প্যারিস শহরের লৌহ কঠিন দর্পের প্রতীক La tour Eiffel । এই বিশাল লৌহ স্থাপত্য লোহার তৈরি শুধু এক স্তম্ভ নয়, এই স্তম্ভ ফরাসীদের শিল্প, সাহিত্য, প্রেম, প্রতিবাদ, গণ আবেগ, রোমান্টিসিজম, সংস্কৃতি, জাতীয় গর্ব, ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গেছে। প্রতিদিন সন্ধ্যে থেকেই আইফেল টাওয়ারের গায়ের হলুদ আলো গুলো জ্বলে ওঠে – দূর থেকেই সেই অপূর্ব ঐন্দ্রজালিক দৃশ্য দেখা যায়।
এই স্তম্ভ যেন প্যরিসের আবেগ। প্যারিসবাসির প্রতিবাদের ভাষা ব্যক্ত করার জায়গা এই মনুমেন্টের পাদদেশের বিশাল সবুজ মাঠ। এই শহরের বুকে ঘটে যাওয়া যে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনার গণ প্রতিবাদ কিন্তু এই স্তম্ভের পাদদেশ থেকেই শুরু হয়।
এই স্তম্ভ প্যারিস বাসীর আনন্দে আনন্দিত হয় – বাস্তিল ডে, বা নতুন বছরে প্যারিসবাসির সঙ্গে সঙ্গে La tour Eiffel ও যেন উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে, তখন এর গায়ে জ্বলে ওঠে হাজার হাজার আলো – অপূর্ব মোহময়ী হয়ে ওঠে La tour Eiffel । আবার প্যারিস বাসীর দুঃখে, অহেতুক রক্ত খরচে দুঃখিত হয় – তখন অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আলো নিবিয়ে দিয়ে শোক প্রকাশ করে, ম্রিয়মাণ হয়ে যায় প্যরিসের বড় আদরের এই লৌহ স্তম্ভ ‘La tour Eiffel’।
পৃথিবীর শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সের মানুষ প্যারিসকে যেন আইফেল টাওয়ারের জন্যেই জানে, শ্রদ্ধা করে, সমীহ করে – প্রতি বছর কতো মানুষ যে শুধু এই টাওয়ারকেই দেখতে আসে, তার সঠিক হিসাব নেওয়া খুবই মুশকিল।
প্যারিসের বুকে এক আশ্চর্য স্থাপত্য এই ‘La tour Eiffel’– আকাশের দিকে হাত বাড়িয়েও প্যারিসের বুকে বয়ে যাওয়া তীব্র হাওয়া, ঝড়ের গতি সবই দৃঢ় ভাবে সহ্য করে নেয়। শেষ বিকেলের রক্তাক্ত সূর্যাস্তের প্রেক্ষাপটে প্যারিসের আকাশ রেখাকে যেন সাজিয়ে দেয় আকাশচুম্বী এই স্থাপত্য।
অথচ 1889 World’s Fair এর সময় প্যারিসের বুকে সর্বচ্চো উচ্চতার এই লৌহ স্থাপত্যকে খাড়া করার আগে Gustave Eiffel কে সেই সময়ের প্যারিসের বহু শিল্পী , সাহিত্যিক, চিত্রকর, বুদ্ধিজীবীদের চিন্তাশীল প্রতিবাদের সম্মুখীন হতে হয়েছিল – Louvre মিউজিয়াম প্রাসাদ, les Invalides এর গম্বুজ, Arc de Triomphe, Notre Dame ক্যাথিড্রালের চূড়া – মানে প্যারিসের সমস্ত ঐতিহাসিক স্থাপত্যকে ছাড়িয়ে নিজের উচ্চতার দর্প প্রকাশ করবে কালকের এই লৌহ প্রাসাদ, তা যেন সেই সময়ের প্যারিসবাসির কাছে খুব একটা গ্রহণযোগ্য ছিল না, কেউই তখন আধুনিক এই La tour Eiffel এর উচ্চতার অহং মেনে নিতে পারেন নি।
কিন্তু, তখন La tour Eiffel এর কাজ অনেকটাই এগিয়ে গেছে, Gustave Eiffel ও স্বপ্ন দেখছেন পৃথিবীর বুকে মানুষের তৈরি সবচেয়ে উঁচু লৌহ প্রাসাদ তৈরি করার – আর আজ Gustave Eiffel এর সেই স্বপ্নের অতিকায় বাস্তব রূপের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা বিস্ময়ে নির্বাক হয়ে যাই।
Nice Photographs of Eiffel….
Thank you for the comment.