ইউরোপের সদর দপ্তরে (EU Commission and EU Parliament , Brussels, Belgium )

বিবিধের মাঝে মিলন মহান – ইউরোপের ইতিহাসে এই কথাটার কোন মূল্যই ছিল না। ইউরোপের নানা ছোট ছোট দেশ গুলোর মধ্যে নানান যুদ্ধ বিগ্রহের ইতিহাস নিয়ে হয়তো এক সম্পূর্ণ লাইব্রেরী তৈরি হয়ে যাবে। কখনো ফ্রান্স-অষ্ট্রিয়ার যুদ্ধ, কখনো সুইডেন- ফিনল্যান্ডের যুদ্ধ, জার্মান ও ফরাসীদের যুদ্ধ, ফ্রান্স ও স্পেনের যুদ্ধ – মোটকথা, গত কয়েক শতাব্দী ধরে ইউরোপের নানান জাতি নানান ছোট ছোট যুদ্ধ বিগ্রহ নিয়ে মেতে ছিল।

এমনকি ইউরোপে সর্ব শেষ যুদ্ধের বয়সও তো একশো পেরোয় নি – তাই ঘা এখনো শুকোয়নি, বর্তমানে সেই ঘা শুকোনোর কাজটা ব্রাসেলসে বসে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। ইউরোপ বহুদিন বহু রক্ত ঝরিয়ে, বহু যুদ্ধের শেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পথ খুঁজে নেওয়ার চেষ্টা করছে।

ইউরোপের দেশ গুলোর মধ্যে সব কিছুতেই অমিল  – ভাষা থেকে শুরু করে আদব কায়দা, খাওয়া দাওয়া, মুদ্রা সবই ছিল আলাদা। অবশ্য বর্তমানে ইউরোপের সাধারণ মুদ্রা ইউরো হয়ে ইউরোপের বেশ কয়েকটা দেশ গুলোর মধ্যে অনেকটাই মিল হয়েছে।

কিন্তু, সেই মিলন খুব একটা সহজ ছিল না – আর সেই মহান মিলনের কঠিন কাজটি সম্পন্ন হয় ইউরোপের অলিখিত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক রাজধানী ব্রাসেলসে – এখানেই ইউরোপের পার্লামেন্ট। আবার এখানেই ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের কাউন্সিল ও ইউরোপিয়ান কমিশনের সদর দপ্তর। এখানেই ইউরোপের জটিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হয়।

আর যখন ইউরোপের অলিখিত রাজধানী ব্রাসেলস, তার সদর দপ্তরটির আকারও তেমনি বিশাল হবে – সে তো আন্দাজ করে নেওয়া যায়। ইউরোপের কমিশন ও ইউরোপের পার্লামেন্টের দিকটা ব্রাসেলসের সম্পূর্ণ নতুন দিক, শুনেছি, পার্লামেন্টের বাইরে ঝাঁ চকচকে চত্বরে প্রতিদিনই কোন না কোন ছোট খাটো প্রতিবাদ সভা লেগেই থাকে। পার্লামেন্ট সেশন চলাকালীন হেডফোনে ইউরোপের কুড়িটা ভাষায় প্রায় তাৎক্ষনিক অনুবাদ হয়ে যায়।

সাধারণত ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট টুরিস্টদের জন্যে খোলা থাকে, কিন্তু, আমরা যেদিন পৌঁছলাম, এক ছোট প্রতিবাদ সভা চলছিল। কিছুদূর যাওয়ার পরেই প্রতিবাদ সভার ভিড় পেয়ে গিয়ে, আর না এগোনই শ্রেয় বলে মনে হয়েছিল। তাছাড়া, বছরে একবার Europe Day (9th May) তে ইউরোপ ইন্সটিটিউট ও ইউরোপিয়ান কমিশনের সদর দপ্তর টুরিস্টদের জন্যে খুলে দেওয়া হয় – গাইডেড ট্যুর হয়।

ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টের চারিদিকে সুন্দর সাজানো শান্ত পার্ক, অক্টোবরের মাঝামঝি সময়ে পার্কের ছোট রাস্তা পাতা ঝরানোর হলুদ-কমলা রঙে রঙিন। দুপুরের খাওয়ার পরে পার্লামেন্টের অনেকেই পার্কের পথে হালকা পায়চারী করে নেয়। পার্কের পথে চলতে চলতে ইউরোপের রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে দেখা হতেই পারে। পার্কের মাঝে সুন্দর লেকে সাদা রাজহাঁসের রাজকীয় ভঙ্গি ইউরোপের অলিখিত রাজধানীর সদর দপ্তরে কর্মরত মানুষদের ব্যস্ততার ফাঁকে ক্ষণিক অবকাশ দেয়। ইউরোপের পার্লামেন্ট ও ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রধান দপ্তর দেখার ফাঁকে আমাদেরও ক্ষণিক বিশ্রামের জায়গা হয়ে যায় হলুদ-সবুজ সেই পার্ক।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Belgium, Europe, Travel, Western-Europe and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান