জুনের মাঝামঝি সময়ে হাওয়ায় তখনো থাকে হালকা শীতের ছোঁয়া, মনোরম এক আবহাওয়া – তুলুসবাসীর অতি প্রিয় সময়। আর ঠিক এমনি সময়েই প্রতি বছর তুলুসের গারন নদীর ঘাসে ঢাকা তীরে বসে গানের আসর – রিও লোকো (Rio Loco)।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে শুরু করে তুনিসিয়া, ইরান, ইজিপ্ট, ব্রাজিল, স্পেন, পর্তুগাল, আমেরিকা, আফ্রিকা সব জায়গার সঙ্গীত, লোকসঙ্গীত সব একই মঞ্চে – সঙ্গীতের যে কোন জাতি ধর্ম, বর্ণ, ভাষা নেই, শুধু সুর আছে, তা যেন স্পষ্ট হয়ে প্রকাশ হয় তুলুসের রিও লোকোর মঞ্চে। প্রতি বছর কোন না কোন দেশের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পীর নিমন্ত্রণ হয় এই আসরে, আবার প্রতি বছরই কোন এক বিশেষ দেশ হয় এই সঙ্গীত উৎসবের থিম – কখনো পর্তুগাল, কখনো আফ্রিকা। গত কুড়ি বছর ধরে তুলুসে এই উৎসব হয়ে চলেছে।
এই গোলাপি শহরে, বিকেলের কমলা আলো যখন নরম হয়ে সন্ধ্যার তোড়জোড় করে, গারোন ছুঁয়ে এক মিষ্টি হাওয়া বয়ে যায় – মঞ্চেও শুরু হয়ে যায় সঙ্গীত আসরের তোড়জোড়। সামনের বিশাল খোলা মাঠে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে পড়ে উপস্থিত স্রোতার দল, শান্ত এক পরিবেশ – গান শুনতেই আসা।
তুলুসে প্রথম এসে যখন এই রিও লকো উৎসবে এসেছিলাম – রিও লোকোর আকার বেশ ছোট ছিল, তুলুসের হাতে গোণা কিছু মানুষ নিয়ে অনেকটা ঘরোয়া এক উৎসব ছিল এই রিও লোকো। মাত্র কয়েক বছরেই এই উৎসব বিশাল আকার নিয়েছে, ভিড়ও খুব বেড়েছে, রিও লোকোরও জাঁক বেড়েছে।
মঞ্চে একের পর এক গান শুরু হলে, কখন যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত, রাত গড়িয়ে মাঝ রাত হয়ে যায়, বোঝাই যায় না। গানের কথা গুলো বিন্দুমাত্র না বুঝেও ওদের মিউজিকের হাই এনার্জি যুক্ত উত্তাল ছন্দে পা ফেলতে বিশেষ অসুবিধা হয় না। রাত গভীর হলে গারন নদীর বুক ছুঁয়ে আসা এক শিরশিরে ঠাণ্ডা হাওয়া এসে আমাদের কাঁপিয়ে দিয়ে যায়। ভিনদেশী সুরে মাতোয়ারা মুগ্ধ জনতা, ঠাণ্ডা এক শিরশিরে হাওয়া, গভীর রাত, আলো, মিউজিক – সব মিলিয়ে গারোন নদীর পাশে এক অদ্ভুত পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এমনি সময়ে এই জায়গায় দাঁড়িয়ে অচেনা গানের অচেনা সুরের স্রোতে গা ভাসাতেই ভালো লাগে।