মোনালিসার মুচকি হাসি (Mona Lisa, Louvre museum, France)

মোনালিসার ছবির সামনে এতো ভিড় যে আমি হারিয়েই গেলাম। ল্যুভরে মিউজিয়ামে ঢুকেই সবাই বোধহয় মোনালিসার ছবির ঘরের দিকেই যায়। এক ঝলক মোনালিসাকে দেখা ও ফোটো তোলার জন্যে জাপানি ও আমেরিকান টুরিস্টদের লড়াই দেখার মতো।

ভারী ক্যামেরা এক হাতে উপরে তুলে ফটো তুলতে গিয়ে খর্বাকায় জাপানিরা বেশীরভাগ সময়েই উচ্চ আমেরিকানদের মাথার পেছনের ছবি তুলে ফেলে নিজের ভাষায় বিড় বিড় করে পুনরায় ছবি তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। ঠেলা ঠেলি ধাক্কা ধাক্কি ক্রমাগত চলছে, ফ্রেঞ্চ সিকিউরিটি গার্ড কিছুতেই ভিড় সামাল দিতে পারে না। আমিও ভিড়ের ছন্দ বুঝে নিয়ে ভিড় ঠেলতে ঠেলতে কোন রকমে মোনালিসার সামনে গিয়ে ফটো তোলার চেষ্টা করলাম।

একবিংশ শতাব্দীর মানুষের এই ধরণের অস্থিরতা দেখে বুলেট প্রুফ কাঁচের ভেতরে সযত্নে সুরক্ষিত মোনালিসা শতাব্দী কাল ধরে মুচকি হেসেই চলেছে। মোনালিসার মুচকি হাসির রহস্য জানতে বহুদিন ধরে বহু গবেষণা হয়ে চলেছে। রসিকতা করে কেউ বলে দাঁতের ব্যাথায় কাতর মোনালিসা Leonardo da Vinci কে ছবি আঁকার পোজ দিতে গিয়ে হাসার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিলেন, ফল হয়েছিল ঐ রহস্যময় বিখ্যাত মুচকি হাসি।  অনেকে তো মোনালিসার হাসির উপরে গবেষণাও করেছে।

Leonardo da Vinci র আঁকা অন্যান্য ছবির মধ্যে মোনালিসা ছবিটি কেন বিখ্যাত হল সেও এক রহস্য।  ল্যুভরে মিউজিয়াম থেকেই মোনালিসা দিনে দুপুরে চুরি গিয়েছিল। মোনালিসা ছবি চুরির কেস ইউরোপে এতোই আলোড়ন তুলেছিল যে, শার্লক হোমসকেও মোনালিসা ছবি চুরির কেস সমাধান করতে হয়েছিল।

পরে জানা গেল, ইটালিয়ান Vincenzo Peruggia ল্যুভরে মিউজিয়ামে কাজ করতো, ওর মতে ইতালির শিল্পীর আঁকা ছবি ইতালির মিউজিয়ামেই প্রদর্শিত হবে, ফ্রান্সে নয়। আসল চুরি যাওয়ার পরে মোনালিসার নকল তৈরি হয়ে, আসল মোনালিসার দাম আরও বেড়ে গিয়েছিল। সেই সময় মোনালিসাকে খোঁজার জন্যে ল্যুভরে অনেকদিন বন্ধ ছিল, কিন্তু কোন খোঁজ পাওয়া যায় নি। দু’ বছর ইউরোপে নিজের বাড়ীতে মোনালিসাকে লুকিয়ে রাখার পর Peruggia ইতালির এক মিউজিয়ামে যখন মোনালিসা বিক্রি করতে যায়, ধরা পরে যায়। ইতালির নানান মিউজিয়ামে প্রদর্শিত হওয়ার পর মোনালিসা ফ্রান্সে ফিরে আসে।

ল্যুভরে ফিরেও মোনালিসার শান্তি নেই, মোনালিসাকে অ্যাসিড ছুঁড়ে মারা হয়, ছবির এক কোণা অ্যাসিডে পুড়ে যায়। পরে আবার এক মহিলা পাথর ছুঁড়ে মারে মোনালিসাকে – হাতের রঙ একটু চটে যায়, অবশ্য পরে ঠিক করে নেওয়া হয়। শোনা যায়, একবার নাকি বুলেটও মারা হয়েছিল মোনালিসাকে। এমনকি, সাম্প্রতিক কালে (১৯৭৪) টোকিও ন্যাশনাল মিউজিয়ামে প্রদর্শন কালে মোনালিসাকে উদ্দ্যেশ্য করে লাল রঙ ছুঁড়ে মারা হয়।

ল্যুভরে কর্তৃপক্ষ আর ঝুঁকি না নিয়ে মোনালিসাকে বুলেট প্রুফ কাঁচের ভেতরে সুরক্ষিত করেছে। মোনালিসার ঘরে শুধু যে মোনালিসা আছে তা নয়, মোনালিসার ঠিক উল্টো দিকে দেওয়াল জোড়া Veronese এর আঁকা ছবি  ‘The Wedding Feast at Cana’ – এই ছবিতে যীশুর জল থেকে ওয়াইন তৈরির গল্প আঁকা। তাছাড়াও এই ঘরের অন্যান্য দেওয়াল জুড়ে ইতালিয়ান শিল্পীর আঁকা অপূর্ব ছবি আছে, কিন্তু সবার নজর মোনালিসার ভুবন ভোলানো মুচকি হাসির দিকেই।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s