October 2012, Stockholm, Sweden
রাত দশটায় আমাদের স্টকহোম যাওয়ার ট্রেন। এবার ট্রেনের অপেক্ষা, সারা রাতের যাত্রা।
ভোর হল স্টকহোমে। সকাল ছ’টায় পৌঁছে গেলাম কিন্তু আলো ফোটে নি এখনও। দিনের দৈর্ঘ্য এখানে এখন ছোট। সূর্যোদয় হতে এখানে এখন প্রায় আটটা বাজবে।
তাই স্টকহোম স্টেশনে বসে নতুন দেশের নতুন মানুষ জনের মুখ দেখছি বোঝার চেষ্টা করছি, এই জনস্রোতের প্রতিটি মানুষের মুখের পেছনের সুখ দুঃখের ছাপ। পৃথিবীর প্রায় সব দেশের মানুষের চরিত্র বোধহয় একই, একই ভাবে হাসে একই ভাবে কথা বলে, ওদের অফিসের তাড়া থাকে ট্রেন ধরার জন্য ছোটে, শুধু ভাষাটাই যা আলাদা।
স্টকহোম স্টেশনে দেখলাম অনেকে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করছে। এমনকি অফিস চলতি ভদ্রলোক গোছের লোকেরাও প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করছে ডাস্টবিন থেকে। এক ভদ্রলোক তো আমাদের শেষ হয়ে যাওয়া জলের বোতল দেখে অনেকক্ষণ লোলুপ দৃষ্টিতে দেখে নিয়ে জিজ্ঞেসই করে ফেলল –Can I take the bottle? আমি দিয়ে দিলাম। পরে জানলাম প্রতিটি জলের বোতল দোকানে ফেরত দিলে এক ক্রনার করে পাওয়া যায়।
সকাল ন’টা থেকে আমাদের স্টকহোম ঘোরা শুরু হল। স্টকহোম বেশ বড় শহর। শুরু হল নোবেল ব্যাঙ্কয়াত হল থেকে। সিটি হল দেখে ন্যাশনাল মিউজিয়াম দেখে নিয়ে চললাম রয়্যাল প্যাল্যেসের উদ্যেশ্যে।
দুপুর সাড়ে বারোটায় এখানে রয়েল গার্ড বদলানোর প্যারাড হয়। টুরিস্ট ইনফরমেশন অফিস থেকে বলে দিয়েছে – সেটা বাদ দিলে কিছুতেই চলবে না। রয়্যাল প্যালাসের সামনে বেশ কিছু লোক জনের সমাগম, বোঝা যাচ্ছে সবার উদ্যেশ্য সমান, কিছু ভারতীয়ও নজরে পড়ল।
মহা সমারোহে রয়্যাল প্যাল্যেসের সামনে গার্ড বদলানো হল। দেখা ও অনেক ফটো তোলা শেষ করে আমাদের হাঁটা শুরু হল পুরনো স্টকহোম শহরের দিকে। শহরের মাঝে বয়ে চলেছে সুদৃশ্য ক্যানাল।
ঠাণ্ডার জন্য সৌন্দর্য উপভোগে কিন্তু কোন বাধা নেই। গ্লাভস টুপি ইত্যাদি পরে ঠাণ্ডার সঙ্গে লড়াই করার জন্য তৈরি আমরা।
পৌঁছে গেলাম ভাসা মিউজিয়াম। ভাসা মিউজিয়ামের সামনে সুন্দর বাগান, বড় লেক আর সারি সারি বড় বড় গাছ।
গাছে লেগেছে রঙের হোলি। আগুন রঙ্গা পাতা চারিদিক আলো করে রেখেছে। শেষ বিকেলের কমলা রোদ এই রঙিন গাছের পাতায় লুটিয়ে পড়ে অদ্ভুত আলোর খেলা তৈরি করেছে। যেন দুষ্টু ছেলের সোনালি চুলে হাত বুলিয়ে এলোমেলো করে দিচ্ছে। শুধু কি গাছের পাতায় রঙ লেগেছে!
গাছের পাতা গুলো নিচে পড়ে সবুজ জমিকেও করে তুলেছে লাল, কমলা, হলুদ মাঝে মাঝে সবুজের ছোপ। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য প্রান মন ভরে দেয়, জুড়িয়ে দেয় সমস্ত ক্লান্তি ।
দিন শেষ হয়ে আসছে, এবার ফিরতে হবে স্টেশনে, রাতে ট্রেন গথেনবারগের।