এক যাযাবর লক্ষ্যবিহীন (বড়গল্প – ছয় )

Albiঝকঝকে দিনে আলবিতে শীতের দুপুর গুলো খুবই সুন্দর। রোদ্র উজ্জ্বল দিনে ছুটির অলস দুপুরে কোন খোলা ক্যাফেটেরিয়াতে পিঠে রোদ নিয়ে, বসে বসে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে লেখা লেখি করতে করতে বা খবরের কাগজ পড়তে পড়তে এই শহরের নানা ধরণের লোকজনের চলাফেরা, টুরিস্টদের কৌতূহলী ঘোরাফেরা লক্ষ্য করতে খুব ভালো লাগে শার্লটের।

বহু প্রাচীন কাল থেকেই মানুষ এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় গেছে জীবিকার খোঁজে, আবিষ্কারের নেশায়, অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় – শার্লটও পৃথিবীর বহু জায়গায় কাজে কিংবা বেড়াতে গেছে, দেখেছে বহু সংস্কৃতির মানুষ।

কিন্তু, এই শহরকে ঘিরে শার্লটের বেড়ে ওঠার দিন গুলো বড়ই স্মৃতি মধুর – তাই, শার্লট কখনোই এই শহর ছেড়ে অন্য কোন শহরে পুরোপুরি চলে যাওয়ার কথা কল্পনা করে না। অবশ্য, গরমের ছুটিতে বেড়াতে যাওয়ার ব্যপার আলাদা। কিন্তু, এই শহরের সঙ্গে আত্মার টান, নাড়ির টান ছেড়ে অন্য কোথাও কাজ ও থাকা শার্লট ভাবতেই পারে না। ও ভাবে ও আশা রাখে – এই শহরের বুকেই ওর জীবনের সমস্ত স্বপ্ন সাকার হবে, জীবন বৃদ্ধি পাবে। প্রানের কাছাকাছি অতি জানাশোনা এই ছোট্ট এই শহরের পরিবেশে শার্লট নিজেকে বড়ই আরামদায়ক ও সুরক্ষিত বোধ করে।

ও ভাবে – দক্ষিণ ফ্রান্সের এই জায়গার মাটির মধ্যে যে শার্লটের জন্ম মরণ গাঁথা হয়ে গেছে। এক জায়গায় থেকে বেড়ে ওঠার মধ্যে, পরিচিত হওয়ার মধ্যে, কোন এক জায়গায় গভীরে শিকড় ছড়িয়ে দিয়ে মহীরুহের মত প্রকাশ হওয়ার মধ্যে যে এক গভীর আনন্দ আছে, তা শার্লট , তার পূর্ব পুরুষদের দেখে ও নিজের জীবনের প্রথমের কিছু অংশ এখানে কাটিয়ে, প্রান দিয়ে তা অনুভব করতে পারে । শার্লট এখানে থেকেই পৃথিবী ও তার মানুষকে দেখে নিতে চায়।

ও ভাবে – ও জানে ও কি চায় – সারা পৃথিবী ঘুরে যেদিন পা আর চলবে না, ক্লান্ত হয়ে যাব, সে দিন যেন আমার ফিরে আসার এক অতি নিজস্ব বড় শান্তির এক নীড় থাকে, আমার দেশ থাকে, আমার যেন এক টুকরো মাটি থাকে, যেখানে জীবন শেষে আমার দেহ মিশে যাবে, আমার যেন এক পরিচয় থাকে, আশেপাশে আমার জানা অনেকে থাকে, আমার প্রিয় জনেরা যেন আমাকে ঘিরে রাখে। শার্লটের এই অতি সিধেসাধা নির্ভেজাল জীবন দর্শনের জন্যেই হয়তো ঐ শিকড় ছেড়া বোবা মানুষটার জন্যে ওর মনের কোন এক কোণায় সহানুভূতি জাগ্রত হয়েছে। শার্লট ঠিক জানে না, কেন সে বার বার ঐ মানুষটার কেসে জড়িয়ে যাচ্ছে।

ছুটির হলুদ অলস দুপুর গুলোয় কফি শপে বসে কখনো কখনো ওর প্রিয় বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হয়ে যায়, ওরাও যোগ দেয় শার্লটের সঙ্গে। কয়েক দিন ধরে শার্লট নিজের কাজ কর্ম ও লেখালেখি নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিল। মিউনিখে এক কনফারেন্সে যাওয়ার জন্যে পেপার তৈরি করছিল। এখন ওর কয়েক দিন একটানা ছুটি – লং উইক এন্ড। তাই, অলস দুপুর গুলো বন্ধুদের সঙ্গে কাটিয়ে দেওয়ার ইচ্ছে শার্লটের। অথবা মিদি পাইরেনিসের পাহাড়ের কোনও স্কি ষ্টেশনে স্কি করতে যাওয়া যেতে পারে।

কিছুদিন হল গ্রিস থেকে শার্লটের বয়ফ্রেন্ড ফিলিপ, ছুটিতে আলবি এসেছে, হয়তো কোথাও বেড়াতে যাওয়া যেতে পারে বন্ধুদের সঙ্গে। এখনো কোন কিছু ঠিক হয়ে ওঠে নি।

ফিলিপ আর শার্লট , ক্যাফেটেরিয়াতে বসে নানান গল্প করতে করতে কফির কাপে চুমুক দিচ্ছে। ফিলিপ ফ্রেঞ্চ, তবে ইংরেজি ভালো জানে। ফিলিপ একটু চুপচাপ থাকতেই ভালোবাসে, তাই শার্লটই তাঁর এক তয়ফা কথা চালিয়ে যাচ্ছিল।

ফিলিপ ফ্রোনটেক্সের অফিসার, হঠাৎ করে দেখলে ফিলিপকে ফ্রেঞ্চ চলচিত্রের অভিনেতা বলে ভুল হতে পারে। ফ্রোনটেক্স ইউরোপের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর এক সংস্থা। কথায় কথায় শার্লট জেলে ধরা পড়া বোবা মানসিক ভারসাম্যহীন, অজ্ঞাত পরিচয় লোকটার কথা ফিলিপকে বলল, ফিলিপ এতক্ষণে মুখ খুলল – কেমন দেখতে লোকটা।

শার্লট লোকটার চেহারার যথাসাধ্য বর্ণনা করল।

                                                                                                                                                   চলবে

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Fiction and tagged . Bookmark the permalink.

1 Response to এক যাযাবর লক্ষ্যবিহীন (বড়গল্প – ছয় )

  1. পিংব্যাকঃ এক যাযাবর লক্ষ্যবিহীন (বড়গল্প – সাত) | অবাক পৃথিবী (Abak-Prithibi) – Bangla Blog

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান