ছেলেবেলায় যখনই ছবি আঁকায় বাচ্চাদের হাতে খড়ি হয়, বাচ্চারা পাহাড়, নদী, গাছ, পাখি আর ছোট্ট কুঁড়ে ঘর আঁকে, যে ঘরের চাল আবার তিনকোণা – বাস্তবে যদি নাও দেখে তবুও বাচ্চারা যেন কল্পনার চোখ দিয়েই এক সুন্দর ছবি আঁকে। সুইজারল্যান্ডে এসে মনে হয় ভগবান বুঝি বা পৃথিবী সৃষ্টির সময় সেই শিশুসুলভ নিষ্পাপ সৌন্দর্যের ছবি আঁকতেই বসেছিলেন, তিল তিল করে তাঁর হাতের অলৌকিক রঙ তুলি দিয়ে কল্পনার সমস্ত সৌন্দর্য ভরে দিয়েছেন এই সুইস দেশের আনাচ কানাচ । যেদিকে তাকাই তাঁর আঁকা ছবির প্রশংসা না করে পারি না।
আমাদের কাছে সুইস রেলের পাস, অফুরন্ত সময় – যে কোন ষ্টেশন দেখেই যদি মনে হয় এখানে নেমে গেলে কেমন হয়, দ্বিতীয় বার না ভেবেই নেমে পড়ার অবাধ স্বাধীনতা। ছোট্ট, শান্ত, হালকা কুয়াশা বা মেঘের আড়ালে মুখ ঢেকে দাঁড়িয়ে থাকা রেল ষ্টেশন Wilderswil দেখে মনে হল এখানেই নেমে পড়ি। কেমন এক শান্ত, শীতল হাতছানি এই রেল ষ্টেশনের।
ছোট্ট অথচ আধুনিক ট্যুরিজম শিল্প সুইস দেশের প্রতিটি কোণায় কোণায়, প্রতিটি পাহাড়ের চূড়ায়, সুইস দেশে বোধহয় অগম্য জায়গা বলে কোন জায়গা নেই, সব জায়গায় আধুনিক অথচ আদিম সৌন্দর্যের হাতছানি।
Wilderswil থেকে funicularরেল পথ পৌঁছে দেয়Schynige Platteতে। এখানে এসে Schynige Platteরেলপথের যাত্রা শেষ হয়, ট্রেন গুলো এখানেই একটু জিরিয়ে নিয়ে শ্বাস নিয়ে আবার ছুটে যায় Wilderswilসীমানায়, পাহাড়ের ওপারে। সহজ যাতায়াত ব্যবস্থার জন্যে পাহাড়ের সীমানায় প্রচুর হোটেল, রিসোর্ট তৈরি হয়ে যায়, কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের সময় ট্যুরিজম শিল্পে ঘাটা পড়ে যায়, কিন্তু এখন আবার ট্যুরিজম নতুন ছন্দে ফিরে এসেছে এই সুইস পাহাড়ের ওপারে। সুইস পাহাড়ের পাকদণ্ডী দিয়ে হাঁটার জন্যে নানা দিক থেকে টুরিস্ট এখানে এসে জমায়েত হয়, নির্জনতার খোঁজে ফিরে আসে বহু মানুষ।
সবুজ পাহাড় চূড়ায় থমকে থাকা মেঘের পটভূমিকায় কুয়াশা ঘেরা সকালে সম্পূর্ণ অচেনা এই সুইস গ্রামের পথ ধরে হেঁটে যেতে যেতে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়, এক অচেনা অদ্ভুত আনন্দে দ্রবীভূত হই, শিহরিত হই। কি সেই আনন্দ জানি না, হয়তো নতুন পথে চলার আনন্দ, অচেনাকে চেনার আনন্দ – কে জানে। কিংবা শুধুই – আমার এই পথ চলাতেই আনন্দ…।