হাতে সময় খুবই কম, মাত্র পঁয়ত্রিশ মিনিট পরেই তালিন বাস স্টপ থেকে লিথুয়ানিয়া যাওয়ার বাস ছাড়বে – টিকিট বুক করা। আর এমনি সময়ে যদি এক নতুন দেশে এসে অচেনা পথে পথ হারিয়ে যায় – মনের অবস্থা কেমন হয়? মনের অবস্থা তেতো খাওয়ার মতো বা যেমনই হোক না কেন – বাসটিকে ধরার জন্যে শেষ চেষ্টা করতেই হবে, নয়তো এই অচিন দেশে রাত কাটানোর কোন জায়গাও পাবো না।
হেলসিঙ্কি থেকে জাহাজে তালিন বন্দরের টার্মিনাল ডি তে এসে পৌঁছেছি বেশ দেরীতেই। সমুদ্রে হাওয়ার দরুন সঠিক সময়ের চেয়ে বেশ দেরিতেই জাহা্জ এসে তালিন বন্দরে ভিড়ল। গুগুল তো পথ দেখিয়েছিল – যে তালিন টার্মিনাল ডি থেকে বাস স্টপ হাঁটা পথে মাত্র আটাশ মিনিট। সবই ঠিক ছিল – শুধু দেরি না হলে আমাদের কাছে প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট সময় থাকতো।
যাইহোক, জাহাজের অফিস থেকে ফ্রি ম্যাপ নিয়ে বিশাল টার্মিনালটি থেকে বেরোনোর পথে হাঁটা শুরু হল – ম্যাপটিও আবার রাশিয়ান ভাষায় লেখা। মহা মুশকিল – যে গুটিকয় লোক জাহাজ থেকে নেমেছিল তারা যে সবই স্থানীয়, সবাই নেমেই যে যেদিকে পারে ছড়িয়ে গেছে। বহু কষ্টে এক জনকে পথে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞেস করলাম – সে আবার না পারে ইংরেজি, না ফরাসী। তবে একটু ভাঙ্গা স্প্যানিশ পারে। ওর আকার ইঙ্গিতে যা বুঝলাম – সম্পূর্ণ ভুল দিকে হাঁটছি। একে সময় কম, তার উপরে প্রতিটি ভুল পদক্ষেপ আমাদের লক্ষ্য থেকে আরও দূরে নিয়ে চলেছে ও আরও সময় নষ্ট করে চলেছে। এই সময়ে আবার এদিকে স্থানীয় বাস ও ট্রাম দুই-ই বন্ধ হয়ে গেছে।
শহরের পথে হাঁটতে হাঁটতে বার বার শঙ্কা হচ্ছে – ঠিক দিকে চলেছি তো? রাস্তা খুবই ফাঁকা, জুলাইয়ের শেষ বিকেলে তালিনের পথে লোক জন প্রায় নেই বললেই চলে। আর গুটিকয় যে কয়েক জন চোখে পড়ছে – সবাই নিজের খেয়ালে হেঁটে চলেছে। বিদেশে সবাইকে তো আর রাস্তা জিজ্ঞেস করা যায় না। আমাদের আবার রাস্তা জিজ্ঞেস করার কয়েকটা অলিখিত নিয়ম আছে – দেখে দেখে ভালো মানুষ গোছের লোক খুঁজে, যাকে দেখে অনেকটা বিশ্বাস যোগ্য বলে মনে হয় তাকেই রাস্তা জিজ্ঞেস করি, পারলে ইউনিফর্ম ধারী, বা মহিলা। কে জানে, কার মাথায় কি কুমতলব থাকতে পারে। আমাদেরই এক বন্ধু ইতালিতে এক জনকে রাস্তা জিজ্ঞেস করেছিল – সেই মানুষটি বন্ধুটিকে এক সম্পূর্ণ জনহীন প্রান্তরের দিকে রাস্তা দেখিয়ে দিয়েছিল, জানি না, সেই মানুষটি জেনে, না, না জেনে করেছিল এই কুকর্ম। পরে বন্ধুটি, এক পুলিশকে দেখে জিজ্ঞেস করে সঠিক রাস্তা খুঁজে পেয়েছিল।
চলবে
Excellent