মাদ্রিদে শহরের মধ্যেই যে চত্বর অতীতের কোন এক সময়ে স্পেনের মানুষকে ষাঁড়ের লড়াই (বুল ফাইট), জন সাধারণের সামনেই অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড, খেলা, বা রাজ অভিষেক দেখার জন্যে আকৃষ্ট করত আজ সেই চত্বর মাদ্রিদের মানুষের দৈনন্দিন জীবন যাপনের সঙ্গে অতি সাধারণ ভাবে মিশে গেছে, হয়ে উঠেছে এক স্বাভাবিক অঙ্গ।
আজ এই চত্বর এলাকা প্রচুর টুরিস্ট ও স্থানীয় মানুষের আসা যাওয়ায় ব্যস্ত, প্রাণোচ্ছল। এখানে এলে এই স্কোয়ারকে ঘিরে চারিদিকের রেস্টুরেন্ট আর কফি শপে এক প্রানচঞ্চল শহুরে আমেজ অনুভব করা যায়। আজও এই চত্বর ক্রিসমাস মার্কেট থেকে শুরু করে মাদ্রিদের সারা বছরের যাবতীয় উৎসব মুখরতায় ভরপুর।
সতেরো শতাব্দীর তৈরি বিশাল এই স্কোয়ারের চারিদিকের বাড়ী গুলো প্রথমে কাঠের ছিল, কিন্তু ঐ সময়েই তিন, তিন বার আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যায়। অবশ্য প্রতিবারই নতুন করে তৈরি হয়েছিল। শেষে Juan de Villanueva র তৈরি নক্সায় আজকের এই স্থাপত্য খাড়া হয়েছিল।
এই স্কোয়ারের নাম বহু বার বদলাতে বদলাতে, বর্তমানে প্লাজা মেওর নামেই পরিচিত। শহরের নয় দিক দিয়ে এই স্কোয়ারে ঢোকার রাস্তা আছে। স্কোয়ারে ঢুকে প্রথমেই যে উঁচু স্থাপত্য নজর কাড়ে, তা হল Casa de la Panaderia – মাদ্রিদের পৌর ও সাংস্কৃতিক ভবন। সামঞ্জ্যস্য পূর্ণ আকাশ মুখী দুই সূচলো চারকোণা চূড়া এই স্থাপত্যের দর্প প্রকাশ করে। তাছাড়া, লাল রঙের এই বিল্ডিঙের গায়ে গায়ে রঙিন ফ্রেস্কো টুরিস্টদের দৃষ্টি কেড়ে নিতে বাধ্য।
রাজা Philips III এর সময়ে এক সাধারণ বাজার অঞ্চলকে এই ধরণের এক স্কোয়ারে রূপান্তরিত করা হয়, যার চারদিক ঘিরে মানুষের বাড়ী ও সব বাড়ীর বেলকনি স্কোয়ারের দিকে মুখ করে আছে। তাই, প্লাজা মেওর স্কোয়ারের একদম মধ্যে রাজা Philips III এর ঘোড়ায় চড়া ব্রোঞ্জ মূর্তি আধিপত্য করে আজও।
বিকেলের দিকে এই চত্বরে এসে নানা রকম মানুষের ভিড় ও তাঁদের ব্যস্ততা দেখাও যেন ভ্রমণেরই অঙ্গ। এই চত্বরে নতুন শহর, নতুন দেশের মানুষ ও তাদের জীবনযাত্রার ঝলক যতটুকু পারি দেখে নিয়ে, ওদের সংস্কৃতি ও ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে, অনুধাবন করে শহরের অন্য দিকে পা বাড়াই।
অনুভব করি, জীবন এক একমুখী যাত্রা, কিংবা ঘড়ির কাঁটা – সর্বদাই এক দিকে ঘোরে, ভবিষ্যতের দিকেই ধায়। এই যাত্রায় ঘড়ির কাঁটা কখনোই পেছনের দিকে ঘোরে না। তাই চলে যাওয়ার আগে যতটুকু সময় পাই, যতটুকু পারি নিংড়ে নিতে চাই জীবনের সুধা টুকু।