কোন এক পত্রিকায় তালিনের এক ছবি দেখে তালিন বেড়ানোর এক ঝাঁক স্মৃতি যেন ভিড় করে সামনে এসে দাঁড়াল। জুলাইয়ের সেই ঝকঝকে তালিন সকাল ভেসে উঠল মানস চক্ষে। সেদিন, ভোরের আলো ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গেই বেড়িয়ে পড়েছিলাম ঐতিহাসিক তালিন দেখতে – যদিও আগের দিন সন্ধ্যার আগে তালিন পৌঁছেছিলাম, কিন্তু, সন্ধ্যা, রাত ও ভোরের তালিন ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।
সেই সন্ধ্যায় তালিনের ঐতিহাসিক কেন্দ্রে এসে মনে হয়েছিল, যেন আঠেরো শতাব্দীর এক সন্ধ্যায় সশরীরে পৌঁছে গেছি, ইতিহাসের কোন এক পাতায় যেন পা রেখেছি। ঐতিহাসিক তালিনের ভেতরে দরকার ছাড়া অন্য কোন গাড়ি চলাচল করে না – শুধু পায়ে হাঁটার জন্যে পাথরে বাঁধানো প্রশস্ত পথ।
দু’পাশের প্রাচীন বাড়ী, নীচে ছোট সাজানো সারি সারি রেস্টুরেন্ট, রেস্টুরেন্টের পরিবেশনকারীদের পোশাকে ঐতিহাসিকতার ছাপ, বাইরের সারি সারি রেস্টুরেন্টে মোম বা হারিকেনের মায়াবী আলো, পাথরে বাঁধানো রাস্তার নরম টিমটিমে হলুদ আলো, মানুষের চলার ছন্দে ছুটির অবকাশ, স্তব্ধ সময় – সব মিলিয়ে সেই সন্ধ্যায় সত্যি যেন এক পুরনো দিনের দৃশ্যপটে চলে গিয়েছিলাম।
ভোরের তালিনের গায়ে রাত জাগার আলস্য জড়ানো ছিল – ঐতিহাসিক তালিনে বহু রাত পর্যন্ত টুরিস্টরা ঘোরাফেরা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে। আসলে সামারে এখানে খুব কম সময়ের জন্যে রাতের অন্ধকার হয় – রাতের দৈর্ঘ্য মাত্র কয়েক ঘণ্টা, আবার সকালও খুবই তাড়াতাড়ি হয়।
তালিন শহরের একদিক যেমন ঐতিহাসিক, আরেক দিক তেমনি ঝাঁ চকচকে আধুনিক। আর তালিনের সেই ঐতিহাসিকতা দেখতেই তো আমাদের তালিন আসা। আর সেই ঐতিহাসিক তালিন শহরে ঢোকার মুখেই স্বাগত জানায় প্রাচীন এক তোরণ ‘Viru Gate’।
প্রাচীন কালে ইউরোপের প্রায় সব শহর এক সুরক্ষা দেওয়াল দিয়ে ঘেরা থাকতো – আর তালিনের সেই সিটি ওয়ালের কিছু অংশ আজও দেখা যায়। আর, চোদ্দ শতাব্দীতে তৈরি এই ‘Viru Gate’ ছিল ঐতিহাসিক তালিন শহরে ঢোকার প্রধান দরজা, ঐতিহাসিক তালিনে এমনি আরও কয়েকটা গেট ছিল – কিন্তু, সেই অন্য গেট গুলো সম্পূর্ণ ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছিল, তাই, বর্তমানে এই ঐতিহাসিক গেট এক টুরিস্ট আকর্ষণ। এই Viru Gate ই যেন ঐতিহাসিক ও আধুনিক তালিনকে আলাদা করেছে, উনবিংশ ও একবিংশ শতাব্দীর এক বিভেদ রেখা – একদিকে আধুনিক ইমারত ও অন্যদিকে শতাব্দী প্রাচীন শহর – Viru Gate অনেকটা যেন টাইম মেশিনের দরজা।
সকালেই Viru Gate এর পাশে সারি সারি ফুলের দোকানে ফুল সাজানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে, আইভি লতার দল Viru Gate এর স্তম্ভ দু’টো জড়িয়ে, উপরে ওঠার চেষ্টা করছে, উজ্জ্বল সকালের সোনালি রোদ ঐতিহাসিক তালিনকে স্নান করিয়ে দিচ্ছে – সব মিলিয়ে এক অপূর্ব তালিন সকালের উজ্জ্বল ছবি মনে ধরে রাখি।
চমৎকার ভ্রমণ বর্ণনা।
ছবি গুলো বর্ণনাকে প্রাণবন্ত করেছে।
তবে বর্ণনা পড়ার সময় “রেস্টুরেন্ট এর রাতের” বর্ণনায় যেমন ছিল ঐরকম একটি ছবি আশা করেছিলাম।
ধন্যবাদ।