তুলুসের জীবনের প্রতিদিনের ছন্দে রবিবার এক যতি। কোন রবিবারে সকাল থেকেই উজ্জ্বল দিনের শুরু হয়। সেদিন লাল ইটের শহরটি যেন আরও বেশী সুন্দর, উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। রবিবারে তুলুস বাসি বা টুরিস্ট অনেকেরই গন্ত্যব্য ক্যাপিটলের কিছু দূরে লাল ইটের তৈরি বেসিলিকা St-Sernin । বিগত দিনের বহু ইতিহাসের সাক্ষী নিয়ে, অষ্টভুজ আকারে এগারো শতাব্দীর তৈরি এই St-Sernin চার্চ বিশ্বের সবচেয়ে বড় Romanesque চার্চ, যা কিনা আজও দাঁড়িয়ে আছে। UNESCO World Heritage Sites এর অন্তর্গত এই চার্চ তুলুসের এক প্রতীক।
এই St-Sernin চার্চ এর নীচে প্রতি রবিবার বাজার বসে। বয়স্ক তুলুসিয়ানরা চার্চে প্রার্থনার শেষে রবিবারের বাজারে টহল না দিয়ে, পাশের কফি শপের কফির কাপে এক চুমুক না দিয়ে, বাজারের জন জীবনের ছবি না দেখে – দিন শুরু করে না। অনেকে তো বাজারের পাশের কফি শপে এসে বাজারের মানুষ দেখতে দেখতে সকালের খাবার খায়। এক নিশ্চিন্ত, উজ্জ্বল, অলস ছুটির আমেজকে তাড়িয়ে তাড়িয়ে অনুভব করে এখানের মানুষ।
উজ্জ্বল সোনালি দিনে এগারো শতাব্দীর চার্চের প্রেক্ষাপটে এই বাজার এক ঐতিহাসিক পরিবেশ তৈরি করে, বাজারের মানুষের গুঞ্জন, বেচা কেনা, ব্যাপারীর চিৎকার – এই সব নিয়ে যায় এক অন্য পৃথিবীতে। বাজার মানুষের জীবন যাত্রার এক অবিছ্যেদ্য অঙ্গ, শত শতাব্দী ধরে মানুষ বেচা কেনা করে এসেছে। বলা যায়, মানুষের সবচেয়ে প্রাচীন পেশা বা নেশা বাজারের ব্যবসা, বিকি কিনি।
এই বাজারের অনেকটা আন্তর্জাতিক রূপ আছে, ব্যবসায়ীরা যে শুধু ফ্রেঞ্চ তা নয়। এন্টিক জিনিস থেকে শুরু করে বই পত্র, আফ্রিকান কিম্ভূত কাঠের মূর্তি, নানা দেশের পতাকা, চাইনিজ জিনিস সবই স্থান পায় এই হরেক মালের বাজারে, এমনকি চোরাই সাইকেলও নাকি পাওয়া যায়। যেহেতু, ছাত্রদের শহর এই তুলুস, ছাত্ররা অনেকেই সাইকেল চালায়, এবং বহু সাইকেল চুরিও যায়। ছাত্র মহলে অনেকেই বলা বলি করে যে পরে সেই চুরি যাওয়া সাইকেল, St-Sernin এর রবিবারের বাজারে আবিষ্কার করা গেছে।
St-Sernin চার্চ এর এই বাজারে যত না মানুষ কেনাকাটি করতে আসে, দেখতে আসে শত গুণ। শুধু চোখের দেখাই নয়, শহরের চলমান জীবনের ছবি ক্যামেরার চোখে দেখতে সকালেই বহু টুরিস্ট হাজির।
পৃথিবীর বুকে কেনা কাটির, বিকি কিনির এই খেলা বোধহয় অন্তহীন। তুলুস রবিবারের চলমান জীবনের প্রতীক এই বাজার।