আমার বাগান বেলকনি (Balcony Garden)

চকমিলান দর দালান, জাফরি কাঁটা জানালা, উঠোন, বাগান ইত্যাদি এখন শুধুই চলচিত্রেই দেখা যায়। সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার পরিধি ছোট হতে হতে, ছোট হতে হতে দু’তিন কামরার ঘরে এসে ঠেকেছে। যে কোন বড় বড় শহরে, শেষে হয়তো সেই গল্পের নায়কের মত জীবিত মানুষকেই ছয় ফুট জমি নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে, বাঁচতে হবে। শহরের ভেতরে ঐটুকু জায়গাও মহার্ঘ্য। তবে একটুকরো খোলা বেলকনি যেন এই শহুরে জীবনের বদ্ধতাকে মুক্তি দেয়। তবে মনে হয়, শহরের সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হতে চাইলে সেই বদ্ধতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াই যায় – যদি একটুকরো বেলকনি থাকে। তুলুসে এসে প্র্যতেক বাড়ীতে ফুল দিয়ে বেলকনি সাজানোর বাহার দেখে মন ভরে গেল।

আমার এই বাড়ীতে বেলকনি দেখে তাই আমার ভেতরের আদিম মানুষটির আদিম কৃষক প্রবৃত্তি জেগে উঠল। মানুষের সবচেয়ে আদিম পেশা কিংবা নেশা বোধহয় –চাষ। মাটিতে বীজ ফেলে অঙ্কুরিত সেই চারা দেখার আনন্দ বোধহয় সমস্ত পৃথিবীর মানুষই সমান ভাবে অনুভব করে। গরম এলেই তাই আমিও বেলকনির মাটি তৈরি করে বীজ ফেলি। গত কয়েক বছর ধরে নানান ভাবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে কখনো গাঁদা, কসমস ইত্যাদি ফুল ফোটানোর পালা চলেছে।

ঐটুকু জায়গায় যে ফুল ফোটে জায়গাটুকু যথেষ্ট আলো করে তোলে। এমনকি ওপর তলার বয়স্ক ভদ্রলোক ভদ্রমহিলার সঙ্গে লিফটে কিংবা লবিতে দেখা হলেই হেসে বলবেন – তোমার বাগানে দেখছি খুব সুন্দর ফুল হয়েছে।

সেবার ভাবলাম এবার একটু অর্থনৈতিক চাষ করা যাক। একটু সবজি করার চেষ্টা করি। শুরু করলাম টোম্যাটো দিয়ে। বাজারের কেনা টোম্যাটোর বীজ ফেলে দিলাম, সঙ্গে মটরও লাগিয়ে দিলাম। গরমের দিনের দৈর্ঘ্য এখানে লম্বা, এই সময় প্রতিদিন অফিস থেকে এসে চারাগাছ গুলোতে জল দেওয়া এক নতুন কাজ। কিছুদিনের মধ্যেই দেখি চারা গুলো তর তর করে বেড়ে উঠে ফুল দিয়ে ফলও দিয়ে দিল। প্রায় দেড়কিলো টোম্যাটো ও দু’কিলো মটরশুঁটি হয়েছিল সেই গরমে। কিছু মটরশুঁটি উপরের ভদ্রলোককে গিয়ে দিয়ে এলাম। উনি ইতালিয়ান ওনার স্ত্রী ফ্রেঞ্চ , হেসে বললেন – তোমার পরিশ্রম আমি অনেকদিন ধরে ওপর থেকে দেখছি। বাঃ বেশ ভালো মটরশুটি হয়েছে তো!

এখানে গরম পড়লেই সুপারমার্কেটে যেন বাগান করার জিনিসের, নানান ফলের চারা, সবজির বীজ, নানান রকম মরশুমি ফুলের বীজের ঢল নামে। নিতান্তই বেরসিকেরও ইচ্ছে হবে একটু ফুলগাছ লাগাতে। এবার আবার ফুলের দিকেই মন চলে গেল। লাল গ্ল্যাডিলার বীজ এনে লাগালাম। অনেকেই বলল – হবে না। কিন্তু, ধৈর্য ও অপেক্ষার এক দাম আছে। যথারীতি ঠিক সময়ে প্রতিটি গাছে ঝেঁপে ফুল এলো। নীচে ফুলের দোকানিও দেখে হেসে বলল – খুব ভালো হয়েছে – বেল ফ্লুর। ভেতরের সেই আদিম চাষিটির ছাতি গর্বে ফুলে ওঠে, উত্তরে এক আত্মগর্বের মুচকি ‘হাসি’দি।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Memory-Lane and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান