আনাক্যাপ্রির নীল গুহায় (The Blue Grotto, Anacapri, Italy)

উজ্জ্বল দিনে ক্যাপ্রির সমুদ্র গুহার ভেতরে এক অদ্ভুত নীল আলো দেখা যায়  সমুদ্রের নীল জলে দিনের এক বিশেষ সময়ে সূর্যের আলোর প্রতিফলনে এক অপূর্ব নীল ও রুপোলী আলোর সৃষ্টি হয়, অন্ধকার গুহা অদ্ভুত আলোয় আলোকিত হয়ে যায়। প্রাচীন কালে এই গুহা রোমানদের সমুদ্র মন্দির হিসাবে ব্যবহার হোতো – গুহার ভেতরে পাওয়া রোমান স্ট্যাচু এখন আনাক্যাপ্রির মিউজিয়ামে দেখা যায়।

তারপর, তো বহুদিন আগে সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়ে জেলেরা সেই নীল আলোর ছটা দেখে ভয় পেয়েছিল, কি আছে গুহার ভেতরে – তা ছিল রীতিমত এক রহস্য। কেউই তখন ভেতরে যাওয়ার সাহস পায় নি। ওরা ভেবেছিল সেই গুহা বোধহয় স্বর্গের দরজা, বা শয়তানের বাস। তাই, অনেকদিন ইতালির জেলেরা সেই সমুদ্র গুহাকে এড়িয়েই যেত। কিন্তু, প্রকৃতির সমস্ত রহস্যকে মানুষ সমাধান করেই ছাড়ে।

উনিশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, একদিন, ইতালির স্থানীয় এক জেলে Angelo Ferraro, জার্মান লেখক August Kopisch ও চিত্রকর Ernst Fries কে নিয়ে ছোট নৌকোয় করে ভেতরে গিয়েছিল – আর সেই অপূর্ব আলোর ছটা দেখে মুগ্ধ হয়েছিল, ওরা জেনেছিল ঐ গুহায় কোন শয়তান নয়, প্রকৃতির অপূর্ব সৌন্দর্য বাস করে। আর সেই রহস্যময় সৌন্দর্যের গল্প চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল।

এখন এই রহস্যময় সমুদ্র গুহা  Blue Grotto বা  Grotta Azzurra আনাক্যাপ্রির প্রধান টুরিস্ট আকর্ষণ। রীতিমত টিকিট কেটে গুহায় ঢুকতে হয় – অদ্ভুত সেই নীল আলো দেখতে হলে বিশেষ দিনে বিশেষ আলোর উপস্থিতি চাই, তাই একটু মেঘলা দিন হলেই অনেকেরই ভাগ্যে শুধু কাঠের ছোট নৌকোয় শুয়ে অন্ধকার গুহার ভেতরে যাওয়াই হয়, চারপাশের প্রাচীন শ্যাওলা ধরা গুহার দেওয়াল চেপে ধরে – কেমন এক claustrophobic পরিস্থিতি, ভাবলেই যেন দমবন্ধ হয়ে যায়।

অবশ্য, ইতালির নৌকো চালকেরা খুব কম সময়ের জন্যেই ভেতরে নিয়ে যায়। খুব তাড়াতাড়ি ভেতরে নিয়ে গিয়েই ফিরিয়ে নিয়ে আসে – বাইরে ততক্ষনে বেশ কয়েকটা নৌকো যাত্রী নিয়ে অপেক্ষা করে।

পাহাড়ের উপর থেকে সমুদ্রের কাছাকাছি যাওয়ার নির্জন পাহাড়ি সিঁড়ি বাঁধানো পথে, বহু দূর থেকেই নৌকো চালক ও টুরিস্টদের চিৎকার, কলরব শোণা যায় – আর সেই কলরব অনুসরণ করেই Grotta Azzurra  র কাছে পৌঁছে যাই। প্রচুর ভাসমান নৌকো – বড় ছোট সব ধরণের নৌকো টুরিস্টদের নিয়ে সমুদ্র গুহার সামনে অপেক্ষা করে। দুপুরের দিকে কিছুক্ষণের জন্যেই এই কলরব, ব্যস্ততা – কারণ সূর্যের আলো পড়ে এলে, আর সেই অদ্ভুত আলো দেখা যায় না।

তবে, এত দূরে এসে, সমুদ্র গুহার ভেতরের রহস্যময় আলো দেখা যাক বা না যাক, তাতে খুব একটা আসে যায় না – ঐ যে এক ছোট্ট কাঠের নৌকোয় করে, মেডিটেরিয়ানের বুকে ভাসতে ভাসতে শুয়ে, এক প্রাচীন সমুদ্র গুহার ভেতরে যাওয়া হয়, তাতেই এক রোমাঞ্চ হয় – আর সেই রোমাঞ্চ অনুভবের ছাপ উপস্থিত সমস্ত টুরিস্টদের আলোকিত উজ্জ্বল হাসিমুখে লক্ষ্য করি।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Italy, Southern-Europe, Travel and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s