এখানে হঠাৎ রহস্যময় অলৌকিক কুয়াশায় ঢেকে যায় পর্তুগালের মুরিশ ইতিহাসের পাতা, মুরিশ সাম্রাজ্যের ভগ্ন প্রাসাদ। Sintra র পাহাড়ের উপরে 8th থেকে 9th century তে তৈরি এই মুরিশ প্রাসাদ ‘Castelo dos Mouros’ এর রহস্যময় ও আচমকা কুয়াশার আড়ালে এখনও যেন মুরিশ রাজাদের ক্ষুধিত আত্মা ঘুরে ফেরে।
পর্তুগালের এই ছোট্ট ঐতিহাসিক শহর Sintra বহুদিন ধরে ইউরোপের নানান কবি সাহিত্যিক, পর্তুগিজ রাজ পরিবার – সবার মন মুগ্ধ করেছে তার অপূর্ব ভৌগলিক সৌন্দর্যের জন্যে। 18th century তে Lord Byron এখানে কিছুদিন কাটিয়েছিলেন। তাঁর ভাষায় “perhaps in every respect the most delightful in Europe,” তাঁর কবিতায় Sintra কে “glorious Eden” বলে সম্বোধন করেছিলেন। আজ UNESCO এই প্রাসাদের সৌন্দর্য সযত্নে রক্ষা করছে।
সকালে লিসবনে যখন ট্রেনে চেপেছিলাম দিনটি খুব সুন্দর রোদ্র উজ্জ্বলই ছিল, Sintra য় পৌঁছে দেখি চারিদিক কুয়াশায় ঢাকা। জুলাইয়ের এই সময়ে পর্তুগালের পাহাড়ি অঞ্চল Sintra র আবওহাওয়া নাকি হঠাৎ এমনি করেই বদলে যায়। আচমকা কুয়াশায় চারিদিক ঝাপসা করে দেয়। আকাশের মুখ ঘন কালো, মনে হচ্ছে এক্ষুনি ঝেঁপে বৃষ্টি আসবে।
এমনি এক আঁধার ঘেরা ভেজা দিনে ছোট্ট রেল ষ্টেশনে আলো জ্বালিয়ে টুরিস্ট অফিসের একটা দরজা খোলা দেখে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ করে নিলাম। একটা ম্যাপ ও বাসের টিকিট নিয়ে Sintra শহর কেন্দ্রের দিকে রওনা দিলাম। পাহাড়ের সবুজের কোলে ছোট্ট চার্চ, সাধারণ মানুষের ছবির মতো সুন্দর বসত বাড়ী, কাফে, রেস্টুরেন্ট, দোকান ইত্যাদি নিয়ে এক শান্ত ছোট্ট শহর এই Sintra। বাস প্রথমে ‘Castelo dos Mouros’ ও পরে Pena Palace নিয়ে যাবে।
Castelo dos Mouros ঘিরে বিশাল প্রাচীর, প্রাচীরের ওপারে খাড়া পাহাড় নেমে গেছে নীচে। প্রাচীরের চারিদিকে ও নীচে জঙ্গলের মাথায় কুয়াশা আটকে আছে। ঘন কুয়াশায় আশেপাশের কিছুই যে দেখা যায় না, এমনকি প্রাসাদের চূড়া ও গম্বুজ কুয়াশায় মুখ লুকিয়েছে, এক রহস্যময় পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঐতিহাসিক প্রাসাদ ঘেরা পাহাড়ি জঙ্গুলে বাগানের মধ্যের আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ঝেঁপে বৃষ্টি এলো। কোন রকমে পাথরের এক গুহায় মাথা বাঁচিয়ে আবার পাহাড়ি পথ ধরে হাঁটতে লাগলাম। এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা, এমন ঐতিহাসিক জঙ্গলে ঘেরা জায়গায় আগে কখনো বৃষ্টি ও কুয়াশা এক সঙ্গে দেখার অভিজ্ঞতা ছিল না, তাই এখানের এই পরিবেশে বৃষ্টি বেশ উপভোগ করলাম। যদিও কুয়াশা সমস্ত কিছুই ঢেকে রেখেছিল, কিন্তু, এখানের পরিবেশে অদ্ভুত নির্জন এক মিস্টিক অনুভূতি ছড়িয়ে ছিল।
Castelo dos Mouros এর আনাচে কানাচে, পাথুরে দেওয়ালের প্রতিটি পাথরে প্রকৃতি আপনমনে তাঁর বিস্তার করে চলেছে। বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে জঙ্গলের বুনো গন্ধে যেন এক আদিম প্রকৃতি জেগে ওঠে এই প্রাসাদের চত্বরে। আর সেই আদিম প্রকৃতির কোলে ঐতিহাসিক প্রাসাদের সৌন্দর্যের টানে, ভ্রমণের টানে পৃথিবীর নানা দিক থেকে মানুষ আজও ফিরে ফিরে আসে।