খাড়া পাহাড়ের খাঁজে লোহার তৈরি সেতুটি, তীব্র হাওয়ায় রীতিমত থরথর করে কাঁপে, তবুও টুরিস্ট মরশুমে সেতুর উপরে তিল ধারণের জায়গা থাকে না, তাই মানুষের চলাফেরার ছন্দও হয়তো সেতুটির সেই কম্পনের জন্যে দায়ী। প্রথমে এই সেতুটি কাঠের ছিল, পরে, উনিশ শতাব্দীর শেষের দিকে তৈরি লোহার এই সেতুটি বেভেরিয়ার রাজা Ludwig II এর পাগলামির আরেকটি নিদর্শন।
এই সেতুর উপরে দাঁড়িয়ে তার প্রিয় স্বপ্নের প্রাসাদ ‘Neuschwanstein castle’ ও প্রেক্ষাপটে বেভেরিয়ার অপূর্ব প্রকৃতি দেখা ছিল তার অন্যতম বিনোদ। আর রানী Mary র নামে সেই সেতুর নামকরণ হয় Queen Mary’s Bridge কিংবা জার্মান ভাষায় Marienbrücke ।
সেই সময়ে পাহাড়ের খাঁজে লোহার তৈরি এই ধরণের সেতু রীতিমত পরীক্ষা নিরিক্ষার পর্যায়ে ছিল – আর সেই সময়ে যে সেতুটি বেশ সাফল্যের সঙ্গেই স্থাপিত হয়েছিল, তা এই সেতুতে একবিংশ শতাব্দীর প্রচুর মানুষের আনাগোনায় আরও বেশী স্পষ্ট হয়, প্রমান হয়।
অবশ্য, সেতুতে দাঁড়িয়ে নীচের পাহাড়ি খাদের গভীরতার দিকে তাকালে শতাব্দী প্রাচীন এই সেতুর স্থায়িত্বের উপরে সম্পূর্ণ ভরসা করতে একটু দ্বিধা হতেই পারে। তবে সেই ক্ষণিক দ্বিধা, দূরের প্রকৃতি ও ক্যাসলের সৌন্দর্যের দিকে তাকালে মুহূর্তেই উবে যায়। পরিচয় হয় এক রূপকথা জড়ানো অপূর্ব সৌন্দর্যের সঙ্গে।
প্রকৃতি ও মানুষের কীর্তি, এই দুইয়ে মিলে পৃথিবীর বুকে যে এক অপূর্ব ছবি তৈরি করা যায়, তারই এক নমুনা Neuschwanstein castle। এবং এই Marienbrücke সেতু বা Mary’s Bridge এ এসে দাঁড়ালে, সেই ক্যাসলের প্রেক্ষাপটে বেভেরিয়ার দিগন্ত বিস্তৃত অপূর্ব প্রকৃতির সম্পূর্ণ রূপ ধরা দেয়। আর সেই অপূর্ব দৃশ্যে মানুষ হয়তো সারা জীবনের জন্যেই মুগ্ধ হয়। তাই, বেভেরিয়ায় গেলে সবাই একবার Neuschwanstein castle দেখতে যায়, আর ক্যাসল দেখে রানীর সেতুটির ঠিক মাঝ বরাবরে গিয়ে দাঁড়ায়।
সত্যিই, এই সেতুর ঠিক মাঝে দাঁড়িয়ে তার স্বপ্ন প্রাসাদকে আরও বেশী স্বপ্নময় মনে হয়। সেতুর এক দিকে রূপকথা জড়ানো ক্যাসল, আরেক দিকে পাহাড়ের কোল ছাড়া পাগলা ঝর্ণা, এপ্রিলের শেষ দুপুরের সোনা গলানো রোদ, বেভেরিয়ার অপূর্ব প্রকৃতি, নীল আকাশ, মাতাল হাওয়া – সবাই মিলে যেন ষড়যন্ত্র করেই এখানে এক স্বপ্নময় দৃশ্য তৈরি করেছে। আর তাতে সঙ্গ দিয়েছে মানুষের তৈরি এই লোহার সেতু – Marienbrücke ।
একই সাথে ভয়ংকর ও সুন্দর। ভালো লাগলো রানীর সেতু।
ধন্যবাদ। জায়গাটি সত্যি সুন্দর। শুভেচ্ছা রইল, ভালো থাকবেন।