প্যারিসের পথে পথে – এগারো (l’Hôtel-de-Ville, Paris, France)

ডিসেম্বরের কণকণে ঠাণ্ডা সকালে সেইন নদীর ধারে  place de l’Hôtel-de-Ville স্কোয়ারে যখন পৌঁছলাম, শীতের সকাল তখনো আড়মোড়া ভাঙছিল। মিষ্টি এক ফালি সোনালি রোদ গাছের শুকনো ডালের ফাঁক দিয়ে উঁকি দিতে দিতে, স্কোয়ারের বিশাল স্থাপত্য  l’Hôtel-de-Ville কে আলোকিত করে তুলছিল। প্যারিসের জনতা হয়তো দৈনন্দিন ব্যস্ততায়, আসা যাওয়ার পথে এই বিশাল স্থাপত্যকে এক নজর তাকিয়েও দেখে না – কিন্তু, টুরিস্টরা প্যারিসের পথে চলার সময়ে এই বিশাল স্থাপত্যের মুখোমুখি হলে আশ্চর্য হয়, কিছুক্ষণ থেমে এই বিশাল বিল্ডিঙের কারুকাজ দেখে মোহিত হয়ে যায়, নানান কোন থেকে ক্যামেরায় চোখ রাখতে বাধ্য হয়।

প্যারিসের বহু ঘটনার সাক্ষী এই স্কোয়ারের আগের নাম ছিল place de Grève – সাধারণত প্রাচীনকালে এই স্কোয়ারে প্যারিসিয়ানরা মৃত্যুদণ্ড দেখতে জমায়েত হোতো – এখানে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার সমস্ত সরঞ্জাম, যেমন –  gallows ও pillory, থাকতো। তাই হয়তো, আধুনিক প্যারিসিয়ানদের কাছে প্যারিসের  Hôtel de Ville র এই স্কোয়ার খুব একটা সুখের ইতিহাস বহন করে না।

তবে, সময় তো বদলায়, মানুষের চিন্তা, জ্ঞান, ভাবধারা বদলায়, সংস্কার, কুসংস্কার, ইতিহাস সবই বদলায়। আর সেই বদলের সাক্ষী হয়তো মানুষ তার এক জীবনে হতে পারে না – কিন্তু, Hôtel de Ville র মতো বিশাল স্থাপত্যরা সমস্ত বদলের সাক্ষী হয়ে রয়ে যায়।

আর তাইতো, সেইন নদীর পাশের বিশাল এই স্থাপত্য যেমন ফরাসী বিপ্লব থেকে শুরু করে ফ্রাঙ্কো-প্রুসিয়ান যুদ্ধেরও সাক্ষী ছিল, তেমনি, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে প্যারিসের স্বাধীনতার সাক্ষী ছিল, সাক্ষী ছিল দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শেষের। তৎকালীন ফরাসী প্রেসিডেন্ট সাল্‌ দি গল এই বিল্ডিঙের বেলকনি থেকে স্বাধীন প্যারিসের জন্যে তার বিখ্যাত বক্তৃতা দিয়েছিলেন। প্যারিসিয়ানরা প্যারিসকে ঠিক কতটা ভালোবাসে তার এক ছোট্ট নমুনা এই Hôtel de Ville।

বর্তমানে প্যারিসে এই স্কোয়ার বর্তমান প্যারিসের সমস্ত আনন্দ, ও উষ্ণতার এক ঠিকানা। ডিসেম্বরের উৎসব মরশুমের জন্যে সামনে বিশাল এক আইস স্কেটিং রিং সাজানো। পাশেই  Hôtel de Ville র দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে প্রাচীন বাজার Bazar de l’Hôtel de Ville , বাজারের রাস্তাটি ধরে একটু হেঁটে গেলেই চোখে পড়ে ক্যাফে – খোলা ক্যাফেতে রোদের দিকে মুখ করে বসে সকালের প্রথম কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে খবরের কাগজে চোখ রাখে বয়স্ক প্যারিসিয়ারা – পাশ দিয়ে যেতে যেতে কফির কড়া গন্ধ নাকে আসে – প্যারিসের নিজস্ব আবেদনময় এক গন্ধ। প্যারিস বলতেই মনে ভাসে – এক সুন্দর শীতল, ধূসর অথচ উষ্ণ উজ্জ্বল এক ছবি, যে ছবিতে শুধুই রোমান্টিকতা স্থান পায় – তাই, আজকের প্যারিস যতই বদলে যাক না কেন, আমরা প্যারিসকে ঠিক যে ভাবে দেখেছি, তেমনি করেই মনে রাখতে চাই।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel, Western-Europe and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান