ফরাসী সূর্যমুখী ফুলের দেশে (Sunflower field in South of France)

উজ্জ্বল ঝকঝকে দিন, ঘন নীল আকাশ, মৃদু মন্দ বাতাস, দিগন্ত বিস্তৃত উঁচু নিচু ঢালু মাঠে ফুটে থাকা লক্ষ লক্ষ সূর্যমুখী ফুলের উজ্জ্বল সূর্যের দিকে অতি প্রত্যাশায় তাকিয়ে থাকা, আকাশে সূর্যের অবস্থানের সঙ্গে সঙ্গে লক্ষ সূর্যমুখীর দিক বদল – সব মিলিয়ে দক্ষিণ ফ্রান্সের মোহময়ী প্রকৃতি বহু যত্নে রোম্যান্টিক প্রাণোচ্ছল সামারের উজ্জ্বল এক ছবি আঁকে।

যে ছবি বহু প্রাচীন কাল থেকেই ইউরোপের বহু শিল্পী, কবি, সাহিত্যিককে প্রেরণা দিয়ে এসেছে, সেই অপূর্ব প্রকৃতির নিজস্ব ছবির টানে ফ্রান্সের কতো শিল্পী এখানেই ঘর বেঁধেছিল। আমার মনে হয়, দক্ষিণ ফ্রান্সের উজ্জ্বল সামারকে মাঠ ভরা উজ্জ্বল হলুদ সূর্যমুখী ফুলেরা আরও বেশী উজ্জ্বল, সুন্দর, রোম্যান্টিক করেছে – আর সেই অপূর্ব ছবি যেন মনকে প্রসারিত করে দেয়।

দক্ষিণ ফ্রান্সের এই অঞ্চলের পরিবেশ সূর্যমুখী ফুলের জন্যে আদর্শ পরিবেশ, ফরাসী অর্থনীতির কিছুটা অংশ সূর্যমুখীর উপরে নির্ভর করে। শীতের শেষেই সূর্যমুখী ফুল চাষের জমি তৈরি করে মেশিন দিয়ে বীজ ফেলা হয়। সূর্যমুখী ফুলের বীজ ফেলা মাত্রই মাঠে প্রচুর বুনো খরগোশ ও কাঠবেরালি হানা দেয় – মাঠ ভরে যায়, ঝুরো ঝুরো মাটিতে ফেলা সূর্যমুখী বীজ খেতে ওদের খুবই ভালো লাগে।

আগে, স্থানীয় ফরাসী চাষিরা শটগান দিয়ে ঐ বন্য খরগোশ শিকার করতো, কিন্তু, বর্তমানে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ওরা আর বন্যপ্রাণী শিকার করতে পারে না – তাই বীজ ফেলার মরশুমে বন্য খরগোশরা মহা আনন্দে সূর্যমুখী বীজ খেয়ে যায় – কিন্তু, এতো বেশী সূর্যমুখী বীজ ফেলা হয় যে হাজার হাজার খরগোশ ও কাঠবেরালি মিলে দিনে রাতে খেয়েও বীজ শেষ করতে পারে না, বীজ অঙ্কুরিত হয়ে যায় – একবার চারা গাছ তৈরি হয়ে গেলে খরগোশদের আর রুচি হয় না, গাছ বেড়ে ওঠে। এই ধরণের চাষের মূল দর্শন হল, প্রকৃতি তো আসলে সবার জন্যেই পর্যাপ্ত আহার দিয়েছে, প্রাচুর্য দিয়েছে, দিয়েছে ভালোবাসা, স্নেহ – তাই, ঐ সূর্যমুখী বীজে শুধু মানুষ কেন, বন্য পশুদেরও সমান অধিকার।

যাইহোক, সূর্যমুখী ফুলের ক্ষেতের অপূর্ব উজ্জ্বল ছবির খোঁজে তুলুস ছাড়িয়ে শুধু দুই পা ফেলে একটু গ্রামের দিকে যেতে হয়। সামারে শহর ছাড়িয়ে একটু দূরে গেলেই চোখে পড়ে উজ্জ্বল হলুদ মাঠ, কতদিন ইচ্ছে হয়েছে হলুদ মাঠের পাশে হেঁটে যাই – সেবার সামারে ঠিক সেই সুযোগই চলে এলো।

ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলে, লক্ষ লক্ষ সূর্যমুখী ফুলের উজ্জ্বল সৌন্দর্যের মধ্যে সময় কাটানো যেন স্বপ্নের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া, এমনি সৌন্দর্যের দেশে কবির মনে কবিতা জাগে, শিল্পীর তুলিতে রং লাগে, আর আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মন ভালো হয়ে যায়।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Western-Europe and tagged , , , , , , . Bookmark the permalink.

4 Responses to ফরাসী সূর্যমুখী ফুলের দেশে (Sunflower field in South of France)

  1. আপনারা কত সৌভাগ্যবান যে এমন সৌন্দর্য খুব কাছ থেকে দেখেছেন ।
    শুভেচ্ছা রইলো আপনাদের।

    • abakprithibi's avatar abakprithibi বলেছেন:

      ধন্যবাদ। পৃথিবীর নানা জায়গা দেখে মনে হয়, সম্পূর্ণ পৃথিবীই সুন্দর, শুধু আমাদের হাতেই সময় কম। আমাদের দেশে যখন হলুদ সর্ষে ফুলে মাঠ ছেয়ে যায় কতো সুন্দরই না লাগে – কিন্তু, আমরা দৈনন্দিন জীবনে এতোই ব্যস্ত যে সেই অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে, অনুভব করতে ভুলেই যাই। তাই মাঝে মাঝে, ছেলেবেলায় পড়া সেই কবিতার কথা মনে হয় –
      What is this life if, full of care,
      We have no time to stand and stare.
      No time to stand beneath the boughs
      And stare as long as sheep or cows.
      No time to see, when woods we pass,
      Where squirrels hide their nuts in grass.
      No time to see, in broad daylight,
      Streams full of stars, like skies at night.
      No time to turn at Beauty’s glance,
      And watch her feet, how they can dance.
      No time to wait till her mouth can
      Enrich that smile her eyes began.
      A poor life this if, full of care,
      We have no time to stand and stare.

      ভালো থাকবেন। শুভেচ্ছা রইলো।

      • চমৎকার মন্তব্য!

        “এই পৃথিবীর শোভা দেখার সময় যদি না ই হয়
        কেমন তর জীবন তবে, এমন জীবন জীবন নয়।” –

        (তাৎক্ষনিক আনাড়ি অনুবাদ প্রচেষ্টা। পুরো কবিতাটা অনুবাদ বা এই রকম ভাবের কিছু একটা লেখার ইচ্ছে মনে জেগেছে। দেখি মাথা থেকে কিছু বেরোয় কি না? )

        অনেক অনেক শুভেচ্ছা
        ভালো থাকুন সবসময়।

      • abakprithibi's avatar abakprithibi বলেছেন:

        ধন্যবাদ। প্রথম দুই পঙক্তি খুব ভালো হয়েছে। পুরোটা লিখুন, আপনার সম্পূর্ণ কবিতা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম। ভালো থাকুন, অনেক শুভেচ্ছা জানাই।

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান