April 2010, Venice, Italy
‘It’s too beautiful to be painted! It is untranslatable’ ভেনিসে এসে Claude Monet মোহিত হয়ে উচ্ছসিত ভাবে এই উক্তি করেছিলেন। Monet ৬৮ বছর বয়সে ভেনিসে আসেন ও এই শহরের প্রেমে পড়ে যান। তাঁর শিল্পে দিনের নানান সময়ের আলোয় ভেনিসের সৌন্দর্য ধরা পড়েছে। ভেনিসের সুন্দর দৃশ্য ছিল তাঁর প্রতিদিনের প্রেরণা। ভেনিসে থাকাকালীন প্রতিদিন তিনি নতুন ক্যানভাস শুরু করতেন এবং পরে তাঁর স্টুডিয়োতে সে’গুলো শেষ করেন।
Giverny তে থাকার সময়ে তিনি ভাবেননি যে ভেনিসে তিনি আঁকার প্রেরণা পাবেন, কারণ ভেনিস আগেও অনেক শিল্পীর তুলিতে ধরা পড়েছে। কিন্তু, এখানে এসে তিনি মন্ত্র মুগ্ধ হয়ে যান। একের পর এক ক্যানভাসে নানা রঙে তাঁর মুগ্ধতা ধরা পড়ে।
আমরা যখন পৌঁছলাম ভেনিসে তখন রক্তিম সন্ধ্যা নামছে। সন্ধ্যার সন্ধিক্ষণে রক্তিম সূর্যের রঙ ভেনিসের সবুজ জলে লাল রঙ ঢেলে দিচ্ছে। এই অপার সৌন্দর্যই ছিল ক্লদ মনের প্রেরণা। মনে হয় বাস্তবে এই সুন্দর দৃশ্য আছে বলেই শিল্পী তুলি ধরার প্রেরণা পান। শিল্পীর মনে রঙ ধরাতে বাধ্য ভেনিসের এমন সন্ধ্যা।
এই জল-শহরে সকালে অফিস যাওয়ার জন্য এখানে লোকে স্টিমার ধরে, কিংবা নিজের বোট নিয়ে স্যুট-বুট পড়ে অফিস যায়। বাড়ী থেকে নেমেই জল। আমাদের বাড়ীতে যেমন গেট থাকে এদের থাকে ঘাট, ঘাটে আবার শ্যাওলা ধরে যায়। দু’ধারে বাড়ীর মাঝখানে বয়ে গেছে সবুজ জলের গলি, সেই জলের পথ ধরে বয়ে যায় সরু নৌকো ‘গ্যান্ডোলা’। দু’ধারকে মাঝে মাঝেই জুড়ে দিয়েছে সুদৃশ্য ছোট সেতু।
Adriatic সমুদ্রের রানী এই শহর। Adriatic সমুদ্রের জল এই শহরে, তাই গ্র্যান্ড ক্যানালের দুপাশের বাড়ী গুলোর গায়ে জোয়ার ভাঁটায় জলের বাড়া কমার দাগ রয়ে যায়। প্রায় সবারই বাড়ীর সামনে ঘাটে নিজস্ব বোট বাঁধা। ষ্টীমার এই শহরের পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। এখানে নৌকোর ট্রাফিক জ্যাম হয়। শহরের বাতাসে জলের গন্ধ ভাসে। অবাক লাগে এতো পুরনো বাড়ী সমুদ্রের নোনা জলের মাঝে তৈরি হল কি করে?
পুরো শহরটাই World Heritage Site! এই শহরের মানুষের জীবন যাত্রা আর পাঁচটা সাধারণ শহরের সঙ্গে মেলে না। এই শহরের অলি গলিতে রেনেসাঁস যুগের ছাপ স্পষ্ট। কত নামে যে ইটালিয়ানদের আদরের এই জল-শহর ভূষিত হয়েছে যুগে যুগে তার ইয়ত্তা নেই। কতো চলচিত্রের দৃশ্যে যে এই শহর ঘুরে ফিরে এসেছে তার হিসাব নেই।
আমরা তিনদিনের জলযানের ভেনিস পাস কিনে নিয়েছি, তাই ষ্টীমারে চড়ে ভেনিসের যেখানে ইচ্ছে যাওয়া যায়। তাই চড়ে বসি ষ্টীমারে। জলের বুকে কখনো গ্যান্দোলা চালকের ইটালিয়ান গান ভেসে আসে।
এদের নিজের শহরে মানুষকে আকর্ষণ করার কায়দা, নিজের জিনিষ সুন্দর রাখার প্রচেষ্টা শেখার মতো। একটা খুব সুন্দর বিল্ডিঙে কাজ চলছে, কিন্তু সামনে সেই বিল্ডিঙের পুরোন ছবি টাঙ্গিয়ে ভেতরে কাজ হচ্ছে, যাতে বিদেশী টুরিস্টদের তোলা ফটোতে এই শহর সর্বদাই সুন্দর দেখায়।
শহরের মাঝে Piazza San Marco এক বিশাল স্কোয়ার। এখানে প্রচুর পায়রা টুরিস্টদের হাত থেকে খাবার নিয়ে খায়। প্রচুর টুরিস্ট। সন্ধ্যা নামছে ভেনিসে। San Marco স্কোয়ারের দু’পাশের দোকান ও রেস্টুরেন্ট গুলোয় আলো জ্বলে উঠেছে।
আমরা আবার ভেনিসের জলের বুকে সন্ধ্যা নামা দেখতে চড়ে বসলাম জলযানে। সূর্যের লাল রঙ ছড়িয়ে যাচ্ছে Adriatic সমুদ্রের মোহনায়। দূরে দেখা যাচ্ছে ক্যাথিড্রালের গোল গম্বুজ, San Marco স্কোয়ারের উঁচু চূড়া।
ভেনিসের গ্যান্ডোলা চালকের ঘরে ফেরার সুর, জলের গন্ধ, জলের শান্ত এক শব্দ, দূরে একে একে জ্বলে ওঠা আলোর রেখা আমাদের মস্তিষ্কে যেন ভালো লাগার এক রাসায়নিক বিক্রিয়া তৈরি করে। এক মুগ্ধতায় যেন আড়ষ্ট হয়ে যাই। বার বার ফিরে আসতে ইচ্ছে করে এই জল-শহরে। আমাকে যদি পৃথিবীর কোন এক জায়গায় বার বার বেড়ানোর জন্যে ফিরে যাওয়ার জন্যে বেছে নিতে বলা হয় আমি বার বার ভেনিসকেই বেছে নেব।