April 2010, Toulouse, France
যখন জানলাম তুলুসে আসবো, পরিচিত অনেকেই ভুরু কুঁচকে জানতে চেয়েছিল – তুলুস? কোথায়? একজনই বলেছিল – ও হ্যাঁ, তুলুসেই তো Airbus এর হেড কোয়ার্টার। পৃথিবীর সমস্ত জেট এয়ার ক্র্যাফটের অর্ধেক এই কোম্পানি তৈরি করে।
যাইহোক, প্রথম তুলুসের এয়ারপোর্টে নেমে আরও অন্যান্য এয়ারপোর্টের মতোই মনে হয়েছিল, বরং একটু ছোট বলেই মনে হয়েছিল। Airbus এর হেড কোয়ার্টারের এয়ারপোর্টের যে ছবি ছিল মনে, তা ঠিক মেলে নি।
কিন্তু, এই গত পাঁচবছর ধরে তুলুসের এই এয়ারপোর্টের অগ্রগতির সাক্ষী আমরা। এখন আয়তনে অনেক বেড়ে গেছে তুলুসের এয়ারপোর্ট, নিজেদের সামনে এই এয়ারপোর্টকে বাড়তে দেখেছি। এই এয়ারপোর্টে বছরে পঁচাত্তর লক্ষেরও বেশী যাত্রী আসা-যাওয়া করে ও পঁচিশটিরও বেশী এয়ারলাইন্সের এয়ারক্রাফট এখানে প্রতিনিয়ত নানান দেশের যাত্রীদের সেবায় হাজির।
যখন এই এয়ারপোর্টের অন্য এক অংশ তৈরির মুখে, সাধারণ জনতার জন্যে তখনও সেই ডি টার্মিনাল খোলে নি, কাজ চলছে – সেই অংশে এয়ার বাস এক এরোপ্লেন প্রদর্শনী করল তুলুসবাসীদের জন্যে। এয়ার বাসের বিখ্যাত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্যাসেঞ্জার এয়ার ক্র্যাফট A380 র এক অসম্পূর্ণ এয়ার ক্র্যাফট ও তার ভেতরের অংশ, অবসর প্রাপ্ত সুপার সনিক কনকর্ড, ও অনেক পুরোন এরোপ্লেনের প্রদর্শনী।
ছুটির দিন। ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে ওদের বাবা-মা – বিশাল ভিড়। শুধু যে তুলুসের মানুষ তা নয় তুলুসের আশেপাশের অনেকেই এসেছে এই বিশাল এয়ার ক্রাফটের প্রদর্শনীতে।
দীর্ঘ সর্পিল লাইন। সবাই A380 র ভেতরে ঢুকে তার সমস্ত কলকব্জা দেখে নিচ্ছে। বিশালতার দিক থেকে বোয়িং এর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্যে এয়ার বাসের এই A380 তৈরি হয়েছে। নানান এয়ার লাইন্সের চাহিদাকে মাথায় রেখে A380 সিরিজের এয়ার ক্রাফটে প্রায় ৪৫০ থেকে ৮৫০ যাত্রী বহন করে এই এয়ার ক্রাফট। ২০০৫ এ প্রথম A380 আকাশে উড়েছে। বিশাল এই আগুন পাখিকে আকাশে ওড়াতে যে কত রকমের ছোট খাটো যন্ত্র ও তার সমন্বয় দরকার তা নিজের চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে চাইতাম না।
দোতালা এই A380 এয়ার ক্র্যাফটের উপর তলায় সম্পূর্ণ বসার জায়গা। বসার জায়গা গুলোয় সিমুলেশনের জন্যে বিশাল জলের ট্যাঙ্ক রাখা। নিচের তলায় পাইলটের ককপিট এরোপ্লেন ওড়ানোর সমস্ত আধুনিক যন্ত্র পাতি দিয়ে সাজানো এবং বসার জায়গায় যথারীতি জলের ট্যাঙ্ক।
অসম্পূর্ণ এই এয়ার ক্র্যাফটকে ভেতর থেকে দেখতে অনেকেরই বেশ উত্তেজনা হচ্ছে, বিশেষ করে বাচ্চাদের। দেখলাম অনেক বাবা নিজের বাচ্চাদের ভালো করে দেখাচ্ছে – হয়তো ভবিষ্যৎ ইঞ্জিনিয়ার বা পাইলট লুকিয়ে আছে এই কচি কাঁচাদের মাঝে। হয়তো, বিশ্বাস করতেও অসুবিধা হচ্ছে – এই বিশাল যন্ত্রের ভেতরে ঢুকেই আমরা পাড়ি দিই দেশ-দেশান্তরে। কিংবা বাবা শিশুকে মানুষের সৃষ্টিশীলতাকে, বুদ্ধিমত্তাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানিয়ে সেই পথে চলার শিক্ষা দিচ্ছে।