ভিয়েনা শহরের শহুরে ব্যস্ততার মধ্যেই যে এক ঝাঁক রঙিন প্রজাপতি নির্ভয়ে তাদের চঞ্চল পাখা মেলে ধরে – তা তো জানা ছিল না! অথচ, ভিয়েনার একদম কেন্দ্রেই, ভিয়েনার ঠাণ্ডা পরিবেশের মধ্যেই, প্রকৃতির সবচেয়ে সুন্দর ছোট্ট এই প্রাণীটির জন্যে তৈরি হয়েছে কাঁচের এক উষ্ণ বাসস্থান ‘Schmetterlinghaus ’ । গত শতাব্দীর শুরুর দিকে, Art nouveau স্টাইলে তৈরি পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম সুন্দর এই কাঁচঘরে প্রায় চারশো প্রজাপতির বাসস্থান। এই কাচঘরটি Hofburg রয়্যাল প্যালেসের অন্তর্গত – সেই সময়ে ইউরোপে রাজপরিবারের মধ্যে কাচঘর তৈরির খুব প্রচলন ছিল।
বাইরে যখন মাইনাস তাপমান, তুষার পাত, হিম ঠাণ্ডা – এই কাঁচঘরের ভেতরে তখন গ্রীষ্মের আবহাওয়া, আদ্রতা, উষ্ণতা। প্রজাপতিদের বাঁচা বাড়ার জন্যে উত্তম ব্যবস্থা। প্রজাপতিরা এই গ্রিন হাউসের ভেতরের উষ্ণতায় নির্ভয়ে পাখা মেলে, বংশ বৃদ্ধি করে। ভেতরে ছোট্ট ঝর্ণা, সেতু, প্রচুর গাছ পালা, রঙিন প্রজাপতি সব মিলিয়ে এক আশ্চর্য সুন্দর জগত – এখানে প্রতি মুহূর্তে এক একটি আশ্চর্য সুন্দর প্রজাপতির সঙ্গে দেখা হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা।
এখানে এসে মনে পড়ে গেল, সিকিমে আমাদের বসবাস কালে হাজার প্রজাপতির সঙ্গে প্রতিদিনই দেখা হোতো, তারা ছিল আমাদের জীবন যাপনের এক অঙ্গ। দীপাবলির কয়েকদিন আগে থেকে, প্রায় প্রতিদিন সকালে উঠে ঘরের সামনেই দেখতাম – লক্ষ লক্ষ মথ ও প্রজাপতির নিথর দেহ পড়ে আছে, কোন কোন প্রজাপতির পাখা আবার বেশ বড় ও এক একটা প্রজাপতির পাখার আবার কি অদ্ভুত সুন্দর রং। আসলে প্রজাপতির আয়ু তো মাত্র দুই মাস।
স্বাধীন প্রকৃতির মধ্যে উড়ে বেড়ানো প্রজাপতি ও কাচঘরে বন্দী প্রজাপতির ওড়ার স্বাধীনতা নিয়ে পরিবেশবিদদের মধ্যে বহু মত বিরোধ থাকলেও আমার মনে হয়, স্বাধীন পরিবেশে যখন প্রজাপতির সংখ্যাই কমে আসছে, কোন কোন প্রজাপতির প্রজাতি তো বিলুপ্তির পথে, আজকের বড় শহরের শিশুরা যখন প্রজাপতির পাখার রং, প্রকৃতির অপূর্ব খেয়াল নিজের চোখে না দেখে, ছবি এঁকেই বড় হচ্ছে, তখন কাঁচঘরের ভেতরে যদি প্রজাপতিদের সুরক্ষা দেওয়া যায় তাহলে ক্ষতি কি। স্বাধীন পরিবেশ যখন ওদের জন্যে দূষিত তাহলে কাচঘরের ভেতরের বিশুদ্ধ পরিবেশে ওরা বেড়ে উঠুক, বাঁচুক, নির্ভয়ে পাখা মেলে ধরুক।