কোথাও বিজয় তোরণ যুদ্ধ জয়, শহীদ স্মরণের জন্যে তৈরি হয়েছে – কিন্তু, লিসবনের এই বিজয় তোরণ, আঠারো শতাব্দীর ভয়ানক ভূমিকম্পে লিসবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পরে লিসবনকে পুনর্গঠনের দৃঢ়তাকে প্রকাশ করে, লিসবন বাসীকে সেই পুনর্গঠনের আনন্দকে, মনোভাবকে স্মরণ করায়।
ইউরোপের অনেক শহরেই দেখেছি শহর কেন্দ্রের এক বিশাল বিজয় তোরণকে ঘিরে শহরের জীবনযাত্রা স্পন্দিত হয়। লিসবন শহরের প্রাণও যেন Rua Augusta রোড ও পথের শেষে এই বিশাল বিজয় তোরণ Rua Augusta Arch কে ঘিরেই স্পন্দিত হয়। শুধুমাত্র পথচারীদের জন্যে এই পথ। তাই, সাদা ও কালো মার্বেল পাথরে তৈরি এই পথে প্রচুর টুরিস্ট ভিড় করে। সাদা পাথরের এই পথে আবার কালো পাথর দিয়ে নানা ধরণের নক্সা আঁকা – পথ চলতে চলতে বিদেশী পথচারীদের সেই দিকে নজর পড়তে বাধ্য।
শুধু তাই নয়, লিসবনের অতীত ইতিহাস জেনে নিতে, ভূমিকম্পের পরে এই বিজয় তোরণের জন্ম কথা জেনে নিতে, উপর থেকে লিসবন শহরের ও Tagus নদীর অপূর্ব দৃশ্য দেখতে হলে লিফটে চড়ে একদম বিজয় তোরণের চূড়ায় পৌঁছে যাওয়া যায়। তবে, অনেক সময়ই ঐতিহাসিক সেই লিফটের মেরামত চলে।
এই রোড ও বিজয় তোরণ সিনেমাতেও দেখা গেছে। গালিভার’স ট্র্যাভেলস সিনেমাতে গালিভার যখন লিলিপুটের দেশে পৌঁছে গেল, লিলিপুটরা গালিভারের অজ্ঞান দেহকে লিসবনের Rua Augusta র এই বিশাল বিজয় তোরণ পার করে নিয়ে এসেছিল তাঁদের রাজ্যে।
লিসবনের প্রধান দুই স্কোয়ারকে জুড়েছে এই পথ, দু’পাশে সমস্ত বড় ব্যান্ডের শো রুম থেকে ছোট স্যুভেনিরের দোকান, রেস্টুরেন্টে, কফি শপে, মিউজিকে, হকারে, প্রচুর টুরিস্টের আসা যাওয়ায় এই জায়গা জমজমাট। যে কোন বিকেলেই ভিড় উপছে পড়ে – লিসবনে এসে একবার এই পথে না এলে যে অনেক কিছুই দেখা, অনুভব বাকি রয়ে যায়। তাই, এই শহরের উষ্ণতার ছোঁয়াচ পেতে, সংস্কৃতি ও অতীত ইতিহাসের টুকরো কথা জেনে নিতে হালকা পায়ে, ছুটির মেজাজে লিসবনের সেই আন্তর্জাতিক জনস্রোতে মিশে যাই।