
দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর – কবি বলেছিলেন। কিন্তু, কেউই কথা রাখে নি – নগর আরও বিস্তার হয়েছে – আরও বায়ু বিষিয়েছে – আকাশ আরও ধোয়াছন্ন হয়েছে – নগরের বিষাক্ত বায়ুতে মানুষের আরও দমবন্ধ হয়েছে – শ্বাস কষ্ট হয়েছে – তবুও নগর, শহর বিস্তার করেছে – উপায় তো নেই – শহরকে তো আরও বিস্তারিত হতেই হবে – উন্নয়ন তো করতেই হবে – সভ্যতাকে তো আরও এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে – সভ্যতার উন্নতির জন্যে মূল্য তো দিতেই হবে – সে মানুষ হোক বা পশু পাখি বা অরণ্য কাউকে না কাউকে তো মূল্য দিতেই হবে।
কিন্তু কেউ কেউ থাকে হাল ছাড়তে রাজী নয় – অরণ্য কেটে নগর বিস্তার হোক ক্ষতি নেই – তিনি ভাবলেন তবে নগরেই অরন্যের স্থান হোক – আরবান জঙ্গল – পকেট ফরেস্টই তৈরি করে দেওয়া যাক। এক বিশেষ পদ্ধতিতে শহরের এক ছোট জায়গার মধ্যেই, অল্প সময়ের মধ্যেই ছোট অরণ্য তৈরি করা যেতে পারে। এই বিশেষ পদ্ধতিটির নাম – Miyawaki method ।
জাপানের বোটানিস্ট Akira Miyawaki এই বিশেষ পদ্ধতিটির উদ্ভাবন করেছিলেন। জঙ্গলে যখন গাছ থাকে, খুবই কাছাকাছি অনেক গাছ বেড়ে উঠে – যেহেতু সব গাছের আলোর প্রয়োজন, খুবই দ্রুত সেই গাছ গুলো বেড়ে ওঠে – ঠিক সেই থিয়োরিকেই কাজে লাগিয়ে Miyawaki method এ গাছ লাগানো হয়।
এই পকেট জঙ্গল তৈরির উদ্দেশ্য যতটা শহরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, তার চেয়েও বেশি গাছের ঘন জঙ্গল দ্রুত শহরের কার্বনডাইঅক্সাইড শোষণ করে নিতে পারে, এবং পরিবেশ দূষণ কমিয়ে দিতে পারে। এই পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য স্থানীয় ইকোসিস্টেম বজায় রাখা।
গাছ লাগানোর আগে মাটিকে ভালো করে তৈরি করে নেওয়া হয় – প্রথমে গর্ত করে পর্যাপ্ত পরিমানে কাঠের গুড়ো, জৈব সার ইত্যাদি দিয়ে মাটি তৈরি করে নেওয়া হয়। তারপর সেই জায়গার স্থানীয় জঙ্গলের গাছ গুলোকে শনাক্ত করে খুবই কাছাকাছি রোপণ করা হয়। প্রথমের দিকে গাছগুলোর একটু যত্ন চাই – কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই এই গাছগুলো এক ছোটখাটো স্বয়ং সম্পূর্ণ জঙ্গলে পরিণত হয় – পকেট জঙ্গল, বা মিয়াওকি জঙ্গল।
শহরের ভেতরে এই মিয়াওকি পদ্ধতিতে তৈরি জঙ্গল পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেক কমিয়ে দিতে পারে। তাই পৃথিবীর অনেক বড় শহর এই পদ্ধতিতে ছোট ছোট পকেট জঙ্গল তৈরি করে পরিবেশের কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমাণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করে চলেছে। আর তারই নানান নমুনা একতানগরের এই গার্ডেনে দেখা যায়। এই গার্ডেনে ফল গাছ থেকে শুরু করে স্থানীয় গাছের মিয়াওকি জঙ্গল দেখা যায়।
রুক্ষ শুষ্ক খালি এক জমিকে কি ভাবে সবুজের চাদরে বিছিয়ে দেওয়া যায় তার নিদর্শন এই মিয়াওকি গার্ডেনে দেখা যায়।