তুলুসের যোগাযোগ ব্যবস্থা (Toulouse Transport System)

Toulouse, France

প্রতিদিন ভোরের আলো ফোঁটার আগে থেকেই তুলুসের নানান শিরা উপশিরায় বাস, মেট্রো, ট্রাম সবই চলা শুরু হয়ে যায়। রাতের কয়েক ঘণ্টার বিশ্রামের পর তুলুস যেন নব উদ্যোমে জেগে ওঠে। তুলুসের  আশেপাশের বা দূর দুরান্তের বহু গ্রামের সঙ্গে বাসের যোগাযোগ খুবই ভালো, অথচ এখানের বাসের যোগাযোগ ব্যবস্থা যত ভালো ততই বাসে লোকজন কম। অবশ্য গত কয়েক বছর ধরে দেখছি পরিবেশ সচেতন ফ্রেঞ্চ ছাত্র ছাত্রিরা বাসে, ট্রামে বা মেট্রোতে যাতায়াত করছে।

প্রথম তুলুসে এসে চমৎকার নীল রঙের বাসের কারিকুরি দেখে তাক লেগে গিয়েছিল। ছাত্র জীবনে ভিড় বাসে বাদুড় ঝোলা করে যাতায়াত করতে অভ্যস্ত আমরা। গরমে ঘেমো কন্ডাকটরের চিৎকার করে জায়গার নাম শুনতে অভ্যস্ত আমরা। যে কোন একটা খালি সিট দেখলে ভিড় বাসে ভদ্রতা শালীনতার ধার না ঘেঁসে ঝাঁপিয়ে পড়ে দখল নেওয়ার জন্যে হুড়োহুড়ি করতে অভ্যস্ত আমরা, দৈনিক বাস যাত্রাকে এক যুদ্ধের পর্যায়ে ভাবতে অভ্যস্ত আমরা – ঝকঝকে ফ্রেঞ্চ বাস সিস্টেম দেখে, ফ্রেঞ্চ বাস ড্রাইভারদের শালীনতা বোধে তাক লাগবে বৈ কি।

বাসে ওঠার সময় যাত্রীদের দিকে মিষ্টি হেসে ‘বজু’ মানে ‘সুদিন’ ও নেমে যাওয়ার সময় ‘অফ বা’ মানে ‘বিদায়’ বলে সম্বোধন করার রেওয়াজ তো আমাদের দেশের বাস ড্রাইভারদের নেই – তাই প্রথমদিকে একটু আশ্চর্য লেগেছিল। ফ্রেঞ্চ সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রচণ্ড ভদ্রতাবোধ, শালীনতা বোধ। প্রতিটি স্তরের মানুষ ন্যুনতম শিক্ষায় শিক্ষিত। এখানের অনেক সুন্দরী বাস ড্রাইভারদের যে কোন সময় মডেল বলে চালিয়ে দেওয়া যেতে পারে। শুধু কি মহিলা ড্রাইভার! পুরুষ ড্রাইভারদের পরিপাটি পোশাক আশাক, চাল চলন কোন অংশে পাইলটের চেয়ে কম নয়। ঘড়ির কাঁটায় কাঁটায় শীতাপনিয়ন্ত্রিত বাসের স্বয়ংক্রিয় দরজা বন্ধ করে  অনেকটা এরোপ্লেনের মতোই এরা বাস ছাড়ে।

তুলুসের বাস যাত্রার কথা লিখতে লিখেতে রণের কথা মনে এলো। রণ এক ছোট্ট ছেলে, ওর বাবা মায়ের সঙ্গে তুলুসে থাকতো, এখন ওরা ফিরে গেছে দেশে। ছোট্ট ছেলে রণ তুলুসের নীল বাস চড়তে খুবই ভালো বাসতো, বাস থেকে নেমেই আশ্চর্য হয়ে বাসের চাকা দেখত – হয়তো ভাবতো ওর খেলনা বাসের চাকা এতো বড় নয় কেনো? ছুটির দিনে ওর বাবা-মা ওকে নিয়ে প্রায়ই বাস চড়তো। এক ছুটির দিনে ওদের সঙ্গে অনেকক্ষণ থেকে ফেরার সময় ওরা বাস স্ট্যান্ড এ রণ সহ আমাদের বিদায় জানাতে এলো। যখন বাসে চাপলাম রণ তীরের মত চলন্ত বাসের পিছু পিছু ছুটে এলো বাবা মা কে ছেড়ে, ওর  চোখে সেদিন এক শূন্য দৃষ্টি ছিল, অনেকটা ঠিক – যাঃ, ওরা এতো ভালো জিনিস করতে পারছে, আর আমি বাবা মায়ের সঙ্গে ঘরে ফিরবো?

গত কয়েক বছরে তুলুসকে অনেক বাড়তে দেখেছি। দেখেছি কি ভাবে তুলুসের যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও আরও উন্নতি হয়েছে। এখন শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ঝাঁ চকচকে ট্রাম সর্পিল লাইন ধরে ছুটে চলেছে। প্রতিটি ছোট্ট ছোট্ট জিনিসে এখানের কতৃপক্ষের কড়া নজর, যেমন, দুই ট্রাম লাইনের মাঝের জায়গায় সুন্দর করে ঘাস লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে, মনে হয়, যেন সবুজ কার্পেটের উপর দিয়ে ট্রাম ছুটছে। শহরকে সবুজ দিয়ে মুড়ে দিতে তুলুসের কতৃপক্ষ সদা ব্যস্ত। তুলুসের যাতায়াত ব্যবস্থার নতুন এই সংযোজন তুলুস বাসীদের সত্যিই আকর্ষণ করেছে। অফিস সময়ে ট্রামে রীতিমত ভিড় হতে দেখেছি।

শহরের মধ্যে টুরিস্টদের জন্যে ছোট্ট বিনামূল্যের বাস ঘুরে বেড়ায় – la navette, হাত দেখালেই থেমে যায়, বয়স্ক টুরিস্ট বা তুলুসবাসিদের জন্যে অতি উত্তম ব্যবস্থা। তাছাড়া, এখন শহরকেন্দ্রের এক প্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্ত যাওয়ার জন্যে ফ্রি বড় বাসও আছে।

অবশেষে, অতি অবশ্যই মেট্রো তুলুসের হৃত্স্পন্দন। হলুদ ড্রাইভার বিহীন স্বয়ংক্রিয় মেট্রো দুরন্ত বেগে ছুটছে প্রতি পাঁচ মিনিট অন্তর অন্তর। তুলুসের মেট্রো ষ্টেশনের এক ভালো দিক হল – প্রত্যেক মেট্রো ষ্টেশনে মেট্রো লাইন কাঁচ দিয়ে বন্ধ, শুধু স্বয়ংক্রিয় দরজাই খোলে মেট্রো এলে। কেউ চাইলেও মেট্রো লাইনে ঝাঁপ দিতে পারবে না। উন্নত দেশের সরকারের তরফ থেকে জনজীবনকে সহজ করার এই প্রয়াস দেখে উন্নতিশীল দেশের এই সামান্য প্রতিনিধির একটু হীনমন্যতা হয় বৈ কি।

http://www.youtube.com/watch?v=WWQUjX0wQ0U

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

2 Responses to তুলুসের যোগাযোগ ব্যবস্থা (Toulouse Transport System)

  1. Sarasij Das's avatar Sarasij Das বলেছেন:

    Tram line-r majhe ghash laganor idea ta darun ……age kokhono dekhini ………. darun lagche …….

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান