আবিষ্কারের স্বর্ণযুগের প্রতীক (Torre de Belém, Lisbon, Portugal)

আবিষ্কারের স্বর্ণ যুগে পর্তুগীজ নাবিকেরা যখন পৃথিবীর কোন এক অচিন দেশ আবিষ্কারের নেশায় বা ব্যবসার জন্যে জাহাজ নিয়ে পাড়ি দিত মাঝ সমুদ্রে, পৃথিবীর নানা দিকে – হয়তো কতো নাবিকের চোখের সামনে এই বালেম টাওয়ারের চূড়া ছোট হতে হতে মিলিয়ে যেত, নাবিকদের চোখের সামনে হারিয়ে যেত মাতৃভূমির শেষ ছবি টুকু।

আবার যে নাবিকেরা বানিজ্য শেষে, অচেনা পৃথিবীর খোঁজ নিয়ে, জাহাজ নিয়ে ফিরে আসতো Tagus নদীর অভি মুখে, লিসবনের দোর গরায় – দূর থেকেই এই বালেম টাওয়ারের চূড়া সেই বহু দিন ঘর ছাড়া নাবিকদের হয়তো দিত – মাতৃভূমির উষ্ণতা, ঘরে ফেরার আনন্দ। হয়তো, দূরে মাঝ দরিয়ায় কোন এক জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে ঘর ছাড়া কোন এক পর্তুগীজ নাবিক দূরবীনে চোখ রেখে বালেম টাওয়ারের চূড়া দেখে দেশে ফেরার আনন্দে, ঘরে ফেরার আনন্দে উচ্ছ্বসিত হত। পর্তুগালের রাজা John II এর তৈরি এই টাওয়ার যুগ যুগ ধরে এই টাওয়ার কত পথ হারা নাবিককে পথ দেখিয়েছে, লিসবন শহরকে দিয়েছে সুরক্ষা।

ষোড়শ শতাব্দীর শুরুর দিকে পর্তুগীজ গথিক বা Manueline স্টাইলে সাদা পাথরে তৈরি পর্তুগীজ স্বর্ণ যুগের স্তম্ভ এই বালেম টাওয়ারকে পর্তুগালের এক প্রতীকই বলা যায়। নদীর দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা এই স্তম্ভের সারা গায়ে স্বর্ণ যুগের নানা চিহ্নের ছবি আঁকা, আর নদীর দিকের খোলা জানালায় দেখা যায় বিশ্বাসের প্রতীক ‘Our Lady of Safe Homecoming’ এর স্ট্যাচু – যে প্রতীক নাবিকদের নিরাপদে ঘরে ফিরে আসার অভয় দেয়, যে প্রতীক নাবিকদের অভিযানে মাঝ সমুদ্রে সুরক্ষা দেয়।

আজ ঐতিহাসিক এই বালেম টাওয়ারকে সুরক্ষা দিয়েছে ইউনেস্কো। Tagus নদীর বুকে এক ছোট্ট দ্বীপে এই স্তম্ভ তৈরি হয়েছিল, কিন্তু আঠারো শতাব্দীতে পর্তুগালে ভয়ানক ভূমিকম্পে Tagus নদীর প্রবাহ বদলে যায়। নদী গ্রাস করে দ্বীপটিকে, কিন্তু জলের উপর মাথা উঁচু করে এই বালেম টাওয়ার নিজের গায়ে জলের দাগ বয়ে নিয়ে আজও দৃঢ় ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।

মাঝ জুলাইয়ের শান্ত শেষ বিকেলে, বালেম টাওয়ারের খোলা রেলিং এ দাঁড়িয়ে কানে আসে, শতাব্দী প্রাচীন এই স্তম্ভের গায়ে Tagus নদীর হাজার ছোট ছোট ঢেউ ভাঙ্গার এক জলীয় শব্দ। বালেম টাওয়ারের গায়ে পশ্চিমের হেলে যাওয়া সূর্য অদ্ভুত এক সোনালি মায়াবী আলো ফেলে এক অপূর্ব ছবি তৈরি করে, যেন পর্তুগালের স্বর্ণ যুগের কথাই মনে করায়। টাওয়ারের গায়ে আলো আর জলের আঁকিবুঁকি চলে অনন্ত কাল ধরে – আমরা সেই অনন্ত কালের এক ক্ষণিক মুহূর্তের সাক্ষী হই।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Portugal, Travel and tagged , , , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান