মনে পড়ে? ছেলেবেলায় টিনের বাক্স নিয়ে স্কুলে যাওয়ার কথা? ছোট্ট টিনের বাক্স কতো কাজের ছিল! তাতে টিফিন থাকতো বা টিফিনে কিনে খাওয়ার খুচরো পয়সা থাকতো, বই, লজেন্স, ছোট পিং পং বল, লাইব্রেরী থেকে নেওয়া রোমহর্ষক গোয়েন্দা গল্পের বই, হাঁদা ভোঁদার বই, স্ট্যাম্প কালেকশনের খাতা – আরও কতো কি। খুব বেশি দিনের কথা তো নয়। প্রত্যেক ছাত্রের টিনের বাক্স যেন ছিল এক গুপ্তধনের ভাণ্ডার।
পৃথিবী টা যে কতো তাড়াতাড়ি বদলে যাচ্ছে? কি দ্রুত ডিজিটাল দুনিয়া সারা পৃথিবীর মানুষকে এক জালের মধ্যে বেঁধে ফেলছে। ইনফরমেশন টেকনোলোজি আজ পৌঁছে গেছে পৃথিবীর প্র্যত্যন্ত এলাকায়। সেই টিনের বাক্সের দিন আর নেই। আজ প্রতিটি শিশুর জন্যে একটি ল্যাপটপের যুগ। পৃথিবী দ্রুত বদলাচ্ছে সেই সঙ্গে বাড়ছে এই পৃথিবীতে নতুন বাসিন্দার সংখ্যা, পৃথিবীর জনসংখ্যার বিশাল এক অংশ আজও শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। সেই দ্রুত বদলের সঙ্গে তাল মেলাতে শিক্ষার প্রসারকে করতে হয় আরও বেশি দ্রুতগামী।
কিন্তু, যেখানে প্রাথমিক সমস্যা খাদ্যাভাব, ইলেক্ট্রিসিটি, দারিদ্র্যতা সেখানে শিক্ষা কি করে প্রাথমিক হতে পারে? হতে পারে। শিক্ষাই পারে সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে। তাই উন্নত, স্বাধীন, স্বতঃপূর্ত শিক্ষাকে প্রতিটি শিশুর হাতে পৌঁছে দিয়েছে One laptop per child (OLPC) সংস্থা। এই সংস্থার পুরোধা Nicholas Negroponte, তিনি MIT র গ্র্যাজুয়েট, computer-aided design বিষয়ের পথিকৃৎ এবং বেস্ট সেলার বই Being Digital এর লেখক। তাঁর এই বই চল্লিশটির বেশি ভাষায় অনুবাদ হয়েছে।
তাঁর সংস্থা এই XO laptop তৈরি করেছে স্কুলের বাচ্চাদের জন্যে। এই ল্যাপটপ সস্তা- মাত্র একশ ডলার। টেকসই- বাচ্চাদের হাত থেকে পড়ে গেলেও কিছু হবে না এই ল্যাপটপের। কম পাওয়ার লাগে- যেখানে ইলেক্ট্রিসিটি নেই সেখানে সোলার পাওয়ারেও চলবে এই ল্যাপটপ। ইন্টারনেট কানেকশন আছে- যাতে গ্রুপ এর মধ্যে যোগাযোগ থাকে, গ্রুপের মধ্যে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে।
এই ল্যাপটপে বাচ্চারা নিজেদের পছন্দমত বিষয় পড়তে পারবে- কারন এই ল্যাপটপে অনেক অনেক বিষয়ের ব্যাপারে লোড করা যায়, লিখতে পারবে- গল্প, রচনা ইত্যাদি। এই ল্যাপটপের স্ক্রিন রোদে বসেও ভালো দেখা যায়- কারণ অনেক শিশুর স্কুল খোলা আকাশের নীচে। উন্নত শিক্ষা ব্যাবস্থাকে তৃতীয় পৃথিবীর শিশুদের হাতে পৌঁছে দেওয়ার এই প্রয়াস সত্যি দারুন।
এখন পর্যন্ত পৃথিবীর বিয়াল্লিশটা দেশের কুড়ি লক্ষ শিশু এই ল্যাপটপ ব্যবহার করছে। এখন শিক্ষা আর শুধু চার দেওয়ালে বন্দি নেই, আলোর মতো ছড়িয়ে গেছে। এই উন্নত বিশ্বের দায়ভার বুঝে নিতে তৈরি হচ্ছে একঝাক নবীন প্রান।