লেক জেনেভার পাশের বিশাল বাগানের নাম ইংলিশ গার্ডেন কেন হল? সুইস গার্ডেন কেন নয়? সেখানে কি ইংলিশরা থাকতো? প্রশ্ন জাগতেই পারে।
আঠারো শতাব্দীর শুরুর দিকে ইংল্যান্ডে এক ধরণের ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেন খুব জনপ্রিয় হয় – যেখানে গার্ডেনে প্রচুর খোলা জায়গা, বড় গাছ, ঘাসে ঢাকা সবুজ মাঠ, কখনো কোন পুরনো স্থাপত্য ঘিরে বাগান, ছোট্ট জলাশয়, উপরে সুন্দর ব্রিজ ইত্যাদি দিয়ে তৈরি হত ইংল্যান্ডের গার্ডেনের সুন্দর ল্যান্ডস্কেপ। এবং দেখা যায়, কিছুদিনের মধ্যেই সতেরো শতাব্দীর ফরাসী গার্ডেন স্টাইল ‘jardin à la française’ কে সরিয়ে দিয়ে ইংল্যান্ডের ল্যান্ডস্কেপ গার্ডেন সারা ইউরোপে জনপ্রিয় হয়ে যায়।
ফ্রেঞ্চ স্টাইলে জ্যামিতিক নক্সায় সাজানো বাগানের সবচেয়ে সুন্দর নিদর্শন যদিও প্যারিসের ভার্সেই প্যালেসের বাগানে দেখা যায়, তবুও, ইউরোপের নানা জায়গায় ইংল্যান্ডের ঐ ধরণের লেন্ডস্কেপ গার্ডেন স্টাইল ছড়িয়ে পড়ে। আর জেনেভার প্রথম ইংলিশ গার্ডেন তৈরি হয় লেক জেনেভার পাশে। এবং এই বাগান তৈরির সময় থেকেই, লেক জেনেভা ও সুইস আল্পসের নীল পাহাড় শ্রেণীর প্রেক্ষাপটে এই সুন্দর, দৃষ্টি নন্দন সবুজ বাগান স্থানীয় সুইস লোকজন থেকে শুরু করে নানা প্রান্তের টুরিস্টদের জন্যে এক বিশেষ গন্ত্যব্য হয়ে যায়।
এখানে যেন মানুষ নিজেকে মেলে দিতেই আসে। রেলিং এ ঝোলানো টবের মরশুমি ফুল, নীল পাহাড়, লেক জেনেভার গভীর নীল জলরাশি – সব মিলিয়ে টুরিস্টদেরকে এক সুন্দর, স্মরণীয়, প্রাকৃতিক সময় উপহার দেয় এই ইংলিশ গার্ডেন।
এখানে নানান মানুষ নানান ভাবে নিজের সময়কে উপভোগ করতে ভালোবাসে। এক যুবক, সামনের রেলিং এ হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে গিটার বাজিয়ে নিজের মনেই সুর চর্চা করে চলে – তার বাজানো সুর সারা বাগান ভরিয়ে রাখে, কেউ রেলিং ঘেঁসে দাঁড়িয়ে দূর পাহাড়ে চোখ রাখে, কেউ এক মনে স্কেটিং করে চলে, কেউ বা ঘাসে শুয়ে বই পড়েই কাটিয়ে দেয়, কেউ বা শুধুই হেঁটে চলে।
এখানে, যে কেউই বাগানের বেঞ্চে বসে দূরের নীল পাহাড়ে চোখ রেখে সামনে দাঁড়ানো যুবকটির গিটারে সুর তোলা শুনতে শুনতে উদাসী হয়ে যেতেই পারে। আল্পস ও লেক জেনেভা ছুঁয়ে আসা এক ঝাঁক মাতাল হাওয়া এসে চুল এলোমেলো করে দিয়ে যেতে পারে, সামারের বিকেল এখানে বড়ই মনোরম, জেনেভার এই ইংলিশ বাগানে এলে এক টুকরো ভালো লাগা মনকে ছুঁয়ে যাবেই।