মুড়ানোর মোড়ে (Murano, Italy)

April 2010, Murano, Italy

এখানে এক ফুঁয়ে জন্ম হয় অনবদ্য শিল্পের। Millefiori পদ্ধতিতে তৈরি হয় স্বপ্ন রঙিন কাঁচের শিল্পকলা। জ্বলে ওঠে হাজার ঝাড়বাতির আলো। মুড়ানোর Rezzonico ঝাড়বাতি সতেরো শতকে ভেনেসিয়ান ধনী Rezzonico পরিবারের ঐশ্বর্য দেখানোর জন্যে তৈরি হয়েছিল।

murano_0192

সেই ঝাড়বাতি হাজার মানুষের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিল, সেই থেকে আজও মুড়ানোতে Rezzonico ঝাড়বাতি তৈরি হয়। আজও সেই রাজকীয় ঝাড়বাতির আলো আধুনিক ঘরকে ভেনেসিয়ান (Venetian) প্রাসাদে পরিণত করতে পারে। এক একটি ঝাড়বাতি যেন এক এক অনবদ্য শিল্পের উদাহরণ।

ভেনিস থেকে মুড়ানো দ্বীপ খুব বেশী দূরে নয়। ভেজা দিনে অ্যাড্রিয়াটিক সমুদ্রের জল যেন একটু উত্তাল। শীত শীত বাতাসে মুড়ানোর বহু পুরনো গ্লাস ফ্যাক্টরির ভেতরে জ্বলন্ত ফার্নেসের উত্তাপে, চোখের সামনে এক একটি অনবদ্য শিল্পের জন্ম দেখতে জড়ো হয়েছে অনেক টুরিস্ট। উষ্ণ এক ওম, জ্বলন্ত লাল কয়লা আর মনোযোগী শিল্পীর ফুঁয়ে ফুঁয়ে এক মনে সামান্য কাচকে শিল্পে পরিণত করা – এই ছবি মুড়ানোর বহুদিনের।

আনুমানিক 8th century তে এই শিল্পের জন্ম হয়, তারপর সেই শিল্প বংশ পরম্পরায় প্রবাহিত হয়। আজও সেই ধারা বয়ে চলেছে, তারই নিদর্শন দেখছি আজ। আজ এই দ্বীপে বহু ছোট বড় গ্লাস ফ্যাক্টরি আছে। কোন কোন ফ্যাক্টরি তো গ্লাস তৈরির বড় ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে।

আজকের মেশিনের যুগে, সব কিছু নকলের যুগে এই দ্বীপের মানুষের দাবি মুড়ানোর কাঁচ কিন্তু এখনো শৈল্পিক, এখনো অসাধারণ, এখনো অনবদ্য, এখনো আসল। এখানে Millefiori পদ্ধতিতে যে সব কাঁচের জিনিস তৈরি হয়, শিল্পের মতোই প্রত্যেকটি সৃষ্টি একে ওপরের থেকে আলাদা। মানুষের হাতের যাদু ও মনের মাধুরী মিশে থাকে এই শিল্পের গলন্ত কাঁচে। বিশ্বায়নের প্রতিযোগিতা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত এই দ্বীপের কাঁচ-শিল্প। এই দ্বীপের মানুষ জানে নির্জনে নীরবে শিল্পের মর্যাদা দিতে, শিল্প তৈরি করতে।

ভালো লাগে এই দ্বীপের ক্যানালের পাশের রাস্তা দিয়ে হেঁটে যেতে। দু’পাশে স্থানীয় বাড়ী। দু’পাশে যেমন রেস্টুরেন্ট আছে তেমনি আছে কাঁচের তৈরি জিনিসের শো-রুম। হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই এই দ্বীপের অন্য প্রান্তে। নানা মোড়ে দেখি কাঁচের তৈরি মনুমেন্ট।

দ্বীপের শেষে আছে বাতিঘর। ছুটির ভেজা দিনে দ্বীপটি যেন ঘুমিয়ে আছে। শান্ত, নির্জন রাস্তা। ভেনিসের ভিড় এখানে একদম নেই। বাতিঘরের নীচে সমুদ্রের ভেজা বাতাস, দিগন্তে মিশেছে সবুজ জল।তীরে কিছু কাঁচের তৈরি হাঁস ডানা মেলে উড়ে যেতে চাইছে দিগন্তে। দূরে আমাদের স্টিমার দেখা যাচ্ছে। ফিরতে হবে, অনেক পথ চলার বাকি।

জল কেটে স্টিমার এগিয়ে চলেছে। পেছনে সরে যাচ্ছে শান্ত মুড়ানো। সাগর কোলে দেখে এলাম মুড়ানোকে, ছুঁয়ে এসেছি তার ইতিহাস, দেখে এসেছি তার শিল্প। উপলব্ধি হয়েছে সামান্য থেকে মানুষই পারে অসামান্য ইতিহাস তৈরি করতে।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Italy, Travel and tagged , , , , , , , . Bookmark the permalink.

1 Response to মুড়ানোর মোড়ে (Murano, Italy)

  1. Anik বলেছেন:

    tomar lekha khub bhalo legeche aro lekho photo dekhe mugdha hoye gechi

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Twitter picture

You are commenting using your Twitter account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s