সুইস শহর ইন্টারলেকেনে (Interlaken, Switzerland)

সুইস আল্পসের কোলে Bernese Oberland অঞ্চলের অপূর্ব উদার সৌন্দর্যের খোঁজে যারাই সুইজারল্যান্ডের আসে, ইন্টারলেকেনে তাদের একবার আসতেই হয়। আঠারো শতাব্দীর রোম্যান্টিক যুগের শিল্পী, কবি, সাহিত্যিকদের ছুটি কাটানোর প্রিয় জায়গা ছিল এই শহর, তাঁরাই প্রথম এই শৈল শহরের সৌন্দর্য আবিষ্কার করেছিলেন – তাই এখানে প্রচুর আভিজাত্যপূর্ণ বাড়ী ও হোটেল দেখা যায়। যদিও সেইসব প্রাচীন স্থাপত্য অতীতের সুইস স্বর্ণযুগের চিহ্ন বহন করে, তবে আজকের ইন্টারলেকেনে একবিংশ শতাব্দীর আধুনিকতা ও উনবিংশ শতাব্দীর প্রাচীনতা মিলেমিশে গেছে। আজ এই শহর আথিতেয়তায় ভরা এক শৈল শহর, যেখানে সবাই স্বাগত।

চারিদিক দিয়ে ঘেরা তুষার পাহাড়, ও লেক এই শহরকে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপহার দিয়েছে, আর সেই অপূর্ব সৌন্দর্যের টানে এই শহরে প্রচুর টুরিস্ট ভিড় করে। তাছাড়া, সম্পূর্ণ সুইস সৌন্দর্যকে আবিষ্কার করতে হলে এখান থাকেই বাস বা ট্রেন নিতে হয়। ইন্টারলেকেন মূল শহরের ব্যস্ততাকে ঘিরে ছবির মতো সুইস গ্রাম, লেক Thun ও লেক Brienz মিলে এই শহরের অপূর্ব ছবি এঁকেছে, এখানে পা বাড়ালেই সৌন্দর্য।

ফেব্রুয়ারির শেষ বিকেলে যখন ইন্টারলেকেন পৌঁছলাম, পাহাড়ের ছায়া পড়ে এই শহরে যেন বেশ আগেই সন্ধ্যা নেমে গেছে। পাহাড়ের কোলে হোটেলের গায়েই সুইস আল্পস ঝুঁকে পড়েছে – হোটেলের মালিকের মুখে অভ্যর্থনার হাসি, জিজ্ঞেস করল – ‘কাল কি তোমরা সকালে বেরোবে? তাহলে আমি সকালের ব্রেকফাস্ট প্যাক করে দিয়ে দেবো।’ প্রথমে ঠিক বিশ্বাস হয় নি, তবে, ইউরোপে এই ধরণের পরিসেবা বোধহয় সুইজারল্যান্ডেই পাওয়া যায় – সত্যিই তিনি সকালে আমাদের ব্রেকফাস্ট তৈরি রেখেছিলেন – সুইস চীজ ও চিকেন দিয়ে তৈরি স্যান্ডউইচ, ফল, ডিম, ফলের রস, জলের বোতল ইত্যাদি দিয়ে ছোট্ট ঝুরিতে করে পথের জন্যে ব্রেকফাস্ট সাজিয়ে দিয়েছিল সেই হোটেলের মালিক। সুইসরা আসলে প্র্যত্যেকটি ছোট ছোট কাজ খুব যত্ন সহকারে, মনোযোগ দিয়ে করে – আর সেই সযত্ন মনোযোগের চিহ্ন ওদের সারাটা দেশেই ছড়িয়ে আছে। তাছাড়া, ওরা খুব ভালো করে জানে যে ট্যুরিজম ওদের অর্থনীতির এক শক্ত থাম।

 পথের দেখায় অচেনা দেশে অচেনা মানুষের কাছ থেকে ঐ ছোট্ট অভ্যর্থনার উষ্ণতা যে পথিককে বড়ই ছুঁয়ে যায়, হৃদয় আদ্র হয়ে ওঠে – জীবনে আর কি কখনো সেই হোটেল মালিকের উষ্ণ অভ্যর্থনাকে ভোলা যাবে? ওর কাছে হয়তো সেটা প্রতিদিনের কাজ, কিন্তু, আমাদের মতো বিদেশী ভ্রমণার্থিদের কাছে সেটাই জীবনের সঞ্চয়, ভ্রমণের স্মৃতি, ভ্রমণের গল্প, সুইস আথিতেয়তার স্মৃতি।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Switzerland, Travel, Western-Europe and tagged , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s