মুরিশ দুর্গ পাহাড়ে (Castillo de Gibralfaro, Malaga, Spain)

মেডিটেরিয়ান সমুদ্র যেমন আন্দালুসিয়ান শহর মালাগাকে ছুঁয়ে স্নিগ্ধ কোমল করেছে, তেমনি মালাগার পাহাড় শ্রেণী মালাগাকে করেছে রুক্ষ, পাথুরে। আর মালাগার এই রুক্ষ পাহাড়ের গায়েই গড়ে উঠেছিল মুরিশ সভ্যতার সোপান – যার ছাপ আজও ছড়িয়ে আছে এই শহরের কোণে। ঐতিহাসিক মুরিশ স্থাপত্যের নিদর্শন না থাকলে যেন আন্দালুসিয়ার শহরগুলোই অসম্পূর্ণ।

যে পাহাড়ের উপরে Castillo de Gibralfaro অবস্থান করে, পাহাড়টি মালাগার পাহাড় শ্রেণীর অন্তর্গত। মালাগার আলকাজাবার খোলা চত্বর বা মালাগা শহরের বড় রাস্তা থেকে এই পাহাড় ও উপরের উঁচু দুর্গটি দেখা যায়। আলকাজাবা থেকে আবার পাথরে বাঁধানো আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথ চলে গেছে  Castillo de Gibralfaro র দিকে।  929AD তে তৈরি এই দুর্গ Gibralfaro কথাটির মানে হল – Rock of Light।

সম্ভবত পাহাড়ের উপর থেকে দূর সমুদ্রের জাহাজদের পথ দেখানোর জন্যে তৈরি হয়েছিল এই দুর্গ। পরে চতুর্দশ শতাব্দীতে গ্রানাডার সুলতান Yusuf এক, এই দুর্গকে আরও প্রসারিত করে, উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দিয়ে, দুই দেওয়ালের মাঝে সরু চলার রাস্তা তৈরি করে ও পাহাড়ি পথে আলকাজাবার মূল প্রাসাদের সঙ্গে যুক্ত করে দেয় এই প্রাসাদকে। উঁচু এই দুর্গ শুধুই যে লাইট হাউসের কাজ করতো, ভেতরের বড় কামান দেখে তা মনে হয় না। শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্যে, নজর রাখার জন্যে, পাহারা ও মুরিশদের সুরক্ষার জন্যেও এই দুর্গের যথেষ্ট অবদান ছিল বই কি।

জুনের মাঝ দুপুরের তপ্ত সূর্যের দহন উপেক্ষা করে অনেকেই দেখি পাথুরে পথে Gibralfaro র পাহাড়ি পথে এগিয়ে চলেছে। অবশ্য মালাগা শহর কেন্দ্র থেকে বাস একদম Gibralfaro র দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়। আমরা তাই বাসই নিলাম, ফেরার সময় শুধু ঢালু পথ ধরে নেমে যাবো।

Gibralfaro ক্যাসলের ভেতরে এক ছোট্ট মিলিটারি মিউজিয়ামে সাজানো তৎকালীন যুদ্ধ বিগ্রহের কিছু সাজ সরঞ্জাম, বড় কামান, বাগান ইত্যাদি দেখে দুর্গের ছাদে গিয়ে নীল মেডিটেরিয়ান সমুদ্র ও মালাগার অপূর্ব শ্বাসরুদ্ধকর দৃশ্যে স্তব্ধ হয়ে গেলাম। ভোঁ দিয়ে এক বিশাল সাদা জাহাজ মালাগা বন্দর ছাড়ল – পেছনে তাড়া করে গেল সাদা ফেনা – মালাগা বন্দর শহরের ব্যস্ততা, Montes de Malaga র পাহাড় শ্রেণীর অপূর্ব দৃশ্য দেখতে দেখতে যেন কোন এক অন্য স্বপ্ন জগতে হারিয়ে গেলাম। হঠাৎ মাঝ সমুদ্র থেকে উঠে এলো এক ঝাঁক কুয়াশা, চোখের সামনেই দেখলাম, সম্পূর্ণ মালাগা কুয়াশায় লুকিয়ে গেল  – মাঝ দুপুরে এমনি কুয়াশা?

শুনলাম, মালাগার আবহাওয়ার নাকি এমনি বৈশিষ্ট্য, কিছুক্ষণের মধ্যেই হাওয়ায় উড়ে যাবে এই রহস্যময় কুয়াশা, পাশের এক টুরিস্ট বলে উঠল – মিস্টিরিয়াস মিস্ট, এই মিস্ট হালকা ভিজিয়ে দেয় কিন্তু বৃষ্টি আনে না, এ ঠিক মেঘ নয়। সত্যি তাই, দেখি কিছুক্ষণের মধ্যেই সব ফর্সা, আবার ঝলমলে দিন, এখুনি যে কুয়াশা আক্রমণ করেছিল, কেউই বিশ্বাস করবে না।

যাইহোক, এখানে এসে মনে হল জীবন যদি স্মৃতির পটে জীবনেরই ছবি হয় তাহলে, মালাগার এই দুর্গ চূড়ায় – ইতিহাস নয়, ভগ্ন প্রাসাদ নয়, মুরিশ সভ্যতার খোঁজে নয় – শুধু মালাগা ও মেডিটেরিয়ানের অপূর্ব দৃশ্যের জন্যে, ছবির জন্যে একবার এখানে আসা আমাদের সার্থক হল।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Southern-Europe, Spain, Travel and tagged , , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান