এল ডোরাডোর খোঁজে (Carcassonne, France)

April 2009,Carcassonne, France

কারকাসন ট্রেন ষ্টেশন থেকে বেড়িয়ে কিছুদূর হেঁটে গেলেই ওদ নদীর ওপারে কারকাসনের মনোরম নয়নাভিরাম রূপকথা-প্রাসাদ দূর থেকে দেখা যায়। দূর থেকে দেখে মনে হয় কেমন যেন এক আদিম রহস্য জড়িয়ে আছে ক্যাসলের আনাচে কানাচে, উঁচু পাথুরে দেওয়ালে, ছুঁচোল গথিক গম্বুজে।

বিগত দিনের মানুষেরা পৃথিবীর বুকে কত মহান সৃষ্টিই না করেছে আর সেই সৃষ্টিকে আজকের দিনে সঠিক মর্যাদা দিয়ে পরবর্তী প্রজন্মের জন্যে বাঁচিয়ে রাখছে ইউনেস্কো। কারকাসনের এই ক্যাসলও ইউনেস্কো হেরিটেজ ঘোষণা করেছে। প্রতি বছর বহু টুরিস্ট দক্ষিণ ফ্রান্সের এই রূপকথা ক্যাসলের টানে ভিড় করে এখানে।

শোণা যায়, এক সময় দক্ষিণ ফ্রান্সের কারকাসনে অঞ্চলের পাহাড়ে সোনা পাওয়া যেত। এতোই সোনা ছিল এই অঞ্চলের পাহাড়ের পাথরে যে জমির উপরেই সোনা পড়ে থাকতো, সূর্যের আলোয় পাথর, মাটি চকচক করতো। অনেকেই এই অঞ্চলের পাহাড়ে পাহাড়ে সোনা খুঁজতে যেত । অবশ্য সে অনেক আগের কথা – প্রায় 300 B.C কাছাকাছি সময়ের কথা। তবে সেই সময়ের বন্ধ সোনার খনি এখনো আছে কারকাসনে।

কারকাসনের ইতিহাসে Cathars ধর্মীয় সম্প্রদায় এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল। বলা হয় ওরা alchemy র গুপ্ত ফর্মুলা জানত ও প্রচুর সোনা তৈরি করেছিল। সেই সময়, মানে ১২ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে ফ্রান্সের ইতিহাসের এক সমৃদ্ধ সময় ছিল এবং ইউরোপে ধর্মীয় সহনশীলতা ছিল, ইহুদি ক্যাথলিক ও Cathars রা শান্তি পূর্ণ ভাবে থাকতো।

পরে ইউরোপের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতার আগুন Cathars সম্প্রদায়কে পুড়িয়ে মারে। আজও কারকাসনের অনেক আদি বাসিন্দারা বিশ্বাস করে আলকেমিস্ট Cathars রা মারা যাওয়ার আগে এই অঞ্চলের পাহাড়ে ওদের সোনা দানা লুকিয়ে রেখেছিল। এক সময় নাকি অনেকেই এখানে সোনা খুঁজতে আসত।

যাইহোক, বিশাল দেওয়াল দিয়ে ঘেরা এই ক্যাসল যেন প্রাচীন এক ছোট শহর। প্রায় দু’হাজার বছর পুরনো এই দুর্গ-প্রাসাদ সেই সময়ের ইউরোপিয়ান মিলিটারি সুরক্ষার এক আশ্চর্য নিদর্শন, ডাবল পাথুরে দুর্গ দেওয়াল দিয়ে মজবুত সুরক্ষা আজও মানুষকে আশ্চর্য করে। তখনকার সময়ে শত্রুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্যে শহর ঘিরে কাঠের তৈরি বিশাল দেওয়াল থাকতো, পরে আরও মজবুত সুরক্ষার জন্যে পাথরের দুর্ভেদ্য মোটা দেওয়াল তৈরি করেছিল তখনকার মানুষ, যা কিনা আজও সমান মজবুত।

ক্যাসলে ঢোকার মুখে টিকিট কাটার সময়ে এক ছোট রেকর্ড দেওয়া হয়, ক্যাসলের ভেতরে নানান জায়গায় সেই রেকর্ডে ইতিহাস শুনতে শুনতে হাঁটতে হাঁটতে যেন পিছিয়ে যাই বহু যুগ, বিচরণ করি মধ্য যুগের সেই মহিমান্বিত সময়ে। উঁচু উঁচু গম্বুজাকার টাওয়ারে ছোট গোলা বারুদহীন কামান আজও আক্রমণ কারীদের দিকে তাক করে রাখা। প্রতি বছর ১৪ জুলাই – ফ্রান্সের জাতীয় দিনে এই ক্যাসল আলোর ফুল ঝুড়ি দিয়ে সাজে।

ছোট জানালা দিয়ে চোখ রেখে নজরে পড়ে দিগন্তের পাইরেনিস পাহাড় শ্রেণী ও আজকের কারকাসন শহরের বিস্তৃত সীমানা। চৈত্রের দুপুরে ক্যাসলে হাঁটতে হাঁটতে ক্যাসলের খোলা বারান্দায় এসে দাঁড়াই। পাইরেনিস পাহাড় ছুঁয়ে হু হু মাতাল হাওয়া চুল এলো মেলো করে দেয়। আজও কি মানুষ এখানে সোনার খোঁজে আসে? কে জানে?

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, France, Travel and tagged , , , , , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান