ইউরোপের যে কোন শহরে পা রেখে, সাধারণত প্রথমেই যা খুঁজতে হয়, তা হল – এক টুরিস্ট ইনফরমেশন অফিস। ইউরোপে দেখেছি – সে যত ছোট শহর বা গ্রামই হোক না কেন, ঠিকই এক সাজানো সুন্দর টুরিস্ট অফিস থাকে, কোথাও কোথাও আবার টুরিস্ট অফিসটিও এক টুরিস্ট গন্ত্যব্য। যেমন, ব্রাসেলসের টুরিস্ট অফিসটি রাজপ্রাসাদের একটি ঘর। সাজানো ছোট্ট এক টুরিস্ট অফিসে সেই জায়গার সমস্ত দ্রষ্টব্য স্থানের বিবরণ সহ ম্যাপ বিনামূল্যে টুরিস্ট অফিস থেকেই সংগ্রহ করতে হয়, অবশ্য কোথাও কোথাও খুবই কম দামে ম্যাপ বিক্রিও হয়।
দেখেছি, ইউরোপের মানুষ নিজেদের জায়গা, নিজেদের স্থাপত্য, ঐতিহ্য নিয়ে খুবই সচেতন, খুবই গর্বিত। কোন এক বিদেশী গিয়ে টুরিস্ট অফিসে যখন জিজ্ঞেস করে – তোমাদের শহরে কি কি দেখবো, কি কি দেখার আছে। সুন্দরী রিসেপশনিস্ট হাসি মুখে ম্যাপের মধ্যে দেখিয়ে দেয় – এখন আমরা কোথায়, কোন রাস্তা ধরে কোথায় কোথায় যাওয়া যায়, কি কি দেখা যায়, কোথা থেকে শুরু করা যায়, ঐ জায়গায় কি কি না দেখলে সেই জায়গায় ভ্রমণ বৃথা – সমস্ত কিছু বলে দিতে কোন ক্লান্তি নেই, বিরক্তির ছাপ নেই মুখে – ওরা যে বিদেশীদের কাছে ওদের দেশের প্রতিনিধিত্ব করে, তাই হাসি মুখেই স্বাগত জানায়, বোঝায়।
দেখেছি, ইউরোপের প্রতিটি জায়গা খুবই টুরিস্ট ফ্রেন্ডলি। ইউরোপের উত্তর ও পূর্বের দেশ গুলোয় তো রীতিমত চলমান টুরিস্ট ইনফরমেশন অফিস দেখেছি – মানে, অল্প বয়সী ছেলে মেয়েরা ইউরোপের রাস্তায়, টুরিস্টদের জন্যে সমস্ত ইনফরমেশন নিয়ে ঘোরে।
বুদাপেস্টে যখন পথ হারিয়ে এক চলমান টুরিস্ট ইনফরমার যুবককে জিজ্ঞেস করলাম – জিউস সিনাগগ কোন দিকে? ছেলেটি এতো হাসি মুখে খুশী হয়ে উত্তর দিল, যেন আমাদের পথ দেখানোর জন্যেই ওর জন্ম হয়েছে, আমাদের পথ দেখিয়ে দিয়ে ওর জন্ম যেন সার্থক হয়ে গেল। ভিলিনুসের পথেও দেখেছি, সুন্দরী টুরিস্ট ইনফরমার পথ দেখিয়ে দেয়, বুঝিয়ে দেয় – ম্যাপ সরবরাহ করে। তাছাড়া, শহরের রাস্তার মোড়ে মোড়ে তো বিশাল ম্যাপ টাঙ্গানো থাকেই।
ইউরোপে কোথাও বেড়াতে যাওয়ার আগে যতই রিসার্চ করি না কেন, সেখানে পৌঁছলে, কিন্তু, টুরিস্ট ইনফরমেশন অফিসের সাহায্য চাইই চাই। সেবার পর্তুগালে গিয়ে, লিসবন থেকে ট্রেনে মুরিশ প্রাসাদ দেখতে গিয়ে প্রচণ্ড বৃষ্টির সম্মুখীন হয়েছিলাম – সেখানের টুরিস্ট অফিসের অর্ধেক খোলা জানালার ঐ দিকে বসা লোকটির পরামর্শেই, কিন্তু, বাস ধরে সম্পূর্ণ মুরিশ প্রাসাদ দেখা সম্ভব হয়েছিল।
কিংবা, ফ্রান্সের লুরদে পৌঁছে টুরিস্ট অফিসে গিয়েই জেনেছিলাম – লিফট দিয়ে লুরদের ক্যাসলের একদম চূড়ায় পৌঁছে যাওয়া যায় – আর সেখান থেকে লুরদের ‘প্যনোরামা ইজ ম্যাগ্নিফিসেন্ট’ ‘মাস্ট সি’।
যদিও ইউরোপের ট্যুরিজম শিল্পে সুইজারল্যান্ডের নাম সবচেয়ে আগে আসে, তবুও, ইউরোপের অনান্য জায়গায় ও ফ্রান্সে, দেখেছি ছোট্ট গ্রামের মুখেই, একটি টুরিস্ট অফিস, চকচকে টুরিস্ট বুকলেটে ছোট্ট করে গ্রামের ইতিহাস লেখা, ম্যাপ – ইত্যাদি দিয়ে টুরিস্টদেরকে এক ছিমছাম ইনফরমেশন পরিবেশন করে। এমনকি, ইউরোপে, জঙ্গলের মধ্যেও কাঠের তৈরি টুরিস্ট ইনফরমেশন অফিস দেখা যায়।
মোটকথা, ট্যুরিজমকে ইউরোপিয়ানরা এক উচ্চতর শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে গেছে, আজকের ইনফরমেশন টেকনোলোজির যুগেও আথিতেয়তার শিল্পকে ওরা এক নিজস্ব ছোঁয়া দিয়েছে – আর যে ছোঁয়ায় ওদের দেশ দেখতে আসা ভ্রমণার্থিদের ভ্রমণের স্মৃতি আরও মধুর হয়েছে।