September 2011, Vienna, Austria
‘একটু মোৎজার্ট শুনে যান, ছটা থেকে অপেরা শুরু হবে। ভিয়েনা এসে মোৎজার্ট না শুনে চলে যাবেন’- Vienna State opera র সামনে মোৎজার্টের পোশাকে সেজে এক শ্বেতাঙ্গ হাসতে হাসতে এগিয়ে আসে ভিড়ের মাঝে, হাতে অপেরা প্রোগ্রামের তালিকা, টিকিট ও সময় সূচি। অল্পবয়সী ছেলে মেয়েরা অতীতের জমকালো পোশাকে সেজে ঘোরে। ভিয়েনায় ভিড়ের মাঝে ঘুরতে ফিরতে একটু মোৎজার্টের সুর শোনার অনুরোধ প্রতিদিনের এক স্বাভাবিক দৃশ্য। ভিয়েনার মানুষেরা মোৎজার্টের সুরকে সাধারণ মানুষের ভিড়ে এনে দাড় করিয়েছে।
নিজের যা কিছু ভালো, যা কিছু ঐতিহ্যময় তাঁকে আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার যে আনন্দ তা বোধহয় ইউরোপের মানুষ খুবই ভালো জানে। আর সেই আনন্দ শুধু নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে ছড়িয়ে দেওয়ার উদারতাও দেখেছি। ইউরোপের সব জায়গাতেই দেখেছি অসম্ভব নিজস্বতা। কোথাও অনুকরণ দেখিনি। নিজের সংস্কৃতি, ঐতিহ্যকে প্রাণপণে বাঁচিয়ে রাখার প্রবনতা দেখেছি ইউরোপের ছোট ছোট গ্রামেও। ইতিহাসের অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আজকের ইউরোপ বোধহয় অনেক বেশী আত্মসচেতন, অন্তত বাইরে থেকে দেখে আমার তাই মনে হয়।
এই ভিয়েনা ফ্রয়েড থেকে শুরু করে ইউরোপের ইতিহাসের বহু গুরুত্বপূর্ণ মানুষের কর্মস্থল। শিল্পকলা, সুর ও সংস্কৃতির এই শহরটি হিটলারের বড় প্রিয় ছিল, প্রথম জীবনে ভাগ্য সন্ধানে হিটলার এই শহরেরই এসেছিল পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে এই শহরে থেকেই হিটলারের বহু পলিসি তৈরি হয়েছিল। তবে ইতিহাস বাজে মানুষকে ধরে রাখার প্রয়োজন মনে করে না, শুধু শিক্ষা নেয়। আজকের ভিয়েনাও ইতিহাসের কোন বাজে অধ্যায়কে মনে রাখে নি। সব ভুলে আজকের ভিয়েনা মোৎজার্ট, বেঠভেনের সুরে ডুবেছে।
বিশাল বিশাল সুন্দর স্থাপত্যে এই শহর এক স্বপ্নপুরী। শহরের বুক চিরে ট্রামলাইন চলেছে। সারাদিন এই শহরে ঘোরার সর্বোত্তম উপায় এই ট্রাম। সারাদিনের টিকিট কেটে নিলে এই ট্রামে করে যেখানে খুশি যাওয়া যায়। এখানে সেই টিকিটকে বলে ‘শপিং পাস’ – সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত এই পাস কার্যকরী।
ইতিহাসের নানা সময়ের নানা ঘটনার সাক্ষী ভিয়েনার St. Stephen’s Cathedral। রঙিন টাইলসের ছাদ, সূচলো আকাশচুম্বী গথিক চূড়া এই শহরের অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ। St. Stephen’s Cathedral এর সামনে প্রচুর ভিড়। ঘোড়ার গাড়ি, অপেরার টিকিট বিক্রেতার আকর্ষণীয় পোশাক, ঐতিহাসিক চার্চ সব মিলে মিশে এই জায়গার সুরটি যেন সেই অতীতেই রয়ে গেছে, সময় এখানে থমকে দাঁড়িয়েছে।
এই শহরের জনজীবনের ছন্দ দেখতে দেখতে এগিয়ে যাওয়াই আমাদের কাজ। ট্রামে চেপে চলে যাই church of st charles যার অন্য নাম Karlskirche। এই baroque চার্চের গঠনশৈলী অদ্ভুত সুন্দর। শহরের দক্ষিণে Karlsplatz স্কোয়ারের মধ্যমণি এই চার্চের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হতেই হয়।
এই শহরের অদ্ভুত স্থাপত্যের ভিড়ে হারিয়ে যাই খুব সহজেই। ভিয়েনা Parliament হাউসের বিশালতার সামনে মাথা উঁচু হয়ে যায় দেখতে গিয়ে। মোৎজার্ট প্রেমীদের Burggarten এ আসতেই হয়, এই বিশাল বাগান এক সময় রাজা Franz Joseph I এর নিজস্ব বাগান ছিল। তাঁর মনুমেন্ট এই বাগানের আকর্ষণ। তাছাড়া এই বাগানে মোৎজার্টের মূর্তির সামনে অনেকেই সুর সহকারে শ্রদ্ধা জ্ঞ্যাপন করে, প্রচুর চেয়ার রাখা তাঁর মূর্তির সামনে। এই বাগানের আরেক প্রধান আকর্ষণ বিশাল কাঁচের ঘর – ভেতরে নানান প্রজাতির প্রজাপতি উড়ে বেড়ায়। মনুমেন্ট, ন্যাশনাল মিউজিয়াম সমস্ত দেখে ভিয়েনা দেখা যেন ফুরোয় না। আমাদের ফেরার সময় হয়ে যায়।
ফেরার সময় সন্ধ্যার মুখে ঘুরতে ঘুরতে আবার মোৎজার্টের অপেরা শোনার অনুরোধ নিয়ে এগিয়ে এলো এক অল্পবয়সী শ্বেতাঙ্গ। এবার আর অনুরোধ উপেক্ষা না করে টিকিট কেটে ঢুকে গেলাম অপেরা হাউসে অপেরা শুনতে। মোৎজার্টের সুরে ডুবে যায় আমাদের ভিয়েনা-সন্ধ্যা।
যখন সন্ধ্যা ঘনায় এই পুরনো শহরে, যেন আরও বেশী ঐতিহাসিক রহস্য, সুর এই শহরের গায়ে জড়িয়ে থাকে। বিশাল স্থাপত্যের উপরে মূর্তি গুলোকে সন্ধ্যার ধূসরতা জড়িয়ে ধরে। শত বছরের সুর, শিল্প, স্মৃতি, ইতিহাস, রহস্য নিয়েই ভিয়েনার গল্প।
I love Vienna , where l studied and lived couple beautiful years.jalal
I also liked Vienna. When the place is so lovely it definitely makes you nostalgic and revive the old good memories when you see the photos of that place.