September 2013, Prague, Czech Republic
প্রাগের পথে চলতে চলতে, যে বয়স্ক মানুষটি লাল-হলুদ জামা পরে হাসিমুখে বাজনা বাজিয়ে গান গাইছে, যে মানুষটি ঘাড় বাঁকিয়ে বেহালা বাজাচ্ছে, যে মানুষটি ‘নমস্তে’ বলে কিছু ইউরোর বদলে কিছু চেক ক্রাউন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করছে, যারা নাবিকের বেশে Vltava নদীর বুকে বোট ট্রিপের জন্যে টুরিস্টদের সঙ্গে দর কষছে, যে মানুষটি মূর্তি সেজে দাঁড়িয়ে আছে – অপেক্ষা করছে দিনভর, কেউ এসে ওর সঙ্গে ফটো তুলে যাক আর সামনে রাখা কৌটোতে কিছু ক্রাউন ফেলে যাক, যে মানুষটি মাথায় লাল ফেট্টি বেঁধে অতীতের পোশাকে সেজে জীবন্ত ম্যাকাও পাখি কাঁধে নিয়ে শহর চত্তরের ভিড়ের মাঝে দাঁড়িয়ে ভিক্ষা করছে – সবাই যেন এই শহরের এক অবিচ্ছ্যেদ্য অঙ্গ, সবাই মিলে যেন এই রূপকথা শহরের ছবি আরও সুন্দর করেছে।
ঐতিহাসিক স্থাপত্য, ইতিহাস, মানুষের প্রতিদিনের জীবনযাত্রার রকমফের – সবই যেন ঐ জায়গার বিশেষ চরিত্র নির্ধারণ করে, তারই আকর্ষণে মানুষ ছুটে যায় শহর থেকে শহরে। সবাই ছুঁয়ে যায় মানুষের ভবঘুরে, বেদুঈন মনকে।
কোন এক শহর মানে তো শুধুই স্থাপত্য নয়, বা তার গৌরব ময় অতীত নয়, শহরের মানুষই শহরের প্রধান প্রান, মানুষকে কেন্দ্র করেই শহরের গড়ে ওঠা। পথচারী মানুষের মুখের হাসি, আনন্দ সংক্রামিত হয় আমাদের মধ্যে। এই শহরের প্রতিটি কোণায় সুরের খেলা। এক রাস্তায় এক এক সুর ভাসে। প্রতিটি রাস্তায় কেউ না কেউ কোন না কোন বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে চলেছে। মাঝে মাঝে এক সুর অন্য সুরকে ছাপিয়ে যায়। সুরের জালে জড়ানো এই শহরের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে ভালো লাগে।
Art Nouveau স্টাইলে তৈরি মিউনিসিপাল হাউসের পাশ দিয়ে যেতে যেতে এই স্থাপত্যের সৌন্দর্যে অবাক হয়ে থমকে দাঁড়াতেই হয়। এই শহরের নানান গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গীত ও কনসার্টের উৎসব এখানেই অনুষ্ঠিত হয়।
নানান ঐতিহাসিক মনুমেন্ট, আধুনিক দোকান, ক্যাফেট্যারিয়ার পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাই Wenceslas Square। বলা যায়, এই স্কোয়ার আধুনিক প্রাগের প্রাণকেন্দ্র। বিশাল এই স্কোয়ারের চারদিকে প্রচুর রেস্টুরেন্ট, চেক রিপাবলিকের বিখ্যাত বিয়ার পাব, দোকান সবই টুরিস্টদের প্রধান আকর্ষণ। দীর্ঘ এই স্কোয়ারের শেষে নিও-ক্লাসিক্যাল স্টাইলে তৈরি ন্যাশনাল মিউজিয়ামের স্থাপত্যের সৌন্দর্যে টুরিস্টদের থামতেই হয়, ফটো তুলতেই হয়।
বোহেমিয়া চেকের এক ঐতিহাসিক শহর, কিংবা বলা যেতে পারে চেক রিপাবলিকের সম্পূর্ণ অংশই আগে ছিল বোহেমিয়া। সেই ঐতিহাসিক বোহেমিয়ার এক সন্ত – Saint Wenceslas এর নামে এই স্কোয়ার ও তার মনুমেন্ট এই স্কোয়ার রাজত্ব করে। এই স্কোয়ার এখন প্রাগের World Heritage Site এর এক অংশ। ইতিহাসের সময় থেকে চেক বাসীদের যখনই গণ আন্দোলন বা প্রতিবাদের প্রয়োজন হয়েছে, সবাই এই মিউজিয়ামের সামনের Saint Wenceslas বিশাল মনুমেন্টের নিচেই জড়ো হয়েছে।
দিন শেষের তোড়জোড় শুরু হয়েছে সামনের দোকান গুলোতে। আমাদের এবার যেতে হবে Vltava নদীর ওপারে, পাহাড়ের উপরে প্রাগের অন্য আরেক ক্যাসল Vyšehrad, কথিত আছে অতীতে Vyšehrad ই ছিল প্রাগের ক্যাসল।