May 2010, Toulouse, France
দিনটা ছিল গরমের এক রবিবার। সকাল থেকেই উজ্জল রোদ, ঝলমলে দিন, ফুরফুরে হাওয়া। গরম কাল এখানে এক স্বস্তির সময় বলে মনে হয়। শীতকালের ভারী কোট থেকে মুক্তি পেয়ে সবাই পাতলা কাপড়ে হালকা চালে পা ফেলে।
এমনি দিনে কি আর ঘরে বসা যায়? নীল আকাশে সূর্য, সবুজ ঘাসের জমিতে হলুদ ফুলের বাতাসে মাথা দোলানো যেন বেড়িয়ে আসার হাতছানি দেয়। মন হয় বিবাগী, তাই বেড়িয়ে পড়ি সকালেই।
জানি না কোথায় যাব। শুধু যেতে চাই কোথাও তাই বেড়িয়েছি, ঘরে থাকতে চাই না আজ। হয়তো শুধুই দেখতে বা ফটো তুলতে। বাস ষ্টেশনে দেখলাম তুলুস থেকে কিছু দূরের এক বাস ছাড়ছে। চেপে পড়লাম।
তুলুস ছাড়িয়ে বাস চলেছে গ্রাম গঞ্জ ছাড়িয়ে, চোখে পড়ছে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠ, কোথাও শুধুই মাটি কেটে রাখা হয়েছে চাষের অপেক্ষায়, আবার কোথাও সবুজ মাঠ, কখনো দেখা যাচ্ছে হলুদ সবুজ খেত।
বাসে যেতে যেতে এখানের দিগন্ত বিস্তৃত চাষের জমিতে কখনই মানুষকে কাজ করতে দেখি নি। ভাবি এই জন হীন প্রান্তরে কেই বা চাষ করে যায়, যেন আলাদীনের জীন এই বিশাল মাঠ জুড়ে চাষ করে গেছে।
কিছুদূর চলার পরে এক সুন্দর হলুদ গ্রাম চোখে পড়ল বাসের জানালা দিয়ে। এখানে একটা বাস স্টপও আছে। বাস থামল, পথের সৌন্দর্য এতোই আকর্ষণ করল যে আমরা নেমে পড়লাম।
দিগন্তের সীমানা জুড়ে কোলজা চাষ চলছে। কোলাজার হলুদ ফুল এই গ্রামকে যেন আলো করে রেখেছে। দেশের মাটিতে দিগন্ত বিস্তৃত মাঠে সর্ষে চাষ অনেক দেখেছি, দেখেছি সর্ষে ফুলের হলুদ সোনালি সৌন্দর্য। কিন্তু, দক্ষিণ ফ্রান্সের গ্রামের প্রেক্ষাপটে কোলজা চাষ ও তার হলুদ ফুল যেন কোন এক অন্য সৌন্দর্যের সূচনা করেছে।
দক্ষিণ ফ্রান্সের ছবির মতো সুন্দর গ্রাম অনেক ইউরোপিয়ান পেইন্টিং এ দেখা যায়, অনেক শিল্পির প্রেরণা এখানের গ্রাম। এক আদিম সৌন্দর্য এই গ্রামের বুকে। এক নির্জন দুপুরে এই গ্রামের নিঝুম-নিবিড় সৌন্দর্য যেন কোন এক আত্মবোধের জন্ম দেয়, বহুদিনের সুপ্ত শান্ত এক চেতনা জাগিয়ে দেয় এই গ্রামের নির্জনতা, ভালো লাগে হলুদ কোলজা ফুলের মৃদু গন্ধ। বুক ভরে শ্বাস নিই।
দূরে দেখা যাচ্ছে গ্রামের চার্চ। গ্রামের টালির ছাদের সুন্দর ছোট ছোট বাড়ী ঘর যেন ফ্রেঞ্চ জীবনযাত্রার ছবি কল্পনা করায়। আঁকাবাঁকা নির্জন রাস্তা ধরে হেঁটে যাই গ্রামের ভেতরে। দক্ষিণ ফ্রান্সের এক অজানা গ্রামের সুবাস বুকে নিয়ে, উজ্জ্বল এক দিনের হলুদ ছবি আঁকি এই শান্ত দুপুরে। বড় ভালো লাগে এই পৃথিবীর পথে পথ চলা। চলতে চলতে চলা যেন শেষ হবে পৃথিবীর শেষে দিগন্তের ঐ পারে।
Opurbo! Porte porte amio choley gechilam oii holud graam ti te! Aaj thekey ami apnar follower 🙂
ভালো লেগেছে গেছে খুশী হলাম। সঙ্গে থাকার জন্যে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।