মোনাকো – ছোট্ট দেশটির এক প্রান্তে মেডিটেরিয়ান সমুদ্রের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে খাড়া পাহাড়, আর সেই পাহাড়ের গায়ে এক্সোটিক গার্ডেনের এক দিকে প্রাগৈতিহাসিক সময়ের এক গুহা ‘The Observatory Cave’ আছে। গুহাটি মাটির নীচে নেমে গেছে প্রায় তিনশো সিঁড়ি, সমুদ্রের নোনা জল চুইয়ে এসে গুহার ভেতরটা অনেকটা স্যাঁতস্যাঁতে করে দিয়েছে।
যদিও গুহাটি জনসাধারণের জন্যে খুলে দেওয়া হয়েছিল ১৯৫০ এই, কিন্তু বিশেষজ্ঞ গাইড ছাড়া ভেতরে যাওয়া নিষেধ। পথ হারিয়ে গুহার গোলক ধাঁধায় ঘুরতে ঘুরতে খুব বেশী সময় এখানে থাকলে হয়তো দম বন্ধও হতে পারে। তাই গুহার গাইডকে অনুসরণ করাই নিয়ম এখানে। দলছুট হলেই মুশকিল।
প্রতি এক ঘন্টা পরে পরে এক একটি ছোট দল নিয়ে গাইড ভেতরে যায়। এক সঙ্গে অনেকে ঢুকে পড়লে ভেতরে অক্সিজেনের অভাব হতে পারে, তাই এই ব্যবস্থা। আবার, ভেতরে মাত্র আধ ঘণ্টাই থাকা যায়, আধ ঘণ্টার মধ্যেই গাইড দলের সবাইকে গুহা দেখিয়ে বের করে নিয়ে আসে। আধ ঘণ্টার বেশী থাকলেও ভেতরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যেতে পারে।
ভেতরে কেমন এক বহু পুরনো ভ্যাঁপসা স্যাঁতস্যাঁতে গন্ধ ও গরম। ফেব্রুয়ারির ঠাণ্ডা কোন ভাবেই অনুভূত হয় না এখানে। সারা বছর ধরে নাকি গুহার ভেতরে প্রাকৃতিক ভাবেই একই তাপমাত্রা বজায় থাকে।
গুহার ভেতরে তো দিনের আলো ঢোকে না, তবে ভেতরে জায়গায় জায়গায় আলোর ব্যবস্থা করা আছে। আর সেই হলুদ আলোতে গুহার ছাদ থেকে অনন্ত কাল ধরে চুইয়ে চুইয়ে পড়া জল থেকে তৈরি stalactite ও stalagmite পাথরের স্তম্ভ গুলো কেমন এক আবছায়া পরিবেশ তৈরি করেছে। এখনো বিশাল আকারের গুহাটির নানা দিকে কাজ চলছে, মানে সেই অংশ গুলোতেও সিঁড়ির বন্দোবস্ত করা হচ্ছে, পিছল রাস্তা ঠিক করে বাঁধিয়ে দিচ্ছে, কিছু সংরক্ষণেরও কাজ চলছে।
এখানে প্রায় আড়াই লক্ষ বছর আগের প্রাগৈতিহাসিক মানুষের বসবাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। গুহার কোণে কোন এক প্রাণীর কিছু হাড়গোড় সেই প্রমান বয়, অনুমান করা হয় যে প্রাগৈতিহাসিক মানব সেই প্রাণী শিকার করে খেয়েছিল। আর সেই হাড় পরীক্ষা করে জানা গেছে গত আড়াই লক্ষ বছর ধরে মেদিটেরিয়ানের তীরে এই গুহার ভেতরে আবহাওয়া কি ভাবে পরিবর্তিত হয়েছে।
হাসি মুখে গাইডটি খুবই উৎসাহের সঙ্গে গুহার সমস্ত অলি গলি ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতে ক্রমাগত গুহাটির গল্প বলে চলেছে। বোঝা যায়, মানুষটি এই গুহার প্রতিটি কোণ নিজের হাতের তালুর মতোই জানে।