একটি স্যুভেনিরের গল্প (Beneficial Brick in Prague, Czech Republic)

পুরনো প্রাগের রাস্তার মোড়ে হঠাৎ-ই রঙিন উজ্জ্বল ইট দিয়ে তৈরি এক ছোটখাটো স্তূপ দেখে অনেকেই থমকে দাঁড়ায় – প্রাচীন প্রাগের ঐতিহাসিক স্থাপত্যের ধূসর রঙের মধ্যে রঙিন ইটের স্তূপের বিপরীতধর্মী উপস্থিতি বাইরের টুরিস্টদের মধ্যে এক প্রশ্ন তৈরি করে। করতে বাধ্য, আমাদেরও করেছিল।

রঙিন ইটগুলোর পাশে আবার স্তূপাকৃতি সাদা ইটও রাখা, পাশে ইট গুলোতে রং লাগানোর জন্যে প্রচুর রঙের ব্যবস্থা – অনেকেই দেখি সাদা ইটগুলোয় রং লাগাতে ব্যস্ত, প্র্যতেকেই টুরিস্ট – রং তুলি দিয়ে কেউ আঁকছে তার নিজের দেশের পতাকা, কেউ লিখছে নিজেদের নাম ও প্রাগ ভ্রমণের তারিখ।

জানলাম ঐ গুলো প্রাগের এক অভিনব স্যুভেনির। ইটগুলোকে নিজের ইচ্ছের রং-এ রাঙাতে হলে, পাশের স্টল থেকে কিছু চেক ক্রাউনের বদলে কিনতে হয়। টুরিস্টরা চাইলে ইট কিনে, স্যুভেনির হিসাবে নিজের দেশে নিয়ে যেতে পারে, আবার, রং করে নিজেদের নামে সেই জায়গায় রেখে দিয়েও আসতে পারে। তবে, টুরিস্টরা লাগেজে এক ভারী ইট বহন করার চেয়ে ইটের গায়ে নিজেদের নাম লিখে সেখানে রেখে আসাই বেশী পছন্দ করে।

তারপর, সেই ইটের স্তূপ ও ইট বিক্রি থেকে সংগৃহীত অর্থ চলে যায় চেক রিপাবলিকের মানসিক ভাবে অসুস্থ ও প্রতিবন্ধীদের জন্যে কর্ম সংস্থানের কাজে, ওয়ার্ক শপের বিল্ডিং তৈরির কাজে। গত কয়েক বছর ধরে প্রাগের এক সমাজসেবী সংস্থা প্রাগের নানা জায়গায় এই ধরণের ইট সংগ্রহ করে চলেছে।

সমাজকে সুগঠিত, সুন্দর রাখার জন্যে তো পৃথিবীতে প্রচুর সংস্থা আছে, সমাজের উন্নয়নের জন্যে যাদের নিরন্তর কাজ প্রেরণা দেয়, কিন্তু, প্রাগে চলার পথে হঠাৎ করে রঙিন ইটের ঐ স্তূপ গুলো অনেককে আকর্ষণ করে।

আর, এক অচেনা জায়গায় কোন এক অচেনা মানুষকে সাহায্যের জন্যে যখন পৃথিবীর অন্য কোন এক প্রান্তের মানুষ প্রাগের রাস্তার পাশে ছবি আঁকতে বসে – পৃথিবীকে আরও সুন্দর মনে হয়। মনে হয়, মানুষের এই মানবতার জন্যেই হয়তো মানব সভ্যতা আরও কয়েক লক্ষ বছর অনায়াসে টিকে থাকবে।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Czech Republic, Eastern-Europe, Europe, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান