গথেনবারগ আরচিপিলাগো – দক্ষিণের ভারগো দ্বীপ (The archipelago of Gothenburg)

গথেনবারগের উত্তরে ও দক্ষিণে প্রচুর ছোট ছোট দ্বীপ আছে। সব দ্বীপ গুলোয় তো আর যাওয়া যাবে না, তাই ঠিক হল সবচেয়ে সুন্দর দ্বীপ গুলোতেই আমরা হানা দেব।

আরচিপিলাগো হল অনেক ছোট ছোট দ্বীপের সমন্বয়। গথেনবারগ আরচিপিলাগো গুলোয় কিছু কিছু দ্বীপেই শুধু পাবলিক ট্রান্সপোর্ট চলে মানে বাস, কার ইত্যাদি চলে বাকি অন্যান্য দ্বীপ গুলোতে শুধু সাইকেল আর হাঁটা, সাইকেল গুলোর সামনের দিকে বেশ বড় ক্যারিয়ার থাকে মাল বহনের জন্য।

DSC_0914 DSC_0932

যে সব দ্বীপে শুধু সাইকেল চলে বা শুধু হাঁটা পথ সেসব দ্বীপে আবার প্রচুর সামার হাউস, হোটেল। এখানে অনেকেই আসে গরমের সময়ে ছুটি কাটাতে। অক্টোবরের এই সময়ে দ্বীপ গুলো প্রায় ফাঁকা, ভিড় নেই, অনেক দ্বীপে ফেরি চলাচল ও এই সময়ে বন্ধ হয়ে যায়।

আমাদের তিনদিনের গথেনবারগ ট্রান্সপোর্টেশনের পাস কাটা ছিল, এই পাসে শহরের ট্রামে, বাসে যেমন চাপা যায় তেমনি আরচিপিলাগোর দ্বীপগুলোতে যাওয়ার ফেরী গুলোতেও চাপা যায়।

DSC_0809 DSC_0813 DSC_0854 DSC_0937

ফেরিতে করে পৌঁছে গেলাম এক দক্ষিণের এক ছোট দ্বীপে, নাম তার Vargo। ফেরী ঘাটে নেমে আঁকাবাঁকা হাঁটা পিচ ঢালা পথ চলে গেছে দ্বীপের ভেতরের দিকে। জনমানব শূন্য পথ ধরে হাঁটতে শুরু করে দিলাম।

DSC_0823 DSC_0825 DSC_0916

এই দ্বীপে ছোট ছোট ছবির মত বাড়ি, বাড়ির সামনে সযত্নে সাজানো বাগান, লাল টুকটুকে আপেল ফলে রয়েছে, অনেক আপেল মাটিতে ছড়িয়ে, বাড়িগুলোর চারিদিকে কোন বেড়া নেই, ফলন্ত বাগান যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছে। লোকজন প্রায় দেখাই যাচ্ছে না।

 

আমার ছাত্রী জীবনের দুষ্টু বুদ্ধি মাথাচাড়া দিল, চলে গেলাম বাগানের আপেল গাছের নিচে আপেল কুঁড়োতে। সত্যি এই আপেল যেন জ্ঞান বৃক্ষেরই ফল। ঝোলা ভর্তি আপেল কুঁড়িয়ে নিয়ে একটা আপেল নিয়ে ভাল করে মুছে নিয়ে এক কামড় দিয়েই বুঝলাম কেন বাগান ভর্তি আপেল পড়ে রয়েছে।

DSC_0912

কেউই খাচ্ছে না। এই আপেলের স্বাদের সামনে আমাদের তেঁতুল লজ্জা পাবে। তবে আমি ও সুস্মিতা দু’জনেই দমে যাওয়ার পাত্রি নই, সুস্মিতা বলল- “ঠিক আছে টক চাটনি বানিয়ে নেব।” আমি তাই আরও উৎসাহে আরও কিছু আপেল কুঁড়িয়ে নিলাম। সত্যি সুস্মিতা সেই আপেলের চাটনি বানিয়েছিল, খুবই মুখরোচক হয়েছিল। সুস্মিতার হাতের যাদু তো ছিলই সে জানি তবে দ্বীপের বাগানের গাছের আপেল বলে স্বাদ বেড়ে গিয়েছিল, নাকি বহুদিন পরে নিজের কুড়নো ফল তাই স্বাদ বেড়েছিল জানি না।

হ্যাঁ, যা বলছিলাম। ঝলমলে দিন, গভীর নীল সমুদ্র, ঠাণ্ডা হাওয়া, নির্জনতা, সুন্দর রাস্তা, দু’পাশে বাগানের গাছের সবুজ তারুণ্য, নাম না জানা হলুদ লাল ফুল, আপেল গাছে অফুরন্ত আপেল ফলে থাকা দেশ থেকে বহুদূরে আমাকে দিকশুণ্যপূরের কথাই মনে করিয়ে দিল। মনে হল এইতো পেয়েছি এতদিনে দিকশুণ্যপূরের ঠিকানা।

DSC_0844 DSC_0925

পৃথিবীর এক প্রান্তে যেন পৌঁছে গিয়েছি। সমুদ্রের ধরন এখানে অন্যরকম। এক শান্ত গভীরতা এখানের সমুদ্রের বুকে। শুনেছি শীতে এখানের সমুদ্রের জলে বরফ ভাসে। বড় বড় পাথর চোখে পড়ে এখানের সমুদ্রের বুকে, দ্বীপের কিনারায়।

DSC_0945 DSC_0931

সেদিন হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত পায়ে অফুরন্ত উৎসাহে প্রচুর ফটো তোলা হয়েছে। প্রতিটি মুহূর্ত যেন বাধিয়ে রাখার মতো। নীললোহিতের দিকশুণ্যপূর তো এখানেই । অদ্ভুত শান্তি এখানের বাতাসে। এক অসীম উদারতা এখানের সমুদ্রের বুকে।

এবার ফিরে চলার পালা। পরেরদিন আবার দক্ষিণের অন্য দ্বীপ।

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Europe, Sweden, Travel and tagged , , , , , , , , , , , , . Bookmark the permalink.

মন্তব্য করুন

Fill in your details below or click an icon to log in:

WordPress.com Logo

You are commenting using your WordPress.com account. Log Out /  পরিবর্তন )

Facebook photo

You are commenting using your Facebook account. Log Out /  পরিবর্তন )

Connecting to %s