জঙ্গল কেটে শহর, গাছ কেটে বাড়ী, জঙ্গল কেটে মরুভূমি, গ্লোবাল অয়ারমিং, আবহাওয়ার পরিবর্তন ইত্যাদি নিয়ে যখন আজকের এই সভ্যতায় আমরা নাজেহাল ঠিক সেই সময় কেনিয়ায় চলেছে গ্রিন বেল্ট আন্দোলন।
আধুনিক সভ্যতা যে নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস করেছে এবং আজ পৃথিবীর তাপমান বেড়ে চলেছে সে নিয়ে তো অনেক জল ঘোলা হচ্ছে। ফলস্বরূপ উন্নতিশীল দেশের সরকারের তরফ থেকে কিছু গাছ রোপণ করা হয়েছে এবং কিছুদিনের মধ্যেই সেই সব গাছ জলের অভাবে ধুঁকতে ধুঁকতে মরেও গেছে। দ্বিতীয় বার আর রোপণ করা হয় নি। এই তো আজকের বাস্তব ছবি।
কিন্তু, কিছু মানুষ কোন প্রতিবন্ধকতার কাছে হার মানতে জানে না। প্রোফেসর ওয়াঙ্গেরে মাথাই তেমনি এক নাম। কেনিয়ার নানান জায়গায় তিনি ও তাঁর তৈরি সংস্থা প্রায় এক কোটি গাছ লাগিয়েছেন। গাছ লাগানো, গাছের পরিচর্যা করা, প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করা ইত্যাদি নিয়ে কেনিয়ার গ্রামীণ মহিলাদের তাঁর সংস্থা ট্রেনিং দেয়। ১৯৭০ সালে এই সংস্থা তৈরি হয়। শুধু সংস্থা তৈরি করে তিনি থেমে থাকেন নি। তিনিও সমান তালে গ্রামীণ মহিলাদের সঙ্গে গাছ লাগিয়েছেন। উচ্চশিক্ষিত ওয়াঙ্গেরে মাথাই কিন্তু গ্রামীণ মহিলাদের সঙ্গে মিলে মাটিতে হাঁটু গেড়ে বসে গাছ লাগাতে বিন্দুমাত্র দ্বিধা বোধ করেন নি।
তাঁর এই কর্মকাণ্ডে শত শত অশিক্ষিত গ্রামীণ মহিলারা গাছ ও গাছের রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে শিক্ষিত হয়ে উঠছিল। উপরমহলের রাজনীতিবিদরা সব জায়গায় ক্ষমতার বল প্রয়োগ করে, কিন্তু তিনি থেমে থাকেন নি। যে মাটির মেয়ে তিনি সেই মাটিতেই গাছ লাগিয়ে প্রকৃতিকে আরও সুজলাং সফলাং করেছেন তিনি।
তিনি বলেছেন – শিক্ষা কখনও মানুষকে মাটির কাছ থেকে আলাদা করতে পারে না। গ্রামীণ দরিদ্র অশিক্ষিত মহিলাদের শিখিয়েছেন গাছ কি করে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দিতে পারে। একটা গাছ লাগাতে হলে কখনই বই পড়ে শিক্ষা নিতে হয় না বা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রিও লাগে না।
গাছের সঙ্গে মানুষের অস্ত্বিতের ভবিষ্যৎ জড়িয়ে আছে, তাই এখনও সময় আছে, এখনও অনেক গাছ লাগানো বাকি আছে এই পৃথিবীর বুকে। উন্নত দেশ পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে অনেক এগিয়ে গেছে। তবে পরিবেশ সংরক্ষণের কাজে সবাইকে এক সঙ্গে চলতে হবে, না হলে তাঁর ফল ভুগবে অন্যরা। এই প্রসঙ্গে ছেলেবেলার এক শিক্ষকের কথা মনে পড়ে গেল, তিনি বলতেন – জীবনে যদি কিছুই না করতে পার একটা গাছ লাগিয়ে যেও।