স্পেনের সেভিল শহরের কেন্দ্রে একদিকে যেমন আধুনিক ব্যস্ত গতিময় সময়, তেমনি শহর কেন্দ্রের বিশাল সবুজ পার্ক ‘ Maria Luisa’ য় যেন সময় এসে থমকে দাঁড়ায়। বিশাল এলাকা জুড়ে পার্কের সবুজের বিস্তারে এক নিবিড় নির্জনতা, নীরবতা, এক মিষ্টি শীতলতা ছড়িয়ে থাকে।
জুনে স্পেনে বেশ ভালোই গরম পড়ে, এই সময় চড়া রোদে থার্মোমিটারের পারদ বেশ উপরের দিকেই যায়। আর অদ্ভুত উপায়ে এই ‘ Maria Luisa’ পার্কের ভেতরে বেশ ঠাণ্ডাই থাকে। গরম ও রোদ থেকে এসে পার্কের সবুজ ছায়ায় বসলে সেই ব্যবধান রীতিমত অনুভব করা যায়।
‘ Maria Luisa’ পার্কের ধরনটি ইউরোপের অন্যান্য জায়গার পার্ক থেকে অনেকটাই আলাদা – এই পার্কের বিশেষত্ব হল, প্রচুর জলাশয়, ফোয়ারার উপস্থিতি – এই বাগানের গঠনশৈলী স্পেনের সেই প্রাচীন মুরিশ স্বর্গীয় বাগানের বিশেষ স্টাইলের কথা মনে করায়। এবং মাঝে মাঝে নানা ধরণের স্ট্যাচুর উপস্থিতিও এই পার্কের বৈশিষ্ট্য – যেমন, পার্কের পথে চলতে চলতে চোখে পড়ে স্প্যানিশ কবি, সাহিত্যিক ও সেভিলের বাসিন্দা Bécquer এর স্মরণে উৎসর্গীকৃত মনুমেন্ট। Bécquer কে স্প্যানিশ সাহিত্যের অন্যতম এক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্ত্বিত্ব হিসাবে গণ্য করা হয়।
আরেক যে বৈশিষ্ট্যের টানে গরমের দিনে বহু টুরিস্ট এই পার্কে আসে, তা হল – এই পার্কের নানা ধরণের গাছ গুলো – মেডিটেরিয়ান পাইন থেকে শুরু করে কমলালেবু, পাম গাছ তো আছেই, তাছাড়া বিশাল আকারের প্রাচীন গাছও দেখা যায়। আর, পার্কের বিশাল বিশাল প্রাচীন গাছ গুলো ঘন ছায়া তৈরি করে জায়গাটাকে বেশ ঠাণ্ডা করে রাখে।
বিশাল এই পার্ক আগে Palace of San Telmo র বাগান ছিল, তারপর হয়ে যায় পাবলিক পার্ক। Palace of San Telmo যা কিনা বর্তমানে আন্দালুসিয়ার সরকারী দপ্তর।
Maria Luisa পার্কের ঠিক উল্টো দিকেই প্লেস দে এস্পানার বিশাল স্থাপত্য – যা কিনা অতি সহজেই চোখে পড়তে বাধ্য। সেভিল শহরে এলে প্রথমেই সবাই প্লেস দে এস্পানার বিশাল চত্বরে আসে – আর যখনই ক্লান্ত হয়ে যায়, দু’দণ্ড জিরোতে Maria Luisa পার্কে গাছের ছায়ায় তাদের আসতেই হয়।
সম্ভবত স্পেনের কয়েক লক্ষ পাখির বাসা এই Maria Luisa পার্ক। সন্ধ্যা নামার ঠিক আগে পার্কের শর্টকার্ট পথ ধরে যখন আমরা হোটেলে ফিরছিলাম, লক্ষ পাখির নীড়ে ফেরার আনন্দিত কলরবে কানে তালা লাগার উপক্রম আর কি। এখনো সেভিল ভ্রমণ পর্যায়ের মারিয়া লুসিয়া পার্কের কথা মনে হলে – সেই লক্ষ পাখির নীড়ে ফেরার সেই কলরবের কথাই মনে হয়।