এবার ব্রাসেলসে (Brussels, Belgium)

October 2013, Brussels,  Belgium

অক্টোবরের মাঝামাঝি। হাওয়ার তীব্র কনকনে ঠাণ্ডার স্পর্শ হাড় কাঁপিয়ে দেয়। সন্ধ্যার মুখে যখন বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলস পৌঁছলাম আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢাকা, সঙ্গে ঝির ঝির বৃষ্টি আর তেমনি ঠাণ্ডা। রাজধানী শহর, কিন্তু, লোকজন যেন একটু কম। লোকজন ঘরে ঢুকে নিজেকে গরম করে নিচ্ছে এমন দিনে। একে শীতের বেলা ছোট, তার উপরে আবার বৃষ্টি, কেমন যেন ভুতুরে মনখারাপ জড়িয়ে আছে শহরটির বুকে।

ব্রাসেলস ট্রেন ষ্টেশনে পা রাখলেই বেলজিয়ামের কার্টুন পুত্র – আমাদের প্রিয় অতি চেনা টিনটিনের বিশাল ছবি সহজেই নজর কেড়ে নেয়। চলন্ত ট্রেনের সামনে দাঁড়ানো টিনটিনের সাদা কালো ছবিটি ‘আমেরিকায় টিনটিন’ বই থেকে নেওয়া। এই ছবিতে কাউবয়ের পোশাকে দুঃসাহসিক রিপোর্টার টিনটিন বিদেশিদের ট্রেন ষ্টেশনে বিদায় ও  স্বাগত জানায়। বেলজিয়ামের এই কার্টুন হিরোকে সারা পৃথিবীর মানুষ চেনে।

বেলজিয়ান সংস্কৃতিতে নানান কার্টুন চরিত্র অঙ্গাঙ্গী ভাবে জড়িয়ে আছে। প্রতিদিন এখানে কত যে কার্টুন চরিত্র জন্ম নেয় জানা নেই। প্রতি দশজনে পাঁচজন এখানে কার্টুনিস্ট। ইউরোপের কমিক্স দুনিয়ায় বেলজিয়ামের প্রচুর অবদান। মেট্রো ষ্টেশনের দেওয়ালে দেখি ক্যাপ্টেন হ্যাডক, কুট্টুস, প্রোফেসর ক্যালকুলাস, বিয়াঙ্কা কাস্তাফিয়র – সবারই বড় বড় ছবি। মনে হয় কার্টুনের কল্প জগতে বেলজিয়ানরা ডুবে আছে। শহরের ভেতরে অনেক জায়গায় দেখেছি কার্টুনের প্রভাব।

পরেরদিন খুব সকালেই বেড়িয়ে পড়লাম। আকাশ এখনো ঘন মেঘে ঢাকা। বৃষ্টি ও ধূসর মেঘের প্রেক্ষাপটে ঐতিহাসিক স্থ্যাপত্য গুলো এক অদ্ভুত রসায়ন তৈরি করেছে।

যথারীতি প্রথমেই শহরের ম্যাপ কিনে নিলাম। ব্রাসেলসের যেমন এক ঐতিহাসিক দিক আছে তেমনি এক অতি আধুনিক দিকও আছে। ভৌগলিক অবস্থানের কারনে নানান ব্যাংক ও কোম্পানির হেডকোয়ার্টার এখানে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পার্লামেন্ট ও অর্থনৈতিক হেডকোয়ার্টার এই শহর। নানা ভাষাভাষীদের এই শহরে অনেকেই দেখছি ফ্রেঞ্চ বলে।

এই শহরের প্রধান আকর্ষণ ঐতিহাসিক সিটি স্কোয়ার। স্কোয়ারের চারিদিকে অদ্ভুত সুন্দর কারুকার্যময় বিশালাকার স্থ্যাপত্য। বৃষ্টির দিনেও এখানে প্রচুর মানুষ ঘোরাফেরা করছে। মনে হয় এই স্কোয়ার পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর স্কোয়ার।

ইউরোপে দেখেছি ম্যাপে শহরগুলোর নানান গলি এতো সুন্দর ভাবে আঁকা থাকে যে ম্যাপ দেখে হাঁটলে মনে হয় যেন এই শহর বহু দিনের চেনা। সিটি সেন্টার থেকে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম ‘Manneken Pis’।

এই ঠাণ্ডায় পাথরের তৈরি এক ছোট্ট বাচ্চা ছেলে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ‘পি’ করে চলেছে। এই ছোট্ট মূর্তিটি নাকি ব্রাসেলসের ল্যান্ড মার্ক। আমার তো হাসিই পেয়ে গেল। প্রচুর মানুষ ভিড় করেছে মূর্তির সামনে, বিশেষ করে জাপানি টুরিস্টের দলের প্রত্যেকেই হাসতে হাসতে মূর্তিটিকে পেছনে রেখে একে একে ফটো তুলে নিচ্ছে। বছরের নানা সময়ে এই মূর্তিটিকে ব্রাসেলস বাসীরা নানা রকমের পোশাকে সাজায়। প্রায় আটশো রকমের পোশাকে সাজে এই মূর্তি। এই মূর্তির গলিতে প্রচুর দোকানে শুধুই এই মূর্তির স্যুভেনির।

এই শহরের চকোলেট, waffle, ও frites বিখ্যাত। ব্রাসেলসের Covered Market এর দুধারে শুধুই চকোলেটের দোকান। শহরের ভেজা বাতাস frites ভাজার ও waffle এর সুগন্ধে ভরপুর। হাঁটতে হাঁটতে waffle কিনে খেতে খেতে শহর দেখা ব্রাসেলস ভ্রমনের আনুষঙ্গিক।

বেলজিয়ান আলুভাজাও এদের খাদ্য সংস্কৃতির অঙ্গ। শহরের নানা জায়গায় গাড়ির মধ্যে আলুভাজা বা frites বিক্রি করছে। কাগজের তেকোনা ঠোঙ্গায় প্রচুর আলুভাজা, মেয়নিজ দিয়ে বিক্রি করছে। এইরকম ঠাণ্ডা বৃষ্টির দিনে গরম এক ঠোঙ্গা আলুভাজা ও গরম এক কাপ কফি সহজেই একটু উষ্ণতা এনে দেয়।

এবার শহরের অন্য দিকে Atomium এ যাব। লোহার তৈরি এই স্থাপত্য unit cell of an iron crystal এর আসল আকারের তুলনায় 165 billion গুণ বড়। World’s Fair এর জন্যে তৈরি এই অদ্ভুত স্থাপত্যকে ঘিরে বিশাল পার্ক ও স্থাপত্য দেখতে অনেকেই ভিড় করেছে। আয়রন বন্ড গুলোর ভেতরে লিফট দিয়ে একদম উপরে পৌঁছে যাওয়া যায়।

অল্প সময়ের মধ্যে যতটুকু পারি এই বড় শহরের ছন্দকে জেনে নিয়ে ঘরে ফেরার বেলা হয়ে যায়। অক্টোবরের এই সময় The Cinquantenaire Park এর গাছ গুলো পাতা ঝরার হলুদ-লাল রঙে রঙিন। ঝরা পাতারা পার্কের সবুজ ঘাসে এক অদ্ভুত ছবি তৈরি করেছে। সেই রঙিন পথে চলা শেষে ফিরি নিজের ঘরে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Belgium, Europe, Travel and tagged , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s