ঘট ঘটাং করে বিকট আওয়াজ করতে করতে লিসবনের হেরিটেজ ট্রাম যখন Castelo de São Jorge যাওয়ার কোবল স্টোনে বাঁধানো সরু রাস্তা (cobbled streets) ধরে কচ্ছপ গতিতে যায়, পথচারী টুরিস্টরা সভয়ে বা সম্ভ্রমে কিংবা নিতান্তই কৌতুকের মুচকি হাসি হেসে সরে দাঁড়ায়।
জুলাইের শেষ, সকাল থেকে ভালোই চড়া রোদ উঠেছে। ম্যাপ নিয়ে স্থানীয় এক পথচারীকে জিজ্ঞেস করা মাত্রই বলে দিয়েছিল – কাস্তেলো? ঐ ট্রাম নিয়ে সোজা উপরে চলে যাও। ট্রাম থেকে নেমে দেখবে সরু রাস্তা উপরের দিকে গেছে। ঐ রাস্তাই তোমাদের কাস্তেলোতে নিয়ে যাবে।
Castle কে পর্তুগিজ ভাষায় কাস্তেলো বলে। পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই Castelo de São Jorge বা Castle of São Jorge মুরিস আমলে তৈরি প্রাসাদ। পর্তুগিজ ইতিহাসের এক অন্যতম অধ্যায় মুরিশ আক্রমণ ও অবস্থান ও রাজত্ব। পর্তুগালের চারিদিকেই তাই মুরিশ রাজত্বের নিদর্শন ছড়িয়ে আছে।
ট্রামের শেষ স্টপ ‘কাস্তেলো’য় নেমে যে সরু পথটি উপরের দিকে গেছে সেদিকে চলা শুরু হল। উজ্জ্বল দিনে প্রচুর টুরিস্ট ক্যাসেলের দিকেই হাঁটছে, তাই পথ চিনে নিতে কোন অসুবিধা হল না।
ক্যাসলে এসে বোঝা গেল তখনকার সময়ে কেন ইউরোপের রাজা মহারাজারা পাহাড়ের উপরেই প্রাসাদ তৈরি করতো। এখান থেকে লিসবন শহর ও Tagus নদীর উদার বিস্তৃত দৃশ্য দেখা যায়।
এই পাহাড়ে যদিও দুর্গের অস্তিত্ব পাওয়া গিয়েছিল 2nd century BC তে, কিন্তু এই বিশাল দুর্গ প্রাসাদ তৈরির পেছনে কিন্তু মুরিস অবদান। সেই সময়ে দুর্গের ভেতরেই এক ছোট খাটো শহর তৈরি হত। এখনেও দেখছি এক ছোট টুরিস্ট শহর তৈরি হয়ে গেছে। চা, কফি, আইসক্রিম থেকে শুরু করে লিসবনের যাবতীয় স্যুভেনিরের দোকান ইত্যাদি সব নিয়ে এক ছোট্ট শহরই যেন বসে গেছে প্রাসাদের ভেতরে।
প্রাসাদের খোলা চত্বরে দাঁড়ালে নদীর বুক ছুঁয়ে হু হু হাওয়া উড়িয়ে নিয়ে যেতে চায়। জুলাইয়ের গরমের ছিটেফোঁটা এখানে অনুভব হয় না। শীতের জড়তা কেটে গেলেই গরমের সময়ে ইউরোপের চারিদিকে যেন টুরিস্টের ঢল নামে। এখানেও প্রচুর টুরিস্ট। স্বচ্ছ দিনে নানা রঙের ভিড়ের মাঝে এক ঐতিহাসিক জায়গায় অতীত ও প্রকৃতির মধ্যে হারিয়ে যেতে কার না ভালো লাগে?