রাতের বার্সিলোনায় (Barcelona, Spain)

 

ইউরোপের যে কোন শহর রাতে যেন আরও বেশী মোহময়ী হয়ে ওঠে, যেমন তার আলোক সজ্জা, তেমনি তার রূপের ছটা, তেমনি তার রহস্যময়তা। বার্সিলোনার কেন্দ্র Plaza de España  আলোয় ঝকঝক করছে, দিনের শেষে শহর অন্য রূপে সেজেছে। দিনের আলোয় যা চোখ এড়িয়ে যায় রাতের আলোর মায়ায় তা আরও বেশী প্রকট হয়, আরও বেশী রহস্য ঘন হয়। স্পেনের Catalonia  অঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর বার্সিলোনা, তাই এই শহর সর্বদাই জম জমাট, প্রাণ চঞ্চল, আলোকিত। পৃথিবীর যে কোন বড় শহর মনে হয় চোর ছ্যাঁচড় থেকে শুরু করে বিদ্বান পণ্ডিত, ব্যবসায়ী সবারই গন্ত্যব্য।

বার্সিলোনা আসার আগে অনেকেই সাবধান করেছিল – খুব সাবধান, প্রচণ্ড পকেটমার বার্সিলোনায়। কখন যে পকেট কেটে নেবে বুঝতেই পারবে না, ইত্যাদি সাবধান বানী শুনে শহরের ভেতরে প্রথম থেকেই সাবধান ছিলাম। Plaza de España থেকে মেট্রো নিয়ে আমাদের হোটেলে ফিরতে হবে, বেশ রাত হয়ে গেছে।

মেট্রোর সিঁড়ি দিয়ে যখন নামছি, আমাদের সঙ্গে একদল ছেলে – মেয়ে ও মহিলা পুরুষ ও নামলো, সিঁড়ি দিয়ে নামার সময়েই হঠাৎ মনে হল পিঠের ক্যামেরার ব্যাগের চেনটা মনে হয় খুলে গেছে। ঠিক তাই, সামনে এনে দেখি অর্ধেকের বেশী চেন খুলে ফেলেছে আমার পেছনের দলের কেউ একজন।

Plaza de España  মেট্রো ষ্টেশন শহরের ব্যস্ত তম ষ্টেশন, লোক থিক থিক করছে, এক দু’জন পুলিশও ঘোরা ফেরা করছে, ট্রেন আসতে দেরি আছে। আমি দেখতে পাচ্ছি আমাদের ঘিরে রেখেছে সেই সিঁড়ির মহিলা পুরুষের দল, নিজেদের ভাষায় কথা বলছে, ক্যামেরার ব্যাগ আঁকড়ে দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ এক চাইনিজ মেয়ে এগিয়ে এসে আমার কানে কানে বলল – খুব সাবধান, পেছনের লোক গুলো চোর, তোমাদের টার্গেট করছে, ওরা পুলিশদেরও পাত্তা দেয় না।

বুঝলাম, মেয়েটি বহুদিন ধরে বার্সিলোনায় আছে, ওদের ভাষা বুঝে গেছে ও এশিয়ান রক্তের টানে সাবধান করতে এসেছে।

ট্রেন আসার সময় যাত্রীদের মধ্যে এক হুড়ো হুরি পড়ে যায়, কোন কামরায় উঠতে পারবো সেই চিন্তায় অনেকেই ট্রেনের সঙ্গে একটু এগিয়ে যায়। ট্রেন থামা মাত্র পেছনের চোরের দল আমাকে এক ধাক্কা দিয়ে সামনের খোলা কামরার দিকে এগিয়ে দিল। চোরের ধাক্কায় যথারীতি ট্রেনে চেপে পড়লাম। আমরা যে চোর দলের টার্গেট, মনে হয় অনেকেই বুঝতে পেরেছে, অফিস ফেরত লোক বেশ কটমট করেই ওদের দিকে দেখছে – কিন্তু কিছু বলছে না।

সেই চোর দল আমাকে চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে এক অহেতুক ভিড় সৃষ্টি করার চেষ্টা করছে। ওদের লক্ষ্য কোন রকমে আমার ক্যামেরার ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পরের ষ্টেশনে নেমে যাওয়া। মেট্রোর মাইকে পরের ষ্টেশন ঘোষণা করা মাত্র ওদের দলে এক তৎপরতা লক্ষ্য করলাম, চারিদিক থেকে আমাকে আরও চেপে ধরার চেষ্টা – বাসে বা ট্রামে অনেক ভিড় থাকলে মানুষেরা যেমন গায়ে গায়ে  দাঁড়ায় তেমনি আরকি, অন্য দিকের জায়গা কিন্তু ফাঁকা। আমার চারিদিক ঘিরেই ভিড়টা তৈরি করেছে ওরা – আমি কোন দিকে যাব বুঝে উঠতে পারছি না।

পরের ষ্টেশন চলে এসেছে, ট্রেন থেমে গিয়ে অটোম্যাটিক দরজা খোলার ঠিক আগের মুহূর্তে বাম হাতে এক হ্যাঁচকা টান অনুভব করলাম। আমার সঙ্গীটির এক হ্যাঁচকা টানে এক ঝটকায় ওদের দলের মাঝ খান থেকে বেড়িয়ে এলাম, আর সেই চোর দল হুড়মুড় করে মেট্রো থেকে নেমে গেল। ট্রেনের দরজা বন্ধ হয়ে গেল, আর ওদের হতবাক মুখ গুলোর সামনে দিয়ে ট্রেন পরের গন্ত্যব্যের দিকে পাড়ি দিল। আমরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Spain, Travel and tagged , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান