June 2012, Seville, Spain
‘সেভিলা (Seville)’ স্পেনের এক শহর, আরও পাঁচটা প্রগতিশীল শহরের মতোই বড় বড় বাড়ি গাড়ির ভিড় কিন্তু তার মাঝেই আছে শান্ত নির্জন ‘প্লেস দে এস্পানা’। অদ্ভুত সুন্দর এক স্থাপত্যের নিদর্শন এই প্লেস দে এস্পানা, তৈরি হয়েছিল ১৯২৮ সালে, বিশ্ব মেলার প্রদর্শনী উপলক্ষে, এই স্থাপত্য স্পেনের নিও-রেনেসাঁস স্থাপত্যের এক উদাহরণ। স্পেনের অনেক দ্রষ্টব্য স্থানের মধ্যে অন্যতম।
সামনে পৌঁছে মনে হল ইতিহাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছি, সামনে প্রচুর ঘোড়ার গাড়ি দাঁড়িয়ে সওয়ারির অপেক্ষায়, মাঝে মাঝে ঘোড়ার গাড়ির চালকেরা টুরিস্টদের দিকে তাকিয়ে ‘অলা’ বলছে, অলা মানে স্প্যানিশ ভাষায় হ্যালো। অনেকেই চড়ে বসেছে ঘোড়ার গাড়িতে।
সন্ধ্যা নামছে, প্লেস দে এস্পানা প্রায় ফাঁকা টুরিস্টদের সংখ্যা কমে এসেছে, আমরা দেখছি প্লেস দে এস্পানার পটভূমিকায় সূর্যাস্তের রঙ, সূর্যের শেষ বেলাকার লাল হলুদ গোলাপি আলো এই লাল রঙের প্লেস দে এস্পানা আর তার চূড়াকে এক অদ্ভুত মায়াবী অপার্থিব করে তুলেছে, যে কয়েকজন টুরিস্ট আছে তাদের ক্যামেরা ঝলসে উঠছে।
এই অপার্থিবতার নিদর্শন Star war সিনেমায় দেখা গেছে, এখানে সেই কাল্পনিক গ্রহ নাবোর এক শহর Theed এর দৃশ্য নেওয়া হয়েছিল। তাছাড়া প্লেস দে এস্পানা অন্য অনেক চলচিত্রের দৃশ্যপট হিসাবেও দেখা গেছে।
ঘোড়ার খুরের টগবগে আওয়াজ, গলার ঘণ্টির টিংটিং আওয়াজ আর সামনের এই অপার্থিব প্লেস দে এস্পানা, সন্ধ্যা নামার শান্ত মুহূর্ত আমাদের এক স্বপ্ন রাজ্যে নিয়ে গেছে। মনে হচ্ছে আমরা যেন সময়ের রাস্তা ধরে পিছিয়ে গিয়েছি বহু যুগ।
জীবনের খুব কম সন্ধ্যাই মানুষের মনে থাকে, ব্যস্ত কাজের জীবনে কতদিন ধীর পায়ে সন্ধ্যা নামা দেখিনি , কতদিন দেখিনি সন্ধ্যার আকাশে রঙের মাতামাতি, শুনিনি পাখির ঘরে ফেরার ডাক, শুনিনি তাদের ডানার ঝাপটায় বাতাস কাটার হালকা শব্দ। আজ এখানের এই সন্ধ্যা জীবনের এক স্মরণীয় সন্ধ্যা হয়ে থাকবে। কি অদ্ভুত এই জায়গার মায়াবী আবেদন।
প্লেস দে এস্পানার ঠিক উলটো দিকে মারিয়া লুসিয়া পার্ক এখানে প্রচুর পুরনো গাছ গাছড়ায় প্রচুর পাখির বাস, সন্ধ্যা নামার মুহূর্ত তাই এখানে পাখিদের ঘরে ফেরার কলকাকলিতে পূর্ণ।
ধিরে ধিরে অন্ধকার নামলে একে একে রাস্তার আলো জ্বলে উঠল, আর এক অদ্ভুত নির্জনতা ঘিরে ধরল এই জায়গাটাকে। আমাদেরও হোটেলে ফিরে আসার সময় হল, জীবনের স্মৃতির পটে এই সন্ধ্যার ছবি আঁকা থাকবে চিরকাল। কাল আবার আমাদের গ্রানাডা যেতে হলে আলহাব্রা দেখতে। ছোট জায়গার আবেদনে মন বাঁধা পড়ে যায় এই গৃহী মানুষদের, ছেড়ে যেতে বুকে চিনচিনে ব্যাথা হয়।