ইউরোপের সব জায়গায় তো বাগানের ছড়াছড়ি, তাহলে ইতালির ক্যাপ্রি দ্বীপের বাগানের কি এমন মহত্ব যে ক্যাপ্রিতে এসে টুরিস্টরা সবাই ভিড় করে লাইন দিয়ে টিকিট কেটে বাগানে ঢোকে?
আসলে ক্যাপ্রির পাহাড় চূড়ার এই বিখ্যাত বাগানকে ইতালিতে অনেকে স্বর্গীয় বাগান বলেও জানে। এখান থেকে মেডিটেরিয়ানের বুকে অদ্ভুত ভাবে জেগে থাকা তিনটে বিশাল ফারাগ্লিওনি পাথরকে খুব ভালো করে দেখা যায়। নীল সমুদ্র, পাথর – সব মিলিয়ে এক অপূর্ব দৃশ্যপট তৈরি হয় – যদিও এই বাগান থেকে দূরের সেই পাথর গুলোর আকার বেশ ছোট বলে মনে হয়, কিন্তু নীল সমুদ্রের বুকে উজ্জ্বল দিনের এই অপূর্ব ছবির মোহেই সবাই এই বাগানে ভিড় করে।
পাহাড়ের উপরের এই বাগানের রেলিং থেকেই খাড়া পাহাড় যেন সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়েছে। এখানে দাঁড়িয়ে নীচের দিকে তাকালে, দেখা যায়, বহু নীচে, তীরের কাছে এসে সমুদ্রের স্বচ্ছ জলের রং ফিরোজা হয়ে গেছে – এখানে এসে সমুদ্রের নীল-ফিরোজা রঙে নানা সময়ে কতো মানুষই না বিভোর হয়েছে।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে জার্মান ব্যবসায়ী Friedrich Alfred Krupp ক্যাপ্রির পাহাড় চূড়ায় তাঁর বাড়ীর জন্যে, সামনে এই বাগান তৈরি করেছিলেন, প্রথমে তাই এই বাগানের নাম Krupp Gardens ই ছিল – বর্তমানে এই বাগান ইতালির জাতীয় সম্পত্তি, ও বাগানের পুরনো নাম বদলে নতুন নাম হয়েছে Giardini di Augusto বা Gardens of Augustus ।
পাহাড় চূড়ার এই বাগানের পাশেই সমুদ্রের দিকে মুখ করে তৈরি এক বাড়ীতে মাক্সিম গোর্কি তাঁর জীবনের বেশ কিছুদিন কাটিয়েছিলেন – এই বাগান ছিল গোর্কির বৈকালিক ভ্রমণের জায়গা। ক্যাপ্রিতে গোর্কি থাকাকালীন সময়ে, ভ্লাদিমির লেনিন গোর্কির কাছে এসেছিলেন – তাই এই বাগানের এক পাশে লেনিনের এক ভাস্কর্য দেখা যায় – ইতালিতে যা খুবই বিরল। ইতালিতে অবস্থিত রাশিয়ার এমব্যাসির সহায়তায় এই বাগানে লেনিনের ভাস্কর্য তৈরি হয়েছিল।
যাইহোক, এই বাগানের একদিকে সমুদ্রের গায়ে পাথরের দৃশ্য, একদিকে পাহাড়ের গায়ে আঁকাবাঁকা রাস্তা Via Krupp , উজ্জ্বল দিনে বাগানে ফুটে থাকা হাজার ফুল, মানুষের ছুটি কাটানোর হালকা মেজাজ, ধীর পদক্ষেপ, নানা ধরণের মানুষের হাসি মুখে ফটো তোলা – সব মিলিয়ে মনে হয় স্বর্গীয় বাগানই বটে।
এই অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে এসে কেমন যেন এক ঘোর লাগে – এক অদ্ভুত ভালো লাগায় ছেয়ে যায় মন। সত্যি, পৃথিবীর নানা কোণে কতো অপূর্ব দৃশ্যই না ছড়িয়ে আছে, তার কতটুকুই বা আমরা দেখতে পারি, যেতে পারি? তবুও, যা দেখি যা পাই, তাই দিয়েই যেন দিনের শেষে জীবন ভরে ওঠে।