন – এক বিশ্ববিজ্ঞানী ও এক বিশ্বকবি – দুই জনেই  – মহা বিশ্বে মহাকাশে মহাকালো মাঝে – সেই অসীম আদিম শক্তি, আদিম সত্যের খোঁজ করে চলেছেন – একজন বিজ্ঞানের মধ্য দিয়ে, একজন কবিতার মধ্য দিয়ে – দুই জনেই – তাঁদের নিজেদের সময় হতে শত বর্ষ পরের কথা চিন্তা করেছেন – দুই জনেরই সৃষ্টিশীলতার মধ্যে কোথাও যেন এক সুক্ষ মিল ছিল – হয়তো, চিন্তার মিল, দর্শনের মিল, ভাবনার মিল, চেতনার মিল।

এদিকে, বেশ কিছু বছর ধরে জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটি নিয়ে কাজ করতে করতে, ১৯১৫ সালে, জার্মানির বিখ্যাত Prussian Academy of Sciences এ তাঁর থিয়োরি পেশ করার জন্যে নিমন্ত্রিত হলেন। কিন্তু, তাঁর গণনার কাজ তখনো সম্পূর্ণ হয় নি, আইনস্টাইন সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না – তাঁর থিয়োরির এক ছোট্ট সমস্যা তাঁকে ধাঁধায় রেখেছিল – তিনি এক সম্পূর্ণ সমাধান চাইছিলেন, যেখানে স্পেসের বেঁকে যাওয়া বর্ণনা করা যাবে। একটা সময়ে যখন তিনি তাঁর সমাধান ও গণনা নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারলেন – Prussian Academy of Sciences এর নিমন্ত্রণ গ্রহণ করলেন।

আইনস্টাইন Prussian Academy of Sciences এর সদস্যদের সামনে নিজের থিয়োরি ব্যাখ্যা করতে শুরু করলেন – দর্শক ও শ্রোতাদের মধ্যে শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ   mathematician David Hilbert    বসে ছিলেন। Hilbert   খুবই মনোযোগ দিয়ে আইনস্টাইনের ব্যাখ্যা শুনছিলেন – একটা সময়ে Hilbert   এর মনে হল, তিনি এই সমস্যার সমাধান করতে পারবেন – আইনস্টাইনের চেয়ে ভালোই করতে পারবেন।

লেকচারের শেষে, আইনস্টাইন ফিরে গেলেন বার্লিন, এদিকে Hilbert   ও তাঁর অফিসে ফিরে গিয়ে আইনস্টাইনের থিয়োরি নিয়ে ভাবতে বসলেন – জেনারেল থিয়োরি অফ রিলেটিভিটির ব্যখ্যা নিয়ে Hilbert  যেন মনে মনে আইনস্টাইনের সঙ্গে এক প্রতিযোগিতায় নামলেন। বিজ্ঞানের দুই শাখা – ম্যাথম্যাটিকস ও ফিজিক্সের দুই মহারথীর মধ্যে প্রতিযোগিতা।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Inspirational and tagged , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s