সব ঠিক হয়ে যাবে

বর্তমান সময়টা বড়ই অদ্ভুত। এক ভীষণ বিষণ্ণ একাকী সময়ের মধ্য দিয়ে চলছি আমরা – গোটা পৃথিবী। সবই কেমন যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে। এই সময়ে – সব ঠিক হয়ে যাবে – কথাটি যেন বহু দূরের এক ক্ষীণ আওয়াজের মতো শোণায়।

ঠিক হবে, সব আগের মতো হয়ে যাবে – যেখানে পৃথিবীকে শেষ দেখে ছিলাম, ঠিক সেখানে পৃথিবীকে ফিরে পাবো তো? মানুষ গুলোকে ফিরে পাবো? আর বিশ্বাস? সমস্ত প্রশ্ন ভিড় করে আসে। কখন সব টিক হবে। কেউ জানে না।

না, প্রথমে কেউই বিশ্বাস করে উঠতে পারে নি। পৃথিবীর একের পর এক ব্যস্ততম রাজধানী শহর, অন্যান্য শহর গুলো সব জনশূন্য হয়ে যাবে। রাস্তা খালি, এয়ারপোর্ট, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, পার্ক,  সব, সব খালি হয়ে যাবে, সবাই গৃহবন্দী হয়ে যাবে – কেউই ভাবতে পারে নি। ভাবার কথাও তো নয়। কারন শুনেই মনে হয়েছিল – এ হতেই পারে না। এ যে Contagion সিনেমার প্লট বলে মনে  হচ্ছে, কিন্তু, সত্য অনেক সময়েই গল্পের চেয়েও ভয়াবহ হয়ে যেতে পারে। তা যে আমরা  বর্তমানে প্রতিদিন দেখছি।

প্রথম যখন চীনের উহান শহরের খবর শুনছিলাম – এক বারের জন্যেও ভাবতে পারি নি, এই অদৃশ্য শত্রু আমাদের জীবন যাপনের অতি সাধারণ স্বাধীনতার শ্বাস রুদ্ধ করতে নিঃশব্দে এগিয়ে আসছে।

তারপর যখন শুনি ইতালির শহর গুলোকে ঐ ভাইরাস আক্রমণ করে ওদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে, ওদের গৃহ বন্দী করে দিয়েছে। জন শূন্য ভেনিস, রোমের ছবি দেখে শিউরে উঠেছিলাম। মনে এক আশংকা দেখা দিয়েছিল – এক শান্ত অদৃশ্য ভয়ানক সুনামি আরও বড় হয়ে উঠছে না তো।

তারপর থেকে মাত্র এক দুই মাসের মধ্যেই তো একের পর এক দেশের লক ডাউন ঘোষণা। প্রতিদিনের খবরে এক নতুন সংখ্যা – যা মানুষকে আর বিষণ্ণ, আরও আশঙ্কিত করে তুলছে।

এখনও তো পৃথিবীর অনেক প্রান্তের মানুষের কাছে দৈনন্দিন জীবন যাপনই এক সংঘর্ষ, পৃথিবীর অনেক প্রান্তে এখনও তো যুদ্ধ  চলছে, এখনও তো পৃথিবীর অনেক প্রান্তের মানুষ ঘর ছাড়া – ছিন্নমূল।

এখনও পৃথিবীর অনেক প্রান্তের মানুষের কাছে অনেক নিজস্ব সমস্যা আছে – অনেক মানুষের কাছে এক দিন কাজে না যাওয়া মানে অনাহারে থাকা। অনেক মানুষ নিজের গ্রাম ছেড়ে শহরে গিয়েছিল আধুনিক সভ্যতার হাল ধরতে, সভ্যতার চাকা ঘোরাতে, এক মুঠো স্বপ্নের খোঁজে  – শহর বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেই হাজার হাজার মানুষ তাদের নিজের গ্রামে ফিরে যাওয়ার জন্যে কয়েকশো কিলোমিটার পথ হাঁটতেও দ্বিধা করে না – করোনা ভাইরাসের চেয়েও অনাহার তাদের বর্তমান সমস্যা।

আর এই সমস্যাই আরও বেশি ভয়াবহ। যা কিনা সমস্ত পৃথিবীকে আরও আরও বেশি ভাবিয়ে তুলছে। যেখানে হার্ড ইমিউনিটির কথা বলা হচ্ছে সেখানে অনাহারে থেকে একটা রোগের বিরুদ্ধে কতক্ষণ যুদ্ধ করা যায়? তাই হয়তো পৃথিবীর গ্লোবাল জি ডি পির দশ শতাংশ শুধু করোনা ভাইরাসের ক্ষয় ক্ষতি পুরন করতে খরচ করা হবে। খাদ্য সংকট দূর করার জন্যে, ব্যবসাকে পুনরুদ্ধার করার জন্যে ব্যবহার করা হবে।

হয়তো, এই ভাইরাস অর্থনৈতিক ভাবে পৃথিবীর এক একটা দেশকে প্রায় পঞ্চাশ বছর পিছনে ঠেলে দেবে, কিন্তু মানসিকতার দিক দিয়ে মানুষকে হয়তো বা প্রায় একশো বছর পেছনে ঠেলে দেবে। হয়তো বা বর্ণবিদ্বেষের এক নতুন রূপ দেখবে পৃথিবী। হয়তো বা এই ভাইরাস মানুষের উদার মানসিকতাকে সংকুচিত করে দেবে। আমরা নিজের চোখের সামনে দেখলাম বিশ্বায়ন কি ভাবে গোটা পৃথিবীকে এক করে দিল, আবার এক ভাইরাস কি ভাবে সমস্ত পৃথিবীর দেশ গুলোকে, তার মানুষ গুলোকে একাকী, নিঃসঙ্গ করে তুলল। বিশ্বায়নের সেই মহান উদ্দেশ্যটি হয়তো হারিয়ে যাবে।

কিন্তু, তার আগে এখন সমস্যা যে সবার – সমাধানও যে সবাইকে এক সঙ্গে করতে হবে। তার নমুনা যথারীতি দেখছি – hydroxychloroquine (HCQ) , ম্যালেরিয়ার ঔষধ, যা কিনা করোনা ভাইরাসের ট্রিটমেন্টের জন্যে সম্ভ্যাব্য এক ঔষধ বলে এক গবেষণায় জানা গেছে, আমেরিকাকে সেই hydroxychloroquine (HCQ)  পাঠাতে আমাদের দেশ বিন্দুমাত্র সময় নষ্ট করে নি। শুধু আমেরিকা নয় , আফ্রিকার অনেক দেশ,  লাতিন আমেরিকার দেশ গুলোতেও মানবতার জন্যে এই ঔষধ পাঠানো হয়েছে।

শুধু তাই নয় – অনেক প্রতিবেশী দেশের জন্যেও আমাদের দেশ HCQ পাঠাতে শুরু করে দিয়েছে। আর আমাদের দেশের এই পদক্ষেপে ব্রিটেন, ব্রাজিল, ইজরায়েল সহ অন্য অনেক দেশ প্রশংসাও করেছে। এই সময়ে ভারতবর্ষকে ‘the pharmacy of the world’ বলা যায় ।

তাছাড়া, আমাদের দেশ আমেরিকার সঙ্গে মিলে এই ভাইরাসের ভ্যক্সিন আবিষ্কারের কাজে নেমে পড়েছে। গোটা পৃথিবী এক সঙ্গে এই অদৃশ্য শত্রুর মোকাবিলা করার কাজে নেমে পড়েছে।

তাই এই সময়ে, যতই আমরা ‘সোশ্যাল ডিস্টেন্সিং’ প্র্যাকটিস করি না কেন, এই সময়ে দেখেছি কি ভাবে মানুষ মানুষকে সাহায্যের জন্যে মন এগিয়ে দিয়েছে। রাস্তায় নেমে খাবার বিতরণ করাই হোক, মাস্ক বিতরণ করাই হোক বা অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করাই হোক – সবাই এক সঙ্গে এই যুদ্ধে লড়ছে।

শুধু একটু ধৈর্য ধরে, যা যা দরকারি পদক্ষেপ নিতে হয়, তা নিতে হবে। যা গাইড লাইন বলা হয়েছে মেনে চলতে হবে। তাই বলি – একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।

অজানা's avatar

About abakprithibi

I see skies of blue and clouds of white, The bright blessed day, the dark sacred night And I think to myself what a wonderful world...........
This entry was posted in Uncategorized and tagged , , . Bookmark the permalink.

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান