এখানে ঘন নীল উদার সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে, দূরে চোখ রেখে সময় কেটে যায় – আর অক্টোবরের কণকণে উত্তুরে হাওয়া নাক মুখ চিরে দিয়ে যায়। এখানে উত্তর সমুদ্রের ঘন নীল জল যেন আকাশ ছুঁয়ে ফেলতে চায়, মনে হয় – দিগন্ত যেন খুব কাছেই, আর সমুদ্রের বুকে মাথা উঁচু করে থাকে অজস্র পাথর। বিশাল পাথুরে তীরে শান্ত সমুদ্র এসে আছড়ে পড়ে।
এমনি, এক পাথুরে তীরে বসে, ঝকঝকে উজ্জ্বল দিনে সেরে ফেলতে হয় এক ছোটখাটো পিকনিক কিংবা রোদের দিকে পিঠ করে হেঁটে হেঁটে দেখে ফেলতে হয় সম্পূর্ণ দ্বীপকে, দ্বীপের জীবন যাপনকে। আর যাদের সমুদ্রে সাঁতার কাটার সাহস আছে – তারা গরমের সময় সমুদ্রে গা ভাসাতে পারে। জনহীন এই ভারগো দ্বীপ, অথচ সবই নিখুঁত সুন্দর করে সাজানো, সর্বত্রই মানুষের বসবাসের, যত্নের ছাপ প্রবল।
ছোট্ট এই দ্বীপে সুইডেনের সমস্ত প্রাকৃতিক সম্পদ যেন জায়গা পেয়েছে – প্রকৃতি নিজেকে উজার করে এই দ্বীপকে সাজিয়েছে। মানুষের যত্ন ও প্রকৃতির নিজস্ব সৌন্দর্য দুইয়ে মিলে এক অপূর্ব স্বর্গ রাজ্যের ঠিকানা এই সুইডিশ দ্বীপ।
ভারগো দ্বীপের নামের আক্ষরিক মানে করলে নাকি দাঁড়ায় – Wolf Island , অথচ সম্পূর্ণ দ্বীপে ঘুরেও পাখি, ভেড়া ও বেড়াল ছাড়া আর কোন প্রাণী নজরে পড়ে নি। অক্টোবরের উজ্জ্বল সকালে এক অদ্ভুত শীতল নির্জনতা ছড়িয়ে থাকে এই দ্বীপে।
এখানে পৃথিবীর মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ বলতে ফেরী – তাই ফেরী ঘাটে দাঁড়িয়ে নীল সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে দূরে সমুদ্রের বুকে ফুটে ওঠা এক সাদা বিন্দুর জন্যে অপেক্ষা করি – তারপর সেই সাদা বিন্দুটি ধীরে ধীরে জাহাজের অবয়ব হয়ে যায় – ফেরী ঘাটে অপেক্ষারত গুটিকয় মানুষের মুখে ফুটে ওঠে এক চিলতে তৃপ্তির হাসি – জানি না, সেই তৃপ্তির হাসির নাম কি, কারণ কি।
সেই মুহূর্তে প্রকৃতির সুন্দর রাজ্যে, ফেরিঘাটে দাঁড়িয়ে একটা ফেরীর জন্যে অপেক্ষা করা, ও ফেরী পেয়ে যাওয়ার মধ্যেই যেন পৃথিবীর সমস্ত সুখ, পাওয়া না পাওয়া জড়িয়ে থাকে – প্রকৃতির এই অপূর্ব রাজ্যে মানুষের চাওয়া পাওয়া গুলো বড়ই সরল সহজ এক লেফাফায় মোড়ানো। মনে হয়, এই দ্বীপের বাসিন্দারা এক অদ্ভুত শান্ত মনো জগতের বাসিন্দা – যাদের জীবনে চলে এক শান্ত উত্তুরে হাওয়ার আনাগোনা, ছোট ছোট চাওয়া পাওয়া, সমুদ্র, নোনা বাতাস, আর প্রকৃতি – শুধুই প্রকৃতি। ফেরার সময় এক ভালো লাগা এলোমেলো ঠাণ্ডা বাতাস মুখ ছুঁয়ে দিয়ে বলে যায় – বিদায়। ভালো থেকো।