সালটা সাতচল্লিশ – একদল মানুষ দেশ, বাড়ী, ঘর সব ছেড়ে ছুঁড়ে হাঁটতে শুরু করেছিল, শুধু কি সাতচল্লিশ! পৃথিবীর ইতিহাসে প্রায় সব মহাদেশের মানুষকেই নিজের জায়গা, দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যেতে হয়েছে – শুধু সালটাই বদলে গেছে, দশক বদলেছে, জায়গা, দেশ বদলেছে – কখনো ছাপ্পান্ন, কখনো ষাট, কখনো সত্তর, আশি, কখনো নব্বই – মানুষকে উদ্দেশ্যহীন হয়ে প্রানের ভয়ে, জীবনের সন্ধানে, প্রান হাতে করে এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে হয়েছে।
তখন পৃথিবীর কোন দেশ সেই আশ্রয়হীন, দেশ ছাড়া, যুদ্ধ বিধ্বস্ত, নিঃস্ব মানুষগুলোকে আশ্রয় দিয়েছে, দিয়েছে এক নতুন জীবনের ঠিকানা, আশ্বাস, নতুন দেশ। গত কয়েক শতাব্দী ধরে নানান কারণ – কখনো যুদ্ধ, গৃহ যুদ্ধ, কখনো অর্থনীতি, কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের এই জায়গাবদল, দেশ বদল হয়ে চলেছে – কিন্তু, এই শতাব্দীতে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশী সংখ্যক মানুষ তার নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে গিয়ে বসবাস করছে।
সাম্প্রতিক এক পরিসংখ্যান বলছে, পৃথিবীর সম্পূর্ণ জনসংখ্যার তিন শতাংশেরও বেশী মানুষ তার নিজের দেশ ছেড়ে অন্য দেশে থাকে – এবং বেশ সুখেই থাকে, তাদের নিজের দেশ বা জায়গা বলে কিছু নেই, এমনকি, তারা নিজের দেশে ফিরেও যেতে চায় না, সে যে কারনেই হোক। আর সেই কারণে, বর্তমান শতাব্দীর মানুষ এক নতুন শব্দের সঙ্গে পরিচিত হয়েছে – গ্লোবালাইজেশন। কিন্তু, এই গ্লোবালাইজেশন কি সত্যিই মানুষে মানুষে বিভেদ মিটিয়ে দিয়ে এক নতুন পৃথিবীর সূচনা করেছে?
সালটা তো ২০১৫, এখন তো মানুষের নিজের জায়গা ছেড়ে উদ্দেশ্যহীন পথ চলা থেমে যাওয়ার কথা, কিন্তু, না মানুষের সেই উদ্দেশ্যহীন পথ চলা থামে নি, মানুষ আজও তার দেশ, সমস্ত কিছু ছেড়ে দিয়ে মরীয়া হয়ে অন্য দেশে গিয়ে আশ্রয় খোঁজে, নিজের দেশের চেয়েও অন্য দেশে গিয়ে নিজেকে বেশী নিরাপদ মনে করে, নিজের ধর্মের বড়াই করে অন্য ধর্মের মানুষের কাছে গিয়ে আশ্রয় পায়। যে ধর্ম মানুষের বাঁচার অধিকার কেড়ে নেয়, যে দেশ মানুষকে দেশছাড়া করতে বাধ্য করে – তাহলে, কিসের ধর্ম, কিসের দেশ!
যুদ্ধ পীড়িত দেশ গুলো থেকে কয়েক লক্ষ মানুষ ইউরোপের দ্বারে আশ্রয় চাইতে যায়। ইউরোপের তো উচিত ছিল, দরজা বন্ধ করে দেওয়া, কিন্তু, না ‘মানবতা’র শিক্ষায় শিক্ষিত হতে ইউরোপকে প্রচুর রক্তখরচ করতে হয়েছে, তাই, মানবতা রক্ষার জন্যে ইউরোপ সেই আশ্রয়প্রার্থী মানুষ গুলোর জন্যে দরজা খুলে দেয়।
হাঙ্গেরিতে যুদ্ধপীড়িত দেশের মহিলা, শিশু, ছেলে বুড়োর এক আশ্রয় প্রার্থী দল আটকে যায়, তারা ঠিক করল, হাঙ্গেরি থেকে অষ্ট্রিয়া, ও জার্মানির উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করবে – ইউরোপের সমস্ত সংবাদ মাধ্যম তাদের সঙ্গে ছিল। আলোর উদ্দেশ্যে, মানবতার উদ্দেশ্যে হাজার হাজার ক্লান্ত, নিরীহ, অসহায় মানুষের পথ চলা দেখে মনে হয় – দেশ নয়, জাতি নয়, ধর্ম নয়, বর্ণ নয়, মানুষকে ভালো রাখাই মানুষের আসল ধর্ম, সহিষ্ণুতাই বড় ধর্ম – সেই ধর্মের নাম ‘মানবতা’। আর এই প্রসঙ্গে John Lennon এর বিখ্যাত – Imagine গানটার কথাগুলোকে অনেকটাই সত্যি বলে মনে হয়।
“Imagine” by John Lennon
Imagine there’s no heaven
It’s easy if you try
No hell below us
Above us only sky
Imagine all the people
Living for today…
Imagine there’s no countries
It isn’t hard to do
Nothing to kill or die for
And no religion too
Imagine all the people
Living life in peace…
You may say I’m a dreamer
But I’m not the only one
I hope someday you’ll join us
And the world will be as one
Imagine no possessions
I wonder if you can
No need for greed or hunger
A brotherhood of man
Imagine all the people
Sharing all the world…
You may say I’m a dreamer
But I’m not the only one
I hope someday you’ll join us
And the world will live as one ……..