রাতের আকাশের ঐ লাল গ্রহ – মঙ্গল, ওখানে যাওয়ার সাধ ছিল বহুদিন ধরে, হুম্, ধরা যাক, ছেলেবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল! এতোদিন তো ভুলেই গিয়েছিলাম সেই ইচ্ছের কথা! পৃথিবীর নানা মোহ মায়ায়, ভালোবাসায় আটকে ছিলাম। হঠাৎ ভাবলাম, হল তো পৃথিবীতে অনেক দিন – শান্তি তো দেখছি কোথাও নেই, দেশে বিদেশে যুদ্ধ বিগ্রহ, ধর্ম, বর্ণ, জাতি নিয়ে দলাদলি, হানাহানি লেগেই আছে – শস্য শ্যামলা, সুন্দর নীল সবুজ পৃথিবীটাকে আমার তোমার বলে ভাগাভাগি করতে করতে পৃথিবীর চেহারাই বদলে দিয়েছে মানুষ। এবার অন্য এক পৃথিবীর খোঁজ করতে হচ্ছে।
বেশ তো, তবে, মঙ্গল গ্রহেই না হয় যাওয়া যাক – যেমন ভাবা তেমন কাজ – মঙ্গল যান ATLAS V401 এ মঙ্গল যাত্রার টিকিট পেয়ে গেলাম – এবার ‘অবাক-পৃথিবী’ সদলবলে মঙ্গল যাত্রা করবে, এর পস্তুতি শুরু করে দিয়েছি।
পরের বছর মার্চ মাসের চার তারিখে, আমেরিকার VANDENBERG থেকে যাত্রা শুরু করবো, উদ্দেশ্য মঙ্গল গ্রহের সাইট Elysium Planitia ‘Plain of Ideal happiness’। শুধু আমরা কেন, পৃথিবীর আট লক্ষেরও বেশী মানুষ ঐ মঙ্গল যানের টিকিট কেটেছে।
ব্যাপারটা যদিও একটু কল্প বিজ্ঞানের মতো শোনাচ্ছে – কিন্তু, এটাই বাস্তব সত্য। আমেরিকার বিখ্যাত মহাকাশ সংস্থা নাসা, পৃথিবীর মানুষের জন্যে মঙ্গল যাত্রার এই বিশেষ ব্যবস্থা করেছে। নাসা আগেও মঙ্গল যাত্রার ব্যবস্থা করেছিল, তবে, এবার অনেক বেশী আবেদন পত্র জমা পড়েছে।
এবারের নাসার এই InSight মঙ্গল যাত্রার উদ্দেশ্যটা অন্যরকম – এতদিন পর্যন্ত মঙ্গল যাত্রায় মঙ্গলের উপরে পৃষ্ঠ ভূমিরই ইতিহাস জেনেছে – মানে, মঙ্গল পৃষ্ঠে গুহা, খাদ, পাহাড়, আগ্নেয়গিরি ইত্যাদি কি কি আছে, সেই সবের উপরেই গবেষণা চলছিল। কিন্তু এবার, মঙ্গল গহকে ভেতর থেকে জানার জন্যেই এই মঙ্গল যাত্রা। কিংবা বলা যায় এবারের উদ্দেশ্য – to listen the heartbeat of Red Planet।
এই যাত্রা বিজ্ঞানীদের প্রথম মৌলিক প্রশ্ন – কি ভাবে এই সৌরজগতে, পৃথিবীসহ অন্যান্য গহ উপগ্রহ গুলো তৈরি হল? সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করবে, বোঝার চেষ্টা করবে কয়েক লক্ষ কোটি বছর আগের এক মাহেন্দ্রক্ষণে, কি এমন বিশেষ ঘটনায় এই সৌরজগৎ তৈরি হয়েছিল। তৈরি হয়েছিল পৃথিবী? জানার চেষ্টা করবে সৌরজগতের গ্রহের বিবর্তনের ইতিহাসকে।
যাইহোক, একবার যখন মহাকাশে পাড়ি দেওয়ার সুযোগ এসেছে, কিছুতেই হাতছাড়া করা চলবে না। কিন্তু, পৃথিবী যে বড্ড মায়ার বাঁধনে বেঁধে রেখেছে, সবুজ নীল এই পৃথিবীকে ছেড়ে, ঐ রুক্ষ লাল মঙ্গলে যেতে হবে? বসবাস করতে হবে? ভেবেই মনটা কেমন যেন দুমড়ে মুচড়ে যায়, তার চেয়ে বরং, আমরা যেখানে আছি সেখানেই থাকি – পৃথিবীই ভালো।
আর, নাসাও মানুষের সেই আবেগটাকে বুঝেছে, তাই, একটা সিলিকন মাইক্রো চিপে আট লক্ষ মানুষের নাম লিখে মঙ্গল যানে করে মঙ্গল গ্রহে, সেই মাইক্রো চিপ পাঠিয়ে দেবে। আমরা যেখানে আছি, সেখানেই ভালো থাকার চেষ্টা করবো, মঙ্গল গ্রহে আমাদের নামটাই শুধু যাবে। কল্পনা – তোমায় দিলাম ছুটি, যাও তুমি মঙ্গল গ্রহে। আমরা পৃথিবীকেই ভালো রাখার চেষ্টা করবো, পৃথিবীতেই ভালো থাকার চেষ্টা করবো।