September 2011, Vienna, Austria
সকালেই হোটেল থেকে চেক আউট করে, ভিয়েনায় মেট্রো ষ্টেশনে টুরিস্ট ইনফরমেশন সেন্টারে জিজ্ঞেস করলাম – ‘এখানে ইন্টারন্যাশনাল বাস স্টপে কি লাগেজ ষ্টোর রুম আছে?’
অফিসে বসা মানুষটি খুবই সাহায্য করতে চায়, ভিয়েনার ব্যাপারে সবই প্রায় জানে, কিন্তু এই প্রশ্নে যেন একটু থমকে গেল। কাঁধ ঝাকিয়ে হেসে উত্তর দিল – ‘হুম, না। নেই। আমি জানি, ঐ এলাকা আমার নখদর্পণে।’ বলে আত্মতৃপ্তির হাসি হেসে ভিয়েনার মেট্রোর টিকিট আর ম্যাপ এগিয়ে দিল।
বিকেলে আমাদের বাস, লাগেজ স্টোর রুম নেই শুনে একটু চিন্তায় পড়ে গেলাম। তবে আমরা ভিয়েনা যাওয়ার আগেই কোথাও পড়েছিলাম লাগেজ স্টোর রুম আছে। পড়ে আসা জ্ঞানে নির্ভর করে লাগেজ নিয়ে চলে গেলাম বাস স্টপে। গিয়ে দেখি, ইন্টারন্যাশনাল বাসস্টপের অফিসের কোণায় এক ছোট লাগেজ লকার রুম আছে। মনে হল, সেই টুরিস্ট অফিসে বসা লোকটি সবাইকে তথ্য জানায়, আমিও ওকে এই তথ্যটা দিয়ে যাই।
যাইহোক, ভিয়েনার ম্যাপটাকে মেলে ধরে দেখে নিলাম, ভিয়েনা দেখার আর কি কি বাকি রয়ে গেল। ভিয়েনার শহরকেন্দ্র থেকে একটু দূরে Schönbrunn Palace ভিয়েনার অন্যতম টুরিস্ট আকর্ষণ। Schönbrunn মানে ‘সুন্দর বসন্ত’। তবে, এখন আমাদের জন্যে সুন্দর বসন্তের বদলে আকাশে মেঘের ঘনঘটা। ধূসর আকাশের প্রেক্ষাপটে রাজাদের এই summer residence এখনো সযত্নে সাজানো। টিকিট কেটে ভেতরে ঢুকে এঘর ওঘর দেখতে দেখতে সময় কোথা দিয়ে কেটে যায়, বুঝতেও পারি না। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পরে এই প্রাসাদ মিত্রশক্তির অস্থায়ী অফিস ছিল। এখন এখানে নানা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সমাবেশ হয়। বর্তমানে এই প্রাসাদ UNESCO World Heritage।
প্রাসাদের বিশাল বাগান নানা রঙের ফুলে সাজানো, যেন সবুজ ঘাসের গালিচায় নক্সি কাঁথার নক্সা আঁকা। ঘাসের জমি ছাড়িয়ে বাগানের ভেতরে সযত্নে ছাঁটা গাছের পাশে পাশে প্রচুর স্ট্যাচু সাজানো। এই বিশাল বাগানে সারাদিন ধরে হাঁটলেও যেন পথ ফুরোবে না। দূরে ফোয়ারা লক্ষ্য করে বহু মানুষ হেঁটে চলেছে। হাঁটতে হাঁটতে ছোট্ট এক টিলার উপরে এক সুন্দর স্থ্যাপত্য ‘Gloriette’ নজরে পড়ে। এই জায়গা থেকে পুরো প্রাসাদের দৃশ্য দেখা যায়।
ধূসর ভেজা ভেজা দিনে অতীতের রাজপ্রাসাদের রাজকীয় উঠোনে নিজেদেরকে অতীতের এক বৈভবশালী চরিত্র কল্পনা করে হেঁটে যাই, ভালো লাগে মেঘলা দিনের এই ফ্যান্টাসি।